সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক সমর দাস

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:২৩

সাহস ডেস্ক

সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক সমর দাস ১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নবদ্বীপ বসাক লেনে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম জিতেন্দ্রনাথ দাস, আর মা কমলিনী দাস। বাবার ছিলেন একজন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসায়ী। সেই সুবাদে পরিবারের গণ্ডিতেই সমর দাসের সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয়। 

সংগীতাঙ্গনে তাঁর আত্মপ্রকাশ ১৯৪৫ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে, একজন বাঁশিবাদক হিসেবে, তৎকালীন অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঢাকা স্টেশনে। একই সঙ্গে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাজাতে পারতেন বেহালা, পিয়ানো, অ্যাকর্ডিয়ান ও গিটার। ১৯৪৮ সালে তিনি হাওয়াইন গিটার ও পিয়ানোবাদক হিসেবে যোগ দেন বিখ্যাত এইচএমভি কোম্পানিতে। পাশাপাশি সমানতালে বাজাতে থাকেন মঞ্চে ও বেতারে। অনেকেই তখন বলতেন, তাঁর হাতে জাদু আছে! এরপর ১৯৫০ এর দশকে কলকাতায় হিজ মাস্টার্স ভয়েস কোম্পানিতে কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেন। 

১৯৬১ সালে তিনি সংগীত প্রযোজক হিসেবে যোগ দেন তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে। একে একে সৃষ্টি করে চলেন কালজয়ী সব সুর! তাঁর সুরারোপিত বিখ্যাত গানের মধ্যে আছে, ‘তন্দ্রাহারা নয়ন আমার এ মাধবী রাতে’, ‘লাজুক লাজুক চোখ মেলে ওই’, ‘পুরোনো আমাকে খুঁজে’, ‘কাঁকন কার বাজে রুমঝুম’, ‘কত যে ধীরে বহে মেঘনা’, ‘সাগর ভেঙে বন্যার বেগে আয়’ এমনি আরও অসংখ্য গান। এ দেশের চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনায়ও পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব হলেন প্রয়াত সমর দাস। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নির্মিত প্রথম সবাক ছবি মুখ ও মুখোশ-এর সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। পরবর্তীকালে মাটির পাহাড়, আছিয়া, ধীরে বহে মেঘনাসহ আরও অনেক ছবিতে সফল সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।

১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চ। মার্চের শেষের দিকে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে গেলেন সীমান্ত শহর কুড়িগ্রামে। ওখানে কিছুদিন থেকে বহু কষ্টে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ গরুর গাড়িতে করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নিলেন এক খ্রিষ্টান মিশনারিতে। এরপর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সমর দাস মুজিবনগর খেকে পরিচালিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও প্রধান পরিচালক ছিলেন। এ সময় বহু গানে তিনি সুর দেন। তার সুর করা গান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও দেশবাসীকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। মুক্তিযুদ্ধে তার সুর করা ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’ প্রভৃতি গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে। ১৯৭২ সালে সুরবিন্যাস করে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ মূল গানটি বিবিসি লন্ডন থেকে সামরিক ব্রাশব্রান্ডে রেকর্ড করার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে, ১৯৮৫ ও ১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমসের সূচনা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের সংগীত পরিচালনা। 

সংগীত প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে সমর দাস বহু সম্মান, সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হন। তার মধ্যে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা পদক, ইউনিসেফ পদক, ব্রিটিশ রাজকীয় পদক, সাফ গেমস পদক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

বাংলাদেশে সঙ্গীত পরিষদের প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সমর দাস এর সদস্য ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবেরও সদস্য ছিলেন। সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন সমর দাস। 
সাহস২৪.কম/মশিউর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত