জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

‘ভালবেসে মিটল না আশ, কুলাল না এ জীবনে। হায় জীবন এত ছোট কেনে, এ ভুবনে?’ - কবি, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০১৮, ১১:৩৩

১.
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক ও গল্পলেখক। ধ্রুপদী কথাশিল্পী, নিম্নবর্গের গণমানুষের কথাকার, সজীব জীবনের সচিত্রশিল্প সাধক এমনতর বহুমাত্রিক অভিধায় সম্মানিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনঘনিষ্ঠ লেখনী তাকে বাংলা সাহিত্যে অন্যতম মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় ১৮৯৮ সালের ২৩ জুলাই (নানা মতান্তরসহ) জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অত্যন্ত শক্তিমান এই কশাশিল্পী আমাদের মনে সদা জাগ্রত আছেন তাঁর মৌলিক সৃষ্টিরসের মাধ্যমে। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। উল্লেখ্য যে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর লোকান্তরিত হলেও বাংলা সাহিত্যে অবিস্মরণীয় অবদান রাখার জন্য তিনি চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।
 
২.
আবারো সেই একই সংকটের কথা স্মরণ করতেই হয় এবং সংকটা আমার কাছে গভীরতরই বটে। এবার কালোত্তীর্ণ কথাশিল্পী তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের জন্মদিন, তারিখ নিয়ে। প্রিয় কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে গিয়ে লেখা প্রস্তুতির পাঠকালে বড় বিপদে পড়ে গেলাম। তাঁর তিনটি জন্ম তারিখের সন্ধান পেলাম। অমর স্রষ্টা তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় ১৮৯৮ সালের ২৩ জুলাই, ২৪ জুলাই এবং ২৩ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বলে নানা তথ্য-উপাত্তে পেয়ে, জেনে আমি চরম বিভ্রান্ত হয়ে ভীষণই বিপদে আছি। আসলে তাঁর সঠিক জন্ম তারিখ, দিন কোনটি ? কেউ কি দয়া করে আমাকে সূত্রসহ নিশ্চিত করবেন? তবুও গত ১৯ জুলাই, ২০১৬ তারিখের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ভাষ্যমতে ২৩ জুলাই জন্মদিন ধরেই তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকি। কালজয়ী সাহিত্যসাধক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের ‘কবি’ ‘সপ্তপদী’ ‘জলসাঘর’, ‘গণদেবতা’, ‘রাইকমল’ সহ আরো একাধিক অমর সৃষ্টি আমার অসম্ভব প্রিয় সাহিত্যশিল্প।

৩.
ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, তারাশঙ্কর তাঁর সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তাঁর লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তাঁর অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। তাঁর লেখায় বিশেষ ভাবে বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা পাওয়া যায়। সেখানে আরও আছে গ্রাম জীবনের ভাঙনের কথা, নগর জীবনের বিকাশের কথা। মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা সূক্ষ্ম অনুভূতিকে তিনি এমনভাবে তার রচনায় বর্ণনা করেছেন যে, যে কোনো পাঠকের পক্ষে তা হৃদয়ঙ্গম করা সহজ ছিল। আর এসব কারণেই তার সাহিত্যকর্ম পাঠকের হৃদয়ে চিরজাগরূক হয়ে আছে, থাকবে। তারাশঙ্করের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলের বীরভূমের লাভপুর গ্রামের এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বংশে ১৮৯৮ সালে। 

৪.
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কালের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া একজন চরিত্র স্রষ্টা, জীবন নির্মাতা। বাংলাসাহিত্য আজ বিশ্ব দরবারে একটি বিশেষ স্থান দখল করার কৃতিত্ব অর্জন করে আছে। এই অর্জন খুব সহজে সম্ভব হয়নি। এর পেছনে অনেক সাহিত্যিকের নিরলস সাহিত্য চর্চার অবদান রয়েছে। বাংলা সাহিত্যের দিকে তাকালে যে ক’জন অগ্রগণ্য সাহিত্যিককে এক পলকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে নজরে পড়ে তাদের মধ্যে তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতমদের একজন। বাংলা সাহিত্যে স্বমহিমায় তাঁর আত্মপ্রকাশের পটভূমির প্রতি প্রথমে আলোকপাত করা যেতে পারে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালপর্বে সারাবিশ্বে নানা ক্ষেত্রের সাথে সাথে বিশ্বসাহিত্যেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। বাঙালী জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে পরিবর্তন আসে তা বাংলা সাহিত্যের গল্প-উপন্যাসে ধীর লয়ে প্রতিফলিত হয়। রবীন্দ্রনাথ প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালপর্বের ঝড়ো হাওয়াকে হৃদয়ঙ্গম করে কালের স্বভাবসিদ্ধ গতিপ্রকৃতিকে তুলে ধরেন তার বিভিন্ন লেখায়। তারপর এক সময় এলো যখন বাংলা সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, শৈলজানন্দ, নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাস, অচিন্ত্য সেনগুপ্ত প্রমুখসহ একদল তরুণের আবির্ভাব ঘটল। সময়টা ছিল বিশ শতকের তৃতীয় দশক। তারা রবীন্দ্র প্রভাব বলয় থেকে মুক্তিতে উচ্চকিত, তাদের লেখায় নতুনত্বের আভাস। বয়সের দিক থেকে তারাশঙ্কর সে সময়ের তরুণ লেখকদের চেয়ে অগ্রজ হলেও লেখালেখির ক্ষেত্রে তাঁর আবির্ভাব তাদের অনেকেরই কিছু পরে। সেই সময়ে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত অধিকার সতর্ক একাংশ মানুষকে করেছে আশাবাদে সঞ্জীবিত, প্রাণিত করেছে স্বপ্নময় আলোকময় ভবিষ্যত রচনায়। তবুও প্রত্যাশার বিপরীতে নিরাশার আধিপত্যই মহাসমরোত্তর বিশ্বমানসের প্রবল ও প্রধানতম চেতনা স্রোতে। সমকালীন প্রতীচ্য-সাহিত্য ঐ হতাশানিমজ্জিত জীবনেরই শিল্প-অন্বেষা। এ সময়ের প্রাতীচ্য প্রভাবিত বাঙলা সাহিত্যে মুখ্যরূপে প্রতিফলিত হয়েছে বিপন্ন যৌবনের বেদনাবিলাস; লিবিডো-চেতনার ছায়ান্ধকার ভুবনে অভিযাত্রার মধ্যেই শিল্পীর রোম্যান্টিক চিত্ত অন্বেষণ করেছে বন্ধ্যা যুগের জীবন উৎস। না-অর্থক এই চেতনাস্রোতের বিপরীতে বাঙলা সাহিত্যে বিকীর্ণ হয়েছে যে স্বল্পালোকিতো রশ্মি- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তার শিল্পিত প্রতিনিধি। এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, রবীন্দ্রনাথের সাথে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।আমরা জানি, রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন আর তারাশঙ্করের জন্মস্থান লাভপুরের ব্যবধান ছিল মাত্র কয়েক কিলোমিটারের। দুই লেখকের বয়সের ফারাক তিরিশ বছরের বেশি হলেও রবীন্দ্রনাথ প্রায় প্রথম থেকেই তারাশঙ্করের সাহিত্য সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারাশঙ্করকে তিনি বলেছিলেন, ‘... তোমার কলমে বাস্তবতা সত্য হয়েই দেখা দেয়, তাতে বাস্তবতার কোমর বাঁধা ভাব নেই, গল্প লিখতে বসে গল্প না লেখাটাকেই যাঁরা বাহাদুরি মনে করেন তুমি যে তাঁদের দলে নাম লেখাওনি এতে খুশি হয়েছি।’ 

৫.
সাহিত্য সমালোচকগণের মতে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাঙলা কথাসাহিত্যের এক প্রাতঃস্মরণীয় নাম। বাংলা কথাসাহিত্যের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বি শিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের তিনি যথাযথ উত্তরসূরী। বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত তিন বন্দ্যোপাধ্যায় – এর মধ্যে তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাকোবিদ। রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার আলোকস্পর্শ যখন ক্রমশ বিলীয়মান, যখন শরৎচন্দ্রের দিনও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, যখন দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে একটা অস্থিরতার স্পর্শ, এমনি এক যুগসন্ধিক্ষণে তারাশঙ্করের আবির্ভাব ঘটে বাংলা সাহিত্যে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ে ও মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তারাশঙ্করের লেখনীর স্পর্শে বাংলা কথাসাহিত্য আবার নতুনভাবে আলোকিত হয়।একদিকে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের আগ্রাসী তৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে মানব অস্তিত্বকে; নৈরাজ্য-নৈরাশ্য-অনিশ্চয়তা-ক্লেদ-শঙ্কা আর মনস্তাপে বৃহদাঙশ মানুষ খনন করেছে আত্মপ্রতারণার নির্বিঘ্ন বিবর।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা উপন্যাসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনজনের জগৎ আলাদা, তবে শক্তিতে তাঁরা স্বগোত্রীয়। উপন্যাসের বিশ্বপটভূমির কথা মনে রেখেই বলা যায়, তাঁরা অসাধারণ ঔপন্যাসিক। মানিকের পদ্মানদীর মাঝি, পুতুল নাচের ইতিকথা; তারাশঙ্করের হাসুলিবাঁকের উপকথা, গণদেবতা; বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী, আরণ্যক অর্পূব রচনা। মানিকের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের যোগ, তারাশঙ্করের আঞ্চলিক জীবনবোধ-সামন্তচেতনা, বিভূতিভূষণের জীবন-প্রকৃতি-দর্শন বাংলা উপন্যাসকে ধনী করে তুলেছে। শরৎচন্দ্রের জগৎও নিজ আলোয় উদ্ভাসিত; নারীজীবন-সামন্ত চরিত্র নিয়ে তাঁর আবেগতপ্ত ভাষা আমাদের এক মদির রণজগতে নিয়ে যায়। তবে উপন্যাসের শক্তির বিবেচনায় তাঁকে ন্যূন করে দেখতেই হয়।

৬.
অমর কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৯৮-১৯৭১) বাবার নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আর মাতার নাম প্রভাবতী দেবী। তারাশঙ্করের ভাষায়, তাঁর বাবা ও পিসিমা শৈলজা ঠাকুরাণী ছিলেন সেকালের প্রতিনিধি। অন্যদিকে তাঁর মা প্রভাবতী দেবী ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সমর্থক ও বিদুষী মহিলা। মাত্র আট বছর বয়সে তারাশঙ্কর বাবাকে হারান। তিনি তাঁর বিধবা পিসিমা ও নিজের মায়ের স্নেহ ভালবাসায় লালিত পালিত হন। মাতা প্রভাবতী দেবীর ধর্মশাস্ত্রের অগাধ অনুশীলন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব তারাশঙ্করের মানস গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রভাবতীর বাস্তব দেশপ্রেম শৈশবেই তারাশঙ্করকে উদ্দীপনা যোগায়। লাভপুরের যাদবলাল হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯১৬ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর উমাশশী দেবীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তারপর তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেন কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার কারণে তাঁর পড়াশোনা আর এগোয়নি। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদান করেন। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি ব্রিটিশবিরোধী কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গ্রেফতার বরণ করেন। বিচারে তাঁর কয়েক মাসের জেল হয়। কারাগারে বসে তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। বাংলা কংগ্রেসের রাজনীতির উপদলীয় কোন্দল ও সংঘাতের কারণে তিনি রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। কারামুক্তির পর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে সাহিত্য সাধনার মাধ্যমেই তিনি দেশ সেবা করবেন। কারামুক্তির পর কিছুকাল গ্রামে কাটিয়ে ১৯৪০ সালে তিনি স্থায়িভাবে কলকাতার বাসিন্দা হন এবং সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। 

৭.
তারাশঙ্করের প্রথম গল্প ‘রসকলি’ সেকালের বিখ্যাত পত্রিকা কল্লোল-এ প্রকাশিত হয়। এছাড়া কালিকলম, বঙ্গশ্রী, শনিবারের চিঠি, প্রবাসী, পরিচয় প্রভৃতি প্রথম শ্রেণির পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। তবে রাজনীতি থেকে তিনি একেবারে বিচ্ছিন্ন হননি। একবার তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনে তিনি কিছুকাল কলকাতায় কয়লার ব্যবসা এবং কিছুকাল কানপুরে চাকরি করেন। ১৯৭০ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর সভাপতি নির্বাচিত হন। 

৮.
প্রথম জীবনে কিছু কবিতা লিখলেও কথাসাহিত্যিক হিসেবেই তারাশঙ্করের প্রধান খ্যাতি। তারাশঙ্করের লেখালেখির সূত্রপাত কবিতা দিয়ে হলেও গদ্যশিল্পী হিসেবে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করেন। তবুও তাঁর লেখা কবিতার কথা না বললেই নয়। একটি মাত্র কাব্যগ্রন্থ ‘ত্রিপত্র’ (১৯২৬) প্রকাশ করেও তিনি ছিলেন মনে প্রাণে আগাগোড়া কাব্যগ্রাহী। পরবর্তীকালপর্বে তাঁর লেখা গল্প- উপন্যাসের কাব্যিক গদ্যের উপস্থিতি উজ্জ্বল মহিমায় ভাস্বর। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালি ঘূর্ণি’ ‘কবি’ ও ‘রাইকমল’ মতো উপন্যাসে রোমান্স আর রসঘন অনুষঙ্গ তারশঙ্করের কবিতা প্রীতিরই উজ্জ্বল স্বাক্ষর। 

৯.
আগেই বলেছি, তারাশঙ্কর তাঁর গল্প-উপন্যাসে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন তারাশঙ্কর তাঁর সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তার সব লেখার বড় বৈশিষ্ট্য। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তাঁর অনেক লেখায় গল্প-উপন্যাসের বিষয়। তাঁর লেখায় ওই সব সম্প্রদায়ের মানুষের অশিক্ষা, সামাজিক উপেক্ষা, অবহেলা, দৈন্যদশা, রিক্ততা ও কুসংস্কারের বাস্তব চিত্র তিনি অত্যন্ত মুনসিয়ানার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের মাটি ও মানুষ, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবনচিত্র, স্বাধীনতা আন্দোলন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ব্যক্তির মহিমা ও বিদ্রোহ, সামন্ততন্ত্র-ধনতন্ত্রের দ্বন্দ্বে ধনতন্ত্রের বিজয় ইত্যাদি তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্ত্ত। মানবচরিত্রের নানা জটিলতা ও নিগূঢ় রহস্য তাঁর উপন্যাসে জীবন্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নিজে জমিদারবংশের সন্তান হয়ে কাছ থেকে দেখেছেন কীভাবে জমিদারি ক্রমশ বিলুপ্ত হয়; পাশাপাশি নব্য ধনিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে এবং দিকে দিকে কল-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তখন একদিকে চলছিল গ্রাম্য সমাজের ভাঙন, অন্যদিকে শহরজীবনের বিকাশ। সমাজের এ নীরব পরিবর্তন তাঁর রচনায় নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তারাশঙ্করের রচনার আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য-তিনি পরম যত্নের সঙ্গে মানুষের মহত্ত্বকে তুলে ধরেছেন। শরৎচন্দ্রের পরে কথাসাহিত্যে যাঁরা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তারাশঙ্কর ছিলেন তাঁদের একজন। 

১০.
তারাশঙ্কর চার দশকের বেশিকাল ধরে সাহিত্য সাধনায় ব্রতী ছিলেন। ১৯২৯-৩০ থেকে ১৯৭১ সালের মৃত্যু অবধি ১টি কাব্যগ্রন্থ, ৬৫টি উপন্যাস, ২০০-এর অধিক ছোটগল্প, ১২টি নাটক, অস্যংখ্য প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনী রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে চৈতালী ঘূর্ণি (১৯৩২), জলসাঘর (১৯৩৮), ধাত্রীদেবতা (১৯৩৯), কালিন্দী (১৯৪০), গণদেবতা (১৯৪৩), পঞ্চগ্রাম (১৯৪৪), কবি (১৯৪৪), হাঁসুলি বাঁকের উপকথা (১৯৪৭), আরোগ্য নিকেতন (১৯৫৩) ইত্যাদি ধ্রুপদী আঙ্গিকের উপন্যাস লিখে বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে তিনি বিশেষ আসন লাভ করেছেন। তিনি অনেক গল্পও লিখেছেন। বেদে, পটুয়া, মালাকার, লাঠিয়াল, চৌকিদার, বাগদী, বোষ্টম, ডোম ইত্যাদি সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র তাঁর গল্পে দক্ষতার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে। ‘রসকলি’, ‘বেদেনী’, ‘ডাকহরকরা’ প্রভৃতি তাঁর প্রসিদ্ধ ছোটগল্প। তারাশঙ্করের গল্পের সংকলন তিন খন্ডে সাহিত্য সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত (১৯৭৭-১৯৭৯) হয়েছে। তাঁর দুই পুরুষ, কালিন্দী, আরোগ্য নিকেতন ও জলসাঘর অবলম্বনে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে সৃজনশীল সৃষ্টি কর্মের জন্য তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরস্কারে ভূষিত হন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শরৎস্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৪৭) ও ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ (১৯৫৬) লাভ করেন। এছাড়া তিনি ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (১৯৫৫), ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ (১৯৫৬), ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ (১৯৬৭) এবং ‘পদ্মশ্রী’ (১৯৬২) ও ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন। 

১১.
সমালোচকগণ বলছেন, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনার বিষয় এবং রচনার চরিত্রগুলোর দিক থেকে দুটো ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটা হল গ্রাম্যজীবন ভিত্তিক নিম্নবিত্ত সমাজের ব্রাত্যজনদের সুখ-দুঃখের কাহিনী, আর দ্বিতীয়টা হল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লেখা কাহিনী। একটা ভাগ ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ পর্যন্ত। আর একটা ভাগ ‘মন্বন্তর’ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত। ‘মন্বন্তর’ ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’এর আগে লিখিত হলেও ‘মন্বন্তর’ তাঁর সাহিত্য জীবনের রূপান্তর সূচনা করে।” ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ তারাশঙ্করের প্রথম ধারার শেষ পর্বের মহাকাব্যিক উপন্যাস। এই উপন্যাসে তারাশঙ্কর ভূমি নির্ভর আভিজাত্য বোধে জারিত জীবন ব্যবস্থার মাঝে বিত্ত-মর্যাদা-সচেতন অর্থদৃপ্ত অহমিকার অনুষঙ্গকে উপস্থাপন করেছেন। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’-এর একটা অনুষঙ্গ তাঁর নিজের জীবন কাহিনীরই যেন প্রতিচ্ছবি। উচ্চকোটির জীবন আর নিম্নকোটির জীবনযাত্রার সংঘাত এই উপন্যাসে ব্যক্ত হয়েছে। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসে তারাশঙ্কর কৌম সমাজের গোষ্ঠী জীবনকে বিষয়ভুক্ত করেছেন। উপন্যাসটিতে রয়েছে সমান্তরাল দুটি কাহিনী। বাঁশবাদি গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত কোপাই নদীর বিখ্যাত হাঁসুলি বাঁকের কাহার সম্প্রদায়ের সুসংহত জীবনের পতন, কৃষি নির্ভর জীবনের পরিসমাপ্তি ও কাঁশবন ঘেরা উপকথার হাঁসুলি বাঁক বিরানভূমি পরিণত হওয়ার কাহিনী ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা।’ কাহার সম্প্রদায়ের উচ্ছেদ ও বুর্জোয়া ধনতান্ত্রিক সমাজের যন্ত্রকলে তাদের দাসে পরিণত হবার কাহিনী ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা।’ তারাশঙ্করের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অন্তর্দ্বন্দ্ব এই উপন্যাস লিখতে তাঁকে সাহায্য করেছিল বলে ভাবলে বেশি ভাবা হয় না। ১৯১৪ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে তারাশঙ্কর বয়ঃসন্ধিক্ষণ পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ করছেন সবেমাত্র। ওই সময় তারাশঙ্করের মনের উপর যুদ্ধের প্রভাব পড়েছিল। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন রাঢ় অঞ্চলের গ্রাম জীবনেও জীবনজীবিকায় পরিবর্তনের সূচনা দেখা দিয়েছে। ওই সময় বাঙালীরা সদ্যসূচিত কয়লা খনির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই লাভপুরের ক্ষয়িষ্ণু জমিদারির আওতা থেকে বের হয়ে কয়লাখনির ব্যবসায় নিজেদের নিয়োজিত করছেন। তাদের এলাকার একটা জমিদারও এ ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করে। ওই পরিবারে তারাশঙ্কর বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’য় রাঢ় অঞ্চলের গ্রাম্য জীবনের আর্থ-সামাজিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের কাহিনীই তারাশঙ্কর তুলে ধরেছেন কাহিনী নির্ভর কাব্যিক গদ্যে। দ্বিতীয় ধারার উপন্যাসের প্রসঙ্গে নাম করতে হয় ‘মন্বন্তর’-এর । এ উপন্যাস অনেকাংশে প্রগতি আন্দোলনের (১৯৩৫-৫০) দ্বারা অনুপ্রাণিত। ‘মন্বন্তর’ উপন্যাসটি গ্রন্থিত আকারে প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে। স্বাধীনতা আন্দোলন ও দেশবিভাগ প্রাক পর্বের রাজনৈতিক, সামাজিক জটিলতা তারাশঙ্করের মনকে আন্দোলিত করে। ভয়াবহ মন্বন্তরের চিত্র তিনি প্রত্যক্ষ করেন। তিনি রাজনৈতিক জীবনবোধে উজ্জীবিত হন, তার পরেই তিনি রচনা করেন ‘মন্বন্তর’, ‘গণদেবতা’, ‘পঞ্চগ্রাম’ এর মতো রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুষঙ্গে লিখিত উপন্যাসগুলো। তারাশঙ্করের জীবনবোধের প্রথম থেকেই রাজনীতির উপস্থিতির কথা আমরা জানি। এ জীবনবোধের কারণেই তিনি ‘গণদেবতা’, ‘পঞ্চগ্রাম’, ‘ধাত্রীদেবতা’ উপন্যাস ত্রয় রাজনৈতিক মহাকাব্যিক অনুষঙ্গে লিখতে সমর্থ হন বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে। তিনি বারবার এসব উপন্যাসে তাঁর স্বভূমি লাভপুরের গ্রাম্যজীবনের কথাই যেন তুলে ধরেছেন। 

১২.
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গল্প-উপন্যাসে যে বহুমাত্রিক অনুষঙ্গের অবতারণা করেছেন তা অন্য লেখকদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়। তিনি তাঁর গল্প- উপন্যাসে ভয়ঙ্কর আদিমতান্ত্রিক ঐতিহ্য, প্রেম, অপ্রেম, পরকীয়া, সৌখিনতা, বিলাসিতা, বৈরাগ্য, বৈষ্ণব সহজিয়াভাব, অবহেলা, প্রবঞ্চনা, তঞ্চকতা, দ্বন্দ্ব- সংঘাত, সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, ভাঙা-গড়ার কাহিনী বিধৃত করেছেন নানা অনুষঙ্গে, নানা আঙ্গিকে, নানা ঘরাণায়। ধ্রুপদ আঙ্গিকের গল্প-উপন্যাস ছাড়াও প্রেম-ভালবাসা, বিরহ-বিচ্ছেদ এবং পরকীয়া প্রেমের গল্প- উপন্যাস লিখেছেন তার উদাহরণ ‘চাঁপাডাঙার বৌ’,‘জলসাঘর’,‘ব্যর্থ নায়িকা’, ‘প্রেম ও প্রয়োজন’, ‘ছলনাময়ী’, ‘মঞ্জরী অপেরা’ ইত্যাদি। তিনি ‘সপ্তপদী’, ‘যতিভঙ্গ’ উপন্যাসে অবাঙালী নাগরিক জীবন নিয়ে প্রগাঢ় ভালবাসার গল্প লিখেছেন তা নিঃসন্দেহে অসাধারণ। এবার আমার দু’টি প্রিয় উপন্যাসের দিকে একটু নজর দেবো।

১৩.১
‘ভালবেসে মিটল না আশ, কুলাল না এ জীবনে। / হায় জীবন এত ছোট কেনে, এ ভুবনে?”
আমার অসম্ভব প্রিয় ‘কবি’ উপন্যাসটি তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় রচিত একটি কালজয়ী সাহিত্য। কথাশিল্পী তারাশঙ্কর `কবি` উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন দরিদ্র ও নিচু পরিবারের এক তরুণের কবি হয়ে ওঠার ঘটনা। অনবদ্য এই উপন্যাস পাঠকের হৃদয় জয় করে নেয় সহজেই। সাহিত্যবোদ্ধাদের ভাষায়, এটি তারাশঙ্করের অমর উপন্যাস, অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি।বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রে প্রথমবার ‘কবি’ মণ্ত্রমুগ্ধের মতন পড়েছিলাম।পেয়েছিলাম একজন কবির মনের ভেতর যে জগৎতের বাস, জীবনের নানান ঘটনা পেরিয়ে আস্তে আস্তে কবি হয়ে ওঠার অসাধারণ বর্ণনা। আমার কাছে বারবার পড়বার মতন একটি বই-‘কবি’। ঝুমুরদল এবং নিতাই কবিয়ালের সমাজবৃত্তান্ত ‘কবি’ উপন্যাসের মূলধারা। তবে সামাজিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সাঁকো ডুবে গেছে প্রেম ও চেতনার মিহিন ঢেউয়ে। নিতাই ঠাকুরঝিকে ভালোবাসে, কৃষ্ণচূড়ার তলায় বিছিয়ে রাখে তার নিটোল অপেক্ষা, ঠাকুরঝি আসেন ‘পশ্চিমসমীপবর্তী দ্বিপ্রহরের সূর্যের অগ্রগামিনী ছায়ার মত’। নিতাইয়ের কণ্ঠে গান হয়ে ওঠে ঠাকুরঝি। ‘কবি’ একটি অসাধারণ আত্ম-অন্বেষণমূলক জীবনধারার উপন্যাস। নিতাই কবিয়ালের ‘সকল হলো সারা’র পরে যেটুকু পড়েছিলো, তা নিতান্তই তার ধ্যান নিমীলিত নেত্রে উন্মীলিত হওয়া জীবনের এক গাঢ় প্রতিচ্ছবি। এই প্রতিচ্ছবি কেবল নিতাইয়ের গূঢ়তারই নয়, তা স্বয়ং তারাশঙ্করেরও। তর্পণ ও তপস্যার মধ্য দিয়ে তিনি শেষে পৌঁছে দিয়েছেন জীবনের গভীর দার্শনিক ভাষ্যে- ‘জীবন এতো ছোটো কে নে’ ? ‘কবি’ উপন্যাসে গভীর দৃষ্টি ফেললে দেখা যায়- তারাশঙ্করের অন্যান্য উপন্যাসের মতো এখানেও একটা ‘বদল’ ঘটেছে, তবে তা অবশ্যই শ্রেণি বদল নয়, কারণ নিতাই কবিয়ালের সামাজিক অবস্থা অন্ত্যজ হলেও ঝুমুরদলের অবস্থা অন্ত্যজ ছিলো না। তাছাড়া নিতাইয়ের ঝুমুরদলের সাথে ভিড়ে যাওয়াও কোনোভাবেই তার সমাজ বদলের চিত্র নয়। অন্যদিকে, বসনের সাথে নিতাইয়ের পরিণয়, সে কেবল হৃদয়জ ভালোবাসারই প্রকাশ, এবঙ তা-ও বসনের সেই চারিত্রিক সরলরেখা থেকেই উদ্ভূত, যা নিতাই কামনা করেছিলো। তাই দেখা যায়- মন্দির প্রাঙ্গণে অসুস্থ ও পক্ষাঘাতগ্রস্থ ভিক্ষুকের দল দেখে বসনের হৃদয় হু হু করে কেঁদে উঠে। তাঁর নারী হৃদয়ের এই কোমল দিকটি সেদিন হঠাৎ উন্মোচিত হয় নিতাইয়ের সামনে। ‘কবি’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো পাটনার পত্রিকা মণীন্দ্রনাথ সমাদ্দার সম্পাদিত ‘প্রভাতী’র ১৩৪৭ এর চৈত্র থেকে ১৩৪৮ এর ফাল্গুন সঙখ্যা পর্যন্ত। পরবর্তীতে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ‘কবি’ নামে একটি ছোটোগল্প, যা এই উপন্যাসের বীজগল্প, তা ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত হয়েছিলো। বিরহ মিলনের অন্তর্লীন ভালোবাসার জীবন্ত বাণীরূপ তারাশঙ্করের এই উপন্যাস। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাঢ় বাঙলার অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষ ও সমাজের ছবি। হিন্দু সমাজের একেবারে নিম্ন শ্রেণি ডোম বঙশজাত কবিয়াল- যার পূর্বপুরুষ সকলে ডাকাত, বর্তমান আত্মীয় স্বজনও তাই, তবুও নিতাই কবিয়াল। উপন্যাসের একেবারে শুরুতেই সে বিষয়ে তারাশঙ্কর বিষ্ময় প্রকাশ করে গেছেন।“ শুধু দস্তুরমত একটা বিষ্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেল।”

১৩.২
উপন্যাসটির মূল বিষয় তৎকালীন হিন্দু সমাজের রুপ ও আচার, প্রেম, জীবনসংগ্রাম, মনের বিভিন্ন দিক ইত্যাদি। মুলত একটি মানুষকে ঘিরেই উপন্যাসটি আবর্তিত। সে মানুষটি হল নিতাই, নিতাইচরণ। নিতাই খুব নিচু বংশের ছেলে, পুর্ব পুরুষের পাপ বহনের দায়ে তার আপন জীবন অতিষ্ঠ। কারণ চোর, ডাকাত, খুনিদের বংশে জন্মেও সে চায়, ‘জন্মের চেয়ে কর্মকে বড় করে দেখতে’। বিধাতা প্রদত্ত সুমিষ্ট কন্ঠ দিয়ে সে জগৎকে জয় করতে চায়, চায় বংশের পাপ মোচন করতে। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। তাকে তাই বাধ্য হয়ে মাকে ছেড়ে-বাবার ভিটে ছেড়ে মুটের কাজ করতে যেতে হয় রেল ষ্টেশনে। রেলস্টেশনে সে পায় অকৃত্রিম বন্ধু রাজন, রাজাকে, যে সত্যিই রাজা তবে ধনে নয় মনে। এবার স্বাধীনচেতা নিতাই সুযোগ পেয়ে গ্রামের আসরে কবি গান গায় আর বনে যায় ‘কবিয়াল’, তাও আবার সবার কাছে নয় রাজা, ঠাকুরঝি (রাজার শ্যালিকা যাকে রাজা ও নিতাই দুজনেরই কাছে ‘ঠাকুরঝি’)। আরও পরিচিত সবার কাছেও তবে পারেনি বিপ্রতীপ আর নিতাই এর মামাদের কাছে। কন্ঠে যার মধু মনে যার ভাব তার কি আর মুটোর কাজে মানায়! তাই সে কঠিন ব্রত নেয়, যে করেই হোক তার জাত ‘কবিয়াল’ হওয়া চাই-ই চাই। কিন্তু এই স্বল্পশিক্ষিত আর নিচু বংশের লোকের দ্বারা কি বড় কবিয়াল হওয়া সম্ভব? উপন্যাসটিতে তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন উপযুক্ত পরিবেশে তা সম্ভব। অনেক কষ্টে, অনেক সাধনায় সাধারণ নিতাইচরণ হয়ে হয়ে উঠেন একজন নামকরা কবিয়াল। আমরা দেখি, প্রেম এ উপন্যাসের মূল বিষয়। নিতাই ঠাকুরঝিকে মনে মনে ভীষণ ভালবাসে কিন্তু প্রকাশ করে না। করবেই বা কিভাবে, ঠাকুরঝি যে অন্যের ঘরনী! দুধ বেচতে তাদের বাড়ি (রেলশ্টেশনে) আসে। একদিন রাজা ঠাকুরঝিকে কালো-কুচ্ছিত বলে বকাঝকা করলে নিতাই তার রাগ ভাঙ্গায় সবার অগোচরে এই বলে, ‘কাল যদি মন্দ হবে কেশ পাকিলে কাদ কেনে? কালো চুলে রাঙা কুসুম হেরেছ কি নয়নে?’ ভালবাসা আর ভয় একসাথে একাকার হয়ে যায় এভাবে কখনও, ‘চাঁদ দেখে কলঙ্ক হবে বলে কে দেখে না চাঁদ? তার চেয়ে চোখ যাওয়াই ভালো ঘুচুক আমার দেখার সাধ।’ এরই মধ্যে ঠাকুরঝিও তার ভালবাসার আচ পেয়ে সারা দেয়। কিন্তু বিধিবাম। এরইমাঝে চলে আসে আরেক অধ্যায়। ঝুমুর দলের বসন্তকে সেবা করতে গিয়ে অগোচোরে ভুল বোঝে ঠাকুরঝি। ঝুমুরদল চলে গেলেও তার রেশ থেকে যায়। আর ফাঁস হয়ে যায় ঠাকুরঝির সাথে নিতাই এর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের কথা। ফলে নিতাই গোপন কষ্ট নিয়ে স্থান ত্যাগ করে যুক্ত হয় ঝুমুর দলের সাথে। বুঝতে পারে বাস্তবতা আরও গভীরভাবে। বসন্তের সাথে প্রেম জমে উঠে নিতাইয়ের। হয়ে উঠে একজন পরিপূর্ণ কবিয়াল। নামডাক ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। ঝুমুর দলের নর্তকী হয়ে উঠে সত্যিকারের একজন প্রেমিকা। তারাশঙ্কর এখানে যথাযথভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন তথাকথিত মেলার আসল রুপ, প্রকৃত গোপনচিত্রটি। বসন্ত চেতনায় শুধু নয়, বাস্তবে চড় দিয়ে নিতাইকে বুঝিয়ে দেয় ‘যশ্মিন দেশে যদাচার’, যেখানে যা তাই চালাতে হয়। নেশাবিমুখ নিতাই তাই মাতাল হয়ে প্রমাণ করে নারীর চপোঠাঘাত পুরুষের জন্য কত অপমানের! পরিবেশ অনুযায়ী তা কাজেও লেগেছিল। তবে বসন্ত নিতাইকে খুবই শ্রদ্ধা করত। শুধু বসন্তই না নিতাইয়ের গানের জন্য সবাই এমনকি পৌঢ়া মাসিও তাকে শ্রদ্ধা করত। উপন্যাসের শেষদিকে বসন্ত গোপন যখন রোগে মারা যায় তার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত নিতাই যে সেবা করেছে তা সত্যিই লক্ষ্যণীয়। আর এতেই বসন্তর প্রেম আরও শতগুন বেড়েছে। কবিয়াল নিতাই বসন্তর প্রেমে চিরজীবন বাঁচার আশা করে বসন্তকে শুনিয়েছিল সেই অমর সখেদ বাণী, ‘এই খেদ মোর মনে, ভালবেসে মিটল না আশ, কুলাল না এ জীবনে। হায় জীবন এত ছোট কেনে, এ ভুবনে?’ বসন্ত তাকে সব ছেড়ে পরজীবনে চলে যায়। শোকে-দুখে পাগলপ্রায় নিতাই ঝুমুর দল ছেড়ে বৈরাগী হয়ে বিশ্বনাথের মন্দিরে চলে আসে। সেখানেও যে তার আর মন বসে না। ভিন্নদেশে ভিন্নভাষী তার আর ভাল লাগেনা। দেশের প্রতি মন আনচান করে। তারাশঙ্কর এখানে প্রচন্ড শৈল্পিক মুন্সিয়ানার সাথে নাড়ীর টানের, দেশপ্রেমের, প্রবল জাতীয়তাবাদের অসম্ভব বাস্তবানুগ এক চিত্র এঁকেছেন। এবার নিতাই দেশে ফিরবে। কিন্তু সে চায় না ঠাকুরঝির সাথে দেখা হোক, তার ঘর ভাঙ্গুক। সে সবসময় ঠাকুরঝির মঙ্গল চায়। অবশেষে ট্রেনে চেপে দেশে ফিরল নিতাইচরণ। ততদিনে সে মস্তকবি। ফিরেই যে খবরটি পেল তা সত্যিই কষ্টের আর হৃদয়বিদারক। ঠাকুরঝিও আর এ ধরাধামে নাই, মারা গেছে। তাই নিতাইচরণের শেষ ইচ্ছা প্রতিভাত হয় রাজার সাথে মায়ের দরবারে গিয়ে শুধানো, ‘জীবন এত ছোট কেনে? ’ লেখকের সিদ্ধান্ত, ‘ঠাকুরঝি’র কোমল কালো আকৃতির সঙ্গে তার প্রকৃতির একটা ঘনিষ্ঠ মিল আছে, সঙ্গীত ও সঙ্গতের মত’। উপন্যাসে আমরা দেখি, ঠাকুরঝি’র প্রতি এই ভালোবাসা নিতাই কবিয়ালের বেঁচে থাকে, তার ধ্বংস হয় না, ফিকে হয় না এই নিটোল ভালোবাসা। তাই দেখা যায়, বসনকে যখন জড়িয়ে ধরে, তখনও হৃদয়ের মাঝে জেগে ওঠে ঠাকুরঝি। নিতাই কবিয়াল কেবল কবিগানেই সুর খুঁজে পায়, সম্পর্কের সুরে দোহারের সাথে তাল মেলে না। নিতাই কবিয়াল শেষ পর্যন্ত জীবনের সুরকেই অন্বেষণ করে; সে কবি, তার বিলাপের আর্তস্বর কবিগান, তার বেদনার ঝুম বৃষ্টিও কবিগান। জীবনের কাছে তার যে মমতা- তা অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ হয়ে চমৎকার ভাষাশিল্পে উপস্থাপিতো হয়েছে ‘কবি’ উপন্যাসে। তাই উপন্যাসের শেষে এসে যখন নিতাই কবিয়াল বলে- মা গো, জীবন এতো ছোটো কেনে; তখন আসলে পাঠকের তন্ত্রীতেই মর্সিয়া ওঠে, সে-ই বেদনাই প্রতিধ্বণিত হয়- মা গো, জীবন এতো ছোটো কেনে। এভাবেই ‘কবি’ উপন্যাসটির মাধ্যমে তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় পাঠকসমাজে প্রশংসা এবং সার্থকতার সাথেই বেচে থাকবেন। 

১৪.
‘সপ্তপদী’ উপন্যাস তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় রচিত আরেকটি কালজয়ী সাহিত্যকর্ম। উপন্যাসের কাহিনিতে পাই, মেডিকেল কলেজ়ের স্টুডেন্ট কৃষ্ণেন্দু ও রীনা ব্রাউন। রীনা এ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ান। কলেজে ভারতীয় ও এ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ানদের মধ্যে ফুটবল টুনামেন্ট হয়। এখানেই কৃষ্ণেন্দু ও রীনা ব্রাউনের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। যা আরো ছোট ছোট ঘটনায় বাড়তে থাকে। পরে কলেজ ফাংশনে “ওথেলোর-ডেসডিমোনা”য় অভিনয় করতে গিয়ে তারা পরস্পরের কাছে আসে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সময় মায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে কৃষ্ণেন্দু ভেঙ্গে পরলে রীনা সব সময় তার সাথে থাকে, মানসিক শক্তি জোগায়। পরীক্ষায় কৃষ্ণেন্দু সফল হয়। এ কৃতিত্ব সে রীনাকে দেয়। তাদের সম্মতিতে বিয়ে স্থির হলে রীনার বাবা কৃষ্ণেন্দুকে খ্রিষ্টান হতে বলেন। কৃষ্ণেন্দু রাজি হয়। কিন্তু এ সংবাদে গ্রামে তার গোঁড়া হিন্দু ব্রাহ্মণ পিতা কেঁকে বসেন। কৃষ্ণেন্দুকে এ বিবাহে অসম্মত না করতে পেরে গোপনে তিনি রীনার সাথে দেখা করেন। তাকে বোঝাতে চান কৃষ্ণেন্দু মোহে এ বিবাহ করছে। অবশ্যই একদিন সে রীনাকে ত্যাগ করবে। কিন্তু রীনা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে কৃষ্ণেন্দু তারই! তার ভালবাসা ও বিশ্বাসের কাছে পুত্র স্নেহে অন্ধ পিতা হার মেনে তার পুত্রকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জ়ানায়। এবার রীনা পিতার স্নেহের কাছে হার মেনে কথা দেয় সে কৃষ্ণেন্দুকে বিবাহ করবে না এমন কি তার সংস্পর্শেও থাকবে না। রীনাকে বিয়ে না করলে কৃষ্ণেন্দুও আর ধর্ম ত্যাগ করবে না, এই বিশ্বাস নিয়ে তার পিতা গ্রামে ফিরে যান। কৃষ্ণেন্দু রীনার কাছে এলে সে কেন ধর্ম ত্যাগ করছে সে প্রশ্ন রীনা তাকে করে। কৃষ্ণেন্দু জানায় রীনাকে পেতে সে সব ত্যাগ করতে পারে। রীনা বলে একজন সামান্য নারীর জন্য কৃষ্ণেন্দু আজ তার ধর্ম ত্যাগ করতে প্রস্তুত, কাল হয়ত আরো কোন সুন্দরীকে পেয়ে কৃষ্ণেন্দু তাকেও ত্যাগ করবে। সে এ বিয়ে কিছুতেই করবে না। কৃষ্ণেন্দু রীনার আচরণে প্রচন্ড আঘাত পায়। রীনাও অন্তরে অন্তরে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে। তবু সে আস্বস্থ হয় কৃষ্ণেন্দু ধর্ম ত্যাগ করেনি, তার পিতাকে দেওয়া কথা সে রাখতে পেরেছে। কিন্তু কৃষ্ণেন্দুও রীনার পিতাকে খ্রিষ্টান হবার কথা দেয়। সে ধর্মান্তরিত হয়। যা দেখে রীনা প্রচন্ড কষ্ট পায়। এ সময় রীনার জীবনে আরেক কষ্ট নেমে আসে। সে জানতে পারে তার মা তাদের বাড়িরই পরিচালিকা। পিতার কাছে সে মায়ের অধিকার দাবী করে অপদস্ত হয়। এসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ডাক্তারদের সাহায্য চাওয়া হয়। সংসারে ক্ষত বিক্ষত রীনাও যুদ্ধে চলে যায়। বহুদিন পর মাতাল ও অসুস্থ অবস্থায় এক গ্রাম্য পথে চিকিৎসার জন্য গ্রামের ফাদারের কাছে সাহায্য পেয়ে তাকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে ফাদাররূপী কৃষ্ণেন্দুকে দেখে সে চমকে ওঠে। যখন রীনা আর কোন ধর্ম মানে না, কৃষ্ণেন্দুকেও ব্যঙ্গ করে, আঘাত করে। কিন্তু কৃষ্ণেন্দুর নির্লিপ্ত শান্ত প্রশান্তি দেখে তার কাছ থেকে আবার পালিয়ে আসামে যুদ্ধে চলে যায়। ঘটনাচক্রে কৃষ্ণেন্দুকেও সে সময় সেখানে যেতে হয়। গ্রাম থেকে পিতার চিঠি এলে কৃষ্ণেন্দু রীনার এমন সব আচরণের প্রকৃত কারণ বুঝতে পারে। তার গোঁড়া হিন্দু পিতাও রীনার প্রেম ও সত্য বচন পালনের নিষ্ঠা দেখে নিজের ভুল বুঝতে পারেন, ক্ষমা চান। কৃষ্ণেন্দুকে যুদ্ধক্ষেত্রে আবার দেখে রীনা তার কাছ থেকে পালিয়ে ফেরে। এসময় সে আহত হয়। কৃষ্ণেন্দু তাকে রক্ষা করে ও শুশ্রুষা করে নিজের স্ত্রীর পরিচয় দেয়। জ্ঞান ফিরে রীনা সব অনুভব করে নতুন জীবন পায়। উল্লেখ্য, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে ১৯৬১ সালে পরিচালক অজয় কর তখনকার জনপ্রিয় রোমাণ্টিক জুটি উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘সপ্তপদী’। ষাটের দশকের গোড়ায় এই ছবি সিনেমা হলগুলিতে সাড়া ফেলে দিয়েছিলো। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের সূত্রপাত এই ছবির হাত ধরেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘সপ্তপদী’ একটি মননশীল আধুনিক চলচ্চিত্রের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হয়ে আছে।

(তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া, উইকপিডিয়া, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা, কালি ও কলম, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, অনুশীলন, ইন্টারনেট)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত