স্মরণে সালমান শাহ

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:২১

সাহস ডেস্ক

আজ ৬ সেপ্টেম্বর, চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি চলচ্চিত্রে আসার পরে বাংলা সিনেমায় এক বিপুল পরিবর্তন ঘটেছিল। আবার তিনি চলে যাবার পরেও পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু সে পরিবর্তন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধ্বংসাত্মক। তার  মৃত্যুর পর বাংলা সিনেমায় নেমে এসেছিল অন্ধকারের কালো ছায়া। সালমান খুব কম সময়ের জন্য সিনেমা জগতে ছিলেন কিন্তু  তিনি ঢালিউডে তার একটি স্থায়ী আধিপত্য বিস্তার করতে সফল হয়েছিলেন। তাইতো তার ভক্তরা আজও তাকে সম্মান আর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে স্মরণ করেন। 

সালমান শাহ, বাংলাদেশের ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক ছিলেন। তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সালে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই অভিনেতা সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্র অভিনয় করেন। এছাড়াও টেলিভিশনে তার অভিনীত গুটি কয়েক নাটক প্রচারিত হয়

১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অতঃপর তিনি ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অকালে মৃত্যুবরণ করেন। 

অভিযোগ উঠে যে, তাকে হত্যা করা হয়, কিন্তু তার সিলিং ফ্যানে ফাঁসিতে হত্যাকাণ্ডের কোনো আইনী সুরাহা শেষ পর্যন্ত হয়নি। আজও তার ভক্তরা আশা করে আছেন যে তার মৃত্যুর রহস্য একদিন না একদিন ভেদ হবে।

জীবনী
সালমান শাহ ১৯৭১ সালে সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মূল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে 'সালমান শাহ' বলেই পরিচিত ছিলেন। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।

শিক্ষাজীবন
সালমান শাহ খুলনা বয়রা মডেল হাইস্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ঢাকায় চলে আসেন।ঢাকায় এসে ধানমন্ডির আরব মিশন স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৮৭ সালে ধানিমন্ডির আরব মিশন স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং মালেকা সায়েন্স কলেজ, ধানমন্ডি থেকে স্নাতক শেষ করেন।

অভিনয় জীবন
ম্যাজিষ্ট্রেট নাহিদ হাসান (সজীব) হাত ধরেই তিনি অভিনয় জগতে আসেন। কিন্তু পরবর্তী জীবনে নাহিদ হাসান (সজীব) এর সাথে তার সম্পর্ক ভাল ছিল না বলেই জানা যায়।

মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
সালমান শাহের প্রথম সিনেমা ছিল 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত'। যেটা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা ব্যবসা সফল সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি যে ছবিই হাতে নিয়েছেন তাতেই সফলতা পেয়েছেন। তার কোন ছবিই ফ্লপ হয়নি। তার বেশিরভাগ সিনেমাতে তিনি শাবনুরের সাথে জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন। তাদের অনস্ক্রিন ক্যামেস্ট্রি দেখে অনেকেই ধারণা করতে শুরু করেছিলেন যে তারা পরস্পর ভালবাসার সম্পর্কে যুক্ত। তার করা সিনেমারগুলো হল অন্তরে অন্তরে, তোমাকে চাই, বিক্ষোভ, বিচার হবে, চাওয়া থেকে পাওয়া, আনন্দ অশ্রু, আশা ভালবাসা, জীবন সংসার, মহা মিলন, স্বপ্নের পৃথিবী, স্বপ্নের ঠিকানা, এই ঘর এই সংসার, আঞ্জুমান, কন্ন্যাদান, মায়ের অধিকার, প্রেম যুদ্ধ, স্নেহ, সত্যের মৃত্যু নাই, সুজন সখী, তুমি আমার, প্রিয়জন, স্বপ্নের নায়ক, বুকের ভিতর আগুন, প্রেম পিয়াসী ইত্যাদি। 

টিভি নাটক
তিনি সিনেমার পাশাপাশি কিছু সংখ্যক নাটকেও কাজ করেছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য নাটক গুলো হল-
১। পাথর সময়
২। ইতিকথা
৩। আকাশ ছোঁয়া
৪। দোয়েল
৫। সব পাখি ঘরে ফেরে
৬। সৈকতে সারস
৭। নয়ন
৮। স্বপ্নের পৃথিবী

মৃত্যুকাল
৯০ দশকের আলোচিত এই নায়ক  ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন। ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ ফ্ল্যাটে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো তার লাশ। বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করলেও সালমান শাহ’র ভক্তরা সেটা মেনে নেননি। বিভিন্ন সময় অনেকেই দাবী করেছেন সালমান শাহকে খুন করা হয়েছে। এর উত্তর কি জানা হবে কোনদিন? ছিঁড়বে কি প্রিয় নায়কের মৃত্যু রহস্যের জাল? জানা যাবে কি? কেন অল্প বয়সেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন সবার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ? নাকী রহস্যাবৃতই থেকে যাবে ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আলোচিত এই মৃত্যু?

যাই হোক না কেন তার হাসি মাখা মুখ বাংলার মানুষদের কাছে সর্বদাই প্রিয় থাকবে। তার স্মৃতি কোন ভাবেই মন থেকে মুছে ফেলার নয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত