কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:৫২

 

আজ প্রিয় মানুষ কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা'র জন্মদিন ৷ ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত বাঙালি জাতিসত্তার কবি হিসেবে স্বীকৃত দরিয়ানগরের ভূমিপুত্র কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার খ্যাতি ও পরিচিতি আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুবিস্তৃত। কবি কথাসাহিত্যিক, মননশীল লেখক, অনুবাদক, গবেষক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ইত্যকার নানা পরিচয়ে তিনি আজ আমাদের এক রেঁনেসা পুরুষ। তাঁর জীবন ও সৃষ্টি বৈচিত্র্যে ভরপুর। বিভিন্ন নান্দনিক পরিচয়ের মাঝেও তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। পাশাপাশি তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের চেয়ারম্যান ও ডিন হিসেবে কর্মরত।

কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ১৯৪৯ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা- মরহুম হাজী মোহাম্মদ সেকান্দর সওদাগর। মাতা- আঞ্জুমান আরা বেগম। গ্রামের বাড়ীতে মৌলভীর কাছেই পড়া লেখার হাতে খড়ি। একই সাথে গ্রাম্য মক্তবের পরিবর্তে বাড়িতে প্রতিবেশী দূরসম্পর্কের এক ঠাকুরমার কাছে কুরআন শরীফের প্রথম পাঠ আমপারা পড়তে শুরু করেন। বাড়ি থেকে প্রায় একমাইল দূরের পূর্ব পোকখালী প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হন ১৯৫৪ সালে। ক্লাসের প্রথম স্থান তিনি বরাবরই দখলে রাখতেন। তিনি ১৯৫৯ সালে পূর্ব পোকখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে মেধা-বৃত্তি লাভ করেন। 

৫ম শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে ১৯৫৯ সালে ঈদগাঁও হাইস্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ঈদগাঁও হাইস্কুল তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে অবস্থিত। বাড়ি থেকে কাদা মাড়িয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ঈদগাঁও হাইস্কুলে আসা-যাওয়া করতে হতো। তিনি বরাবরই ভাল ও মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পড়া লেখার পাশাপাশি তিনি ভাল ফুটবলারও ছিলেন। দীর্ঘদেহী মুহম্মদ নূরুল হুদার ডাক পড়তো ভলিবল খেলার কোর্টেও। স্কুলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে নিয়মিত পুরস্কার ঘরে তুলতেন তিনি।

কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের অবস্থান মহেশখালী চ্যানেলের কিনারা ঘেঁষে৷ পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে মহেশখালী চ্যানেল। পূর্ব পার্শ্বে ঈদগাঁও নদী (খাল), উত্তরে ফুলেশ্বরী ও মেধা খাল। ঈদগাঁও খালের পলিবাহিত এলাকা পোকখালী। বর্তমানে পোকখালী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে কোন ধরনের যানবাহন নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু ১৯৬০ সালের দিকে তা ছিলো কল্পনাতীত। পায়ে হাটা বা নৌকাই ছিলো এলাকাবাসীর একমাত্র বাহন। হাঁটু কাদার সড়ক, গ্রামীন সরু আইল বা নৌকা করেই এলাকাবাসীকে ঈদগাঁও সদরে আসা-যাওয়া করতে হতো। বিদ্যুতের বিষয়টি ছিল অলীক স্বপ্ন। এ পরিবেশে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার শৈশব-কৈশোর কাটে পোকখালীতে। 

হুদা’র পিতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ সেকান্দর ঈদগাঁও এলাকায় সেকান্দর সওদাগর নামে সমধিক পরিচিত। যারা ব্যবসা বাণিজ্য করে তারা সওদাগর নামে খ্যাত। ঈদগাঁও বাজারে সেকান্দর সওদাগরের ছিল মনোহারী পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, লবণের ব্যবসা। কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা’র শৈশব ও কৈশোরের সাথী ছিল পোকখালী গ্রামের নান্দনিক পরিবেশ। গ্রামের চারদিকে ছিল লবণ পানিতে সয়লাব। কবির শৈশব কালেও পোকখালীতে ব্যাপক ভাবে সূর্যের তাপের (মোটা দানা) লবণ উৎপাদন শুরু হয় নি। লবণ পানি আগুনে ফুটিয়ে কিছু কিছু সরু লবণ উৎপাদন করা হতো। কিন্তু কবির বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্থানীয় লবণ উৎপাদনেও আসে পরিবর্তন। সূর্যের তাপে মোটা দানা লবণ উৎপাদন শুরু হয়। 

মহেশখালী চ্যানেলসহ কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার বাড়ীর চতুর্পাশে যেসব নদ-নদী ছিল সেখানে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন রাত দিন মাছ ধরত। এ ছাড়াও স্থানীয় জনসাধারণ নিজেদের প্রয়োজনে ঝাকি জাল (হাত জাল) দিয়ে হরেক রকম মাছ ধরত। রাখাল বালকেরা উপকূলের প্যারাবনে মহিষ চড়াতো। মহিষের পাল উন্মুক্ত প্যারাবনে মাঝে মাঝে বুনো হয়ে উঠত। উপকূলের প্যারাবনে পানকৌড়ি, সারস, গাঙচিল, ডাহুক, টিয়া, চিল, শকুন, হারিকুরী (হাড়িচাচা), কোয়েল, চেগাসহ হরেক রকমের পাখির কলরব ছিল কবি’র অতি পরিচিত। প্রাকৃতিক এসব সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কবি বেড়ে উঠেছেন পোকখালীর শ্যামল ভূ-খণ্ডে। আজ শুধু পোকখালীই নয় কক্সবাজার জেলা সমেত সমগ্র বাংলাদেশই কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা’র রৌশনাইতে আলোকিত।

১৯৬৫ সালে জেলার বৃহত্তম বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁও হাইস্কুল থেকে এসএসসি (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় (কলা বিভাগে) কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে তৎকালীন মহকুমাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ঈদগাঁও হাইস্কুলের ন্যায় মফস্বলের পিছিয়ে থাকা একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা অতোটা সহজ ছিল না।
 
মুহম্মদ নূরুল হুদা যে কত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তা তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফল দেখেই অনুমান করা যায়। ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে তিনি ঈদগাঁও বাজারে গড়ে তুলেন একটি সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন। যা ‘উর্মিমালা সংসদ’ নামে খ্যাত। ১৯৬৫ সালে উর্মিমালা সংসদের মুখপত্র হিসেবে প্রকাশ করা হয় ‘কলতান, নামের সাহিত্য সংকলন। ‘কলতান’ সম্পদনা করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। কলতান’ই ছিলো কবি নূরুল হুদা’র সাহিত্য জীবনের সূচনা।

তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অনার্স ও পরের বছর মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়া জেলার তালশহর কলেজের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। পরীক্ষার পরেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং ঈদগাঁও, বদরখালী, নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়াতে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে থাকেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি রাজধানী ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। সোহরাওয়ার্দী কলেজে তিনি বেশিদিন অধ্যাপনা করেন নি। সোহরাওয়ার্দী কলেজে অধ্যাপনার সময়ে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শোণিতে সমুদ্রপাত’ (১৯৭২) প্রকাশিত হয়। শোণিতে সমুদ্রপাত-এর মাধ্যমে তিনি বোদ্ধাপাঠক ও সাহিত্যমোদিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

১৯৭৩ সালে মুহম্মদ নূরুল হুদা বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি একাডেমিতে একটানা বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমিতে একটানা বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের আগষ্ট মাসে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক পদে যোগদান করেন এবং ২০০২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ ১,৯৯৯ দিন পরে আবার বাংলা একাডেমিতে ফিরে আসেন। পরে তিনি বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি একজন অগ্রণী সাহিত্য-সংগঠক। তিনি ‘বাংলাদেশ রাইর্টাস ক্লাব’, ‘কবিতা বাংলা’সহ বহু সাহিত্য সংগঠনের সভাপতি।

বাংলা একাডেমিতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৮৫ সালে আমেরিকার হাওয়াইস্থ ইষ্ট-ওয়েষ্ট সেন্টারের সংস্কৃতি ও যোগাযোগ বিষয়ক ইনস্টিটিউটে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন এবং দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮৬ সালে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সাল থেকে এযাবৎ কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা লিখেছেন দু’হাতে। কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন গদ্য, করেছেন অনুবাদ, লিখেছেন চিকিৎসা শাস্ত্র (হোমিওপ্যাথিক) নিয়ে। বাংলাভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতেও লিখেছেন তিনি। কবি হুদা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের পাশাপাশি তিনি বিদেশ থেকেও পুরস্কার ও সম্মান এনেছেন নিজের জন্য, বাংলাদেশের জন্য, বাংলা সাহিত্যের জন্য। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর কবিতা ও উপন্যাসে সৃষ্টি করেছেন একটি পৃথক ধারা।

‘কলতান’ সম্পাদনা দিয়ে কবি’র সাহিত্য কর্মের আনুষ্ঠানিক আতপ্রকাশ। এরপর তিনি আর পেছনে তাকান নি। এগিয়েছেন সামনের দিকে, সমুদ্র, পাহাড় পর্বত ডিঙ্গিয়ে গেছেন। তাঁর চলার গতি এখনো অব্যাহত। তিনি চষে বেড়াচ্ছেন কবিতার উর্বর ভূমি।

দেশের কয়েকজন শীর্ষ কবি-সাহিত্যিকের দৃষ্টিতে জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার অবয়ব ফুটে উঠেছে বিভিন্ন ভাবে। অনেকেই অনেকভাবে দেখেছেন কবি হুদাকে। কবি হুদা সম্পর্কে কবি শামসুর রাহমানের মূল্যায়ন "গুরুত্বপূর্ণ কবি এবং ভাল কবি এক কথা নয়। আমি কবি মুহম্মদ নুরুল হুদাকে আমাদের দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি বলে মনে করি। ভাল কবি বেশ কয়েকজন হতে পারেন তবে গুরুত্বপূর্ণ কবি আমার বিবেচনায় কম এবং সেই বিরল কবিদেরই একজন মুহম্মদ নুরুল হুদা"।

কথাশিল্পী মমতাজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন "আমার আসার ১৫বছর পরে একজন কবি বাংলাদেশে এসেছে। আমার যাবার ১০০ বছর পরে সে কবি যাবে। ভুল বললাম। আমার হারিয়ে যাবার, আমি বিস্মিত হওয়ার হাজার বছর পরেও সে কবি বেঁচে থাকবে। মুহম্মদ নূরুল হুদার কথা বলছি। হুদাকে কবি ডাকি। শুধু শুধু ডাকিনা, তাকে কবি বলে মানি"। জনাব মমতাজ উদ্দিন আহমদ আরো বলেছেন, "মুহম্মদ নূরুল হুদা শব্দ শিকারী। কোথা থেকে না কোথা থেকে, শব্দকে খুঁজে আনে। বাছ-বিচার করেন। ইলিয়টে তার আনন্দ, সেক্সপীয়রে তার নেশা, বাল্মীকিতে সে অনুরাগী, হোমারে অভিভূত আর কোরানে সে আকণ্ঠ।"

বিশিষ্ট নজরুল গবেষক কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ বলেছেন “মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতার উতল তরঙ্গের পাশে গহন-উন্মুক্ত কিন্তু যুক্তিশীল, শিকড়িত কিন্তু মুক্তচিত্ত প্রবন্ধ-সমালোচনার একটি নির্জন নহর বয়ে চলেছে”।

শৈশবের সেই সুন্দর স্মৃতি, উদার প্রাকৃতিক পরিবেশ কবি হুদাকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে তাঁর শৈশব-কৈশোর কালে ফি-বছর গ্রীষ্মকালে কাঠ-ফাঁটা রোদে মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে সুর্যের তাপের সাহায্যে লবণ শ্রমিকদের লবন উৎপাদন করার অসাধারণ দৃশ্য। আবার ঈদগাঁও বাজারে সেই লবণ বিক্রি করার সময় দালালের দৌরাত্ব্য। মৈন পাহাড়ের দৃষ্টিনন্দন চুড়া দেখতে দেখতে স্কুলের পথে যাওয়া আসা। জেলে সম্প্রদায়ের হরেক রকমের জাল, বাহারী ঢংয়ের নৌকা দেখে দেখে ঘরে ফেরা, হুদার কবিসত্বাকে প্রভাবিত করেছে। বাঙালি জাতির শিকড় সন্ধানে মুহম্মদ নূরুল হুদার মননশীল আত্মনিয়োগ বাংলা সাহিত্যকে করেছে ঋদ্ধ। তিনি নিজেকে করে তুলেছেন হীরক দূ্যতির ন্যায় জ্বল জ্বলে ইতিহাসের অংশ। অবিশ্রান্ত তিনি এখনও লিখে চলেছেন নিজের আনন্দের জন্য, নিজের তৃপ্তির জন্য, আমাদের জন্য, আমাদের উত্তর পুরুষের জন্য। 

মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনর্গল ঋদ্ধ কথা দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ বানিয়ে রাখার কৌশলটি সম্পূর্ণ করায়ত্ব কবি নূরুল হুদার ৷ বাগদেবীর বরপূত্র তিনি, নিজেকে উজাড় করে নিবেদন করেছেন সাহিত্যের সেবায়। তিনি সমুদ্রকন্যা কক্সবাজারের নাম দিয়েছেন দরিয়ানগর ৷ দরিয়ানগর সমুদ্রসৈকতে মস্ত খোলা আকাশের নিচে বিপুলা সমুদ্রকে সামনে রেখে নির্মিত হয়েছে "হুদা কবিতা মঞ্চ"৷ এই দরিয়ানগরের মাটিতেই তিনি ফিরে আসতে চান চিরকালের জন্য। এই দরিয়ানগরেই তিনি বেছে নিয়েছেন পৃথিবীর প্রথম ‘কবিচূড়া’। জীবন, কবিতা ও মহাকালকে নিয়ে সেই ‘কবিচূড়া’-য় তিনি নির্মাণ করতে চান এক অনশ্বর নিবাস। ‘কবিচূড়া’ তাঁর এক দৃষ্টান্তরহিত স্বপ্ন, সর্বকালের শান্তিকামী মানুষের এক আবাসযোগ্য নন্দননিবাস।

মুহম্মদ নূরুল হুদা'র প্রাপ্ত পুরস্কারসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), যশোর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), আবুল হাসান কবিতা পুরস্কার (১৯৮৩), আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী সংবর্ধনা (১৯৮৬), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কক্সবাজার পদক (১৯৮৮), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৪, উপন্যাসের জন্য), যুক্তরাষ্ট্রের আইএসপি ঘোষিত পোয়েট অব ইন্টারন্যাশনাল মেরিট ও পোয়েট অব দ্য ইয়ার সম্মানে ভূষিত (১৯৯৫), কবি আহসান হাবিব কবিতা পুরস্কার (১৯৯৫), তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সুলেমান ডেমিরিল কর্তৃক বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত (১৯৯৭), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত নজরুল জন্মশতবর্ষ সম্মাননা (১৯৯৯), কলকাতাস্থ 'নজরুল ফাউন্ডেশন' কর্তৃক সম্মাননা (২০০০), জীবনানন্দ পুরস্কার (২০০১), কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (২০০১), সুকান্ত পুরস্কার (২০০৪), মহাদিগন্ত পুরস্কার (কলকাতা ২০০৭), চয়ন সাহিত্য পরস্কার (২০০৮),) দেশব্যাপী ষাটবর্ষপূর্তি সম্মাননা (২০০৯), নগরচাবি কক্সবাজার (২০০৯), ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতি পুরস্কার (২০১০), রূপসী বাংলা পুরস্কার- কলকাতা (২০১০), উতল হাওয়া পুরস্কার- কলকাতা (২০১০), একুশ-উনিশের ভাষাগৌরব সম্মাননা, ত্রিপুরা সরকার, ভারত (২০১২), নগরপ্রতীক কক্সবাজার (২০১২), সিটি-আনন্দ আলো কবিতা পুরস্কার (২০১৩), বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক-২০১৫, চর গড়গড়ি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭ ইত্যাদি ৷

কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে। তারপর বাংলা একাডেমিতে তাঁর চাকরি বদল। এখানেই বিকশিত তাঁর শ্রেষ্ঠ সময়। তিনি এখন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব ও বাংলাদেশ রাইটার্স কপিরাইট সোসাইটির সভাপতি। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর, বিভাগীয় প্রধান ও মানবিক অনুষদের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

বাংলাদেশের শীর্ষ কপিরাইট বিশেষজ্ঞ হুদা জেনেভাস্থ আন্তর্জাতিক ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ওয়াইপো) কনসালট্যান্ট ও বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডের সদস্য। সমসাময়িক বাংলাদেশে লেখকদের অধিকার সুরক্ষা ও মেধাস্বত্ব আন্দোলনের তিনি পথিকৃৎ। সাংবাদিক হিসাবেও নূরুল হুদার অভিজ্ঞতা চার দশকের বেশি, কেননা সৃষ্টিশীল রচনার পাশাপাশি তিনি বরাবর সাংবাদিকতার কাজটিও করেছেন। সত্তুরের দশকে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বঙ্গকণ্ঠ-এ তাঁর সাংবাদিকতার শুরু। তারপর দীর্ঘদিন তিনি ’অধোরেখ’ ’বিশ্বাস’’ ‘বহুবচন’ ‘বাংলা একাডেমী পত্রিকা’, ‘বাংলা একাডেমি জার্নাল ’, ‘নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা’, ‘নজরুল ইনস্টিটিউট জার্নাল (ইংরেজি), ইত্যাদি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন পত্রিকা ‘বিডিনিউজ২৪.কম’-এর এডিটর আর্টস। এছাড়া তিনি বিশ্বব্যাপী নান্দনিক কাব্য আন্দোলন ‘কবিতাবাংলা’-র সভাপতি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত