মহানায়ক উত্তমকুমার

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:২৬

সাহস ডেস্ক

বাংলা ছবির মহানায়ক উত্তমকুমার। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা। নিজের অভিনয়, মেধা ও যোগ্যতাবলে নিজেকে অন্যরকম এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। জনপ্রিয়তায় বাঙালির ঘরে ঘরে উত্তমকুমার ছিলেন পছন্দ আর আবেগের আরেকনাম।

আজ এই মহানায়কের জন্মদিন। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

বাঙালিদের চলচ্চিত্রে নিখাদ বিনোদন দিতে তিনি ছিলেন অনবদ্য। তিনি একাধারে অভিনেতা, চিত্রপ্রযোজক ও পরিচালক। চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি মঞ্চেও ছিলেন সরব। বাঙলা চলচ্চিত্র জগতে তাকে ‘মহানায়ক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। 

উত্তম কুমারের প্রকৃত নাম অরুণ কুমার চ্যাটার্জী। সিনেমায় এসে তার নাম পরিবর্তিত হয়ে উত্তম কুমার হয়। উত্তম কুমার কলকাতার সাউথ সাবারবান স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং পরে গোয়েন্কা কলেজে ভর্তি হন। কলকাতার পোর্টে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে।

উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল দৃষ্টিদান। এই ছবির পরিচালক ছিলেন নিতীন বসু। এর আগে উত্তম কুমার ‘মায়াডোর’ নামে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন কিন্তু সেটি মুক্তি পায়নি। বসু পরিবার চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম দৃষ্টি আকর্ষন করেন। এরপর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তি পাবার পরে তিনি চলচ্চিত্র জগতে স্থায়ী আসন লাভ করেন। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে তিনি প্রথম অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করেন। এই ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল উত্তম-সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয়।

উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অনেকগুলি ব্যবসা সফল এবং প্রশংসিত চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- হারানো সুর, পথে হল দেরী, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, জীবন তৃষ্ণা এবং সাগরিকা।

উত্তম কুমার বহু সফল বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে - ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’ এবং ‘আনন্দ আশ্রম’ অন্যতম।

তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথমটি ‘নায়ক’ এবং দ্বিতীয়টি ‘চিড়িয়াখানা’। ‘চিড়িয়াখানা’ চলচ্চিত্রে তিনি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

সঙ্গীতের প্রতিও ছিল তার অসীম ভালবাসা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কিংবা মান্না দে'র গানেই সবচেয়ে বেশি ঠোঁট মিলিয়েছেন উত্তমকুমার। ছবির গান রেকর্ডিংয়ের সময় শিল্পীর পাশে বসে তার অনুভূতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করতেন। এতে করে না কি পর্দায় ঠোঁট মেলাতে তার বেশ সহজ হতো।

সঙ্গীতপ্রেমী উত্তম ‘কাল তুমি আলেয়া’ ছবির সবগুলো গানের সুরারোপ করেন। ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। অভিনেতা প্রযোজক, পরিচালক, সব মাধ্যমেই তিনি ছিলেন সফল।

উত্তম কুমার অভিনীত, পরিচালিত, প্রযোজিত এবং সুরারোপিত চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে-দৃষ্টিদান (১৯৪৮), কামনা (১৯৪৯), মর্যাদা (১৯৫০), সহযাত্রী (১৯৫১), ওরে যাত্রী (১৯৫১), নষ্টনীড় (১৯৫১), সঞ্জীবনী (১৯৫২), বসু পরিবার (১৯৫২), কার পাপে (১৯৫২), সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩), নবীন যাত্রা (১৯৫৩), লাখ টাকা (১৯৫৩), বৌ ঠাকুরানীর হাট (১৯৫৩), সদানন্দের মেলা (১৯৫৪), ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), মনের ময়ূর (১৯৫৪), মরণের পারে (১৯৫৪), মন্ত্র শক্তি (১৯৫৪), কল্যাণী (১৯৫৪), গৃহপ্রবেশ (১৯৫৪), চাঁপাডাঙার বউ(১৯৫৪), ব্রতচারিনী (১৯৫৪), বকুল (১৯৫৪), বিধিলিপি (১৯৫৪), অনুপমা (১৯৫৪), অন্নপূর্ণার মন্দির (১৯৫৪), অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), সাঁঝের প্রদীপ (১৯৫৫), উপহার (১৯৫৫), শাপ মোচন (১৯৫৫), হ্রদ (১৯৫৫), সবার উপরে (১৯৫৫), কঙ্কাবতীর ঘাট (১৯৫৫), রাইকমল (১৯৫৫), দেবত্র (১৯৫৫)।

অসাধারণ অভিনয়ের জন্য একাধিকবার সেরা নায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া পেয়েছেন দেশ-বিদেশের অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। 

ব্যক্তিগত জীবনে গৌরী চ্যাটার্জিকে বিয়ে করেছিলেন মহানায়ক উত্তম। ১৯৬৩ সালে উত্তমকুমার তার পরিবার ছেড়ে চলে যান। দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বসবাস করেন। উত্তমকুমার তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গেই ছিলেন। গৌতম চ্যাটার্জি নামে তার এক ছেলে রয়েছে। 

উত্তম কুমার ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যান এই মহানায়ক।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত