ক্ষণজন্মা এক বিপ্লবীর নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য্য

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:২৫

সাহস ডেস্ক

বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। ১৯২৬ সালের ১৬ অগাস্ট বাংলা সাহিত্যের ক্ষণজন্মা এই প্রতিভা কলকাতার ৪৩, মহিম হালদার স্ট্রীটে তার নানার বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার(বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার উনশিয়া গ্রামে)।

তার বাবার নাম নিবারন ভট্টাচার্য আর মা সুনীতি দেবী। ১৯৪৫ সালে সুকান্ত প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু তার আগেই তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে যান। ফলে প্রবেশিকা পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হন। সুকান্তের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অবসান হয় সেখানেই।

সুকান্তের সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে তার ছোটবেলা থেকেই। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুল কমলা বিদ্যামন্দিরে পড়ার সময় সেখানকার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্ররা মিলে একটি হাতে লিখা পত্রিকা বের করে। সুকান্ত এই পত্রিকার নাম দেন “সঞ্চয়” , এতে তিনি নিজেও একটি হাসির গল্প লিখেন। সেই ছেলেবেলাতেই সুকান্ত অভিনয়েও পারদর্শীতা দেখান। স্কুলের নাটক “ধ্রুব”তে তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

সুকান্তর প্রথম মুদ্রিত লেখা প্রকাশিত হয় বিজন কুমার গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘শিখা’ পত্রিকায়- বিবেকানন্দের জীবনী। ১৯৪১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা যান। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সুকান্ত রেডিওতে গল্পদাদুর আসর নামে এক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করে প্রশংসা লাভ করেন সবার। আগে থেকেই সাম্যবাদে বিশ্বাসী সুকান্ত ১৯৪২ সালে যোগ দেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে। বিশ্ব জুড়ে তখন ২য় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে। এদিকে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে একদিকে ছড়িয়ে পড়েছে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, আরেকদিকে তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ। সুকান্ত এসব কিছুকেই করে তোলেন তার কবিতার উপজীব্য।

তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ নিয়ে কবি লিখেছেন “আকাল” শিরোনামে কবিতা সংকলন। গোলাম কুদ্দুস সম্পাদিত ‘একসূত্রে’ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সুকান্তের ‘জনযুদ্ধের গান’।

স্বাধীনতা অর্জনের ঠিক প্রাক্কালে পুরো উপমহাদেশ জুড়ে যখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছিল , ঠিক সেই সময় সুকান্ত তার কবিতায় লিখে গিয়েছেন জীবনের জয়গান আর অন্যায় – বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বাণী। ১৯৪৪ সালে সুকান্ত ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন।

মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। সুকান্তের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হলো: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয়। সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পীসঙ্ঘের পক্ষে আকাল (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। এছাড়াও তিনি কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন।

পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য যক্ষারোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতায় যাদবপুর টি বি হাসপাতাল মৃত্যুবরণ করেন। কবির বয়স তখন মাত্র ২১।

কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভাতুষ্পুত্র।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত