কবি শামসুর রাহমান

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০১৬, ১১:১৫

সাহস ডেস্ক

এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি, 
এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউড়ের পৌষমাস! 
তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো, 
বর্ণমালা, আমার দুখিনী বর্ণমালা। 

আজ ১৭ আগস্ট। আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের এই দিনে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

কবি শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় পাড়াতলী গ্রামে। আধুনিক বাংলা কবিতায় বিষয় বৈচিত্র্য ও নৈপুণ্যের কারণে তিনি দুই বাংলায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। শামসুর রাহমানকে বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকে ৫ মহান কবির পর আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৯৪৯ সালে সোনার বাংলা পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। কবি শামসুর রাহমান বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছদ্মনামে সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় লিখতেন।

কবি শামসুর রাহমান ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৫৭ সালেই তিনি রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬০ সালে তিনি পুনরায় মর্নিং নিউজে সহযোগী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।

১৯৬৪ সালের শেষের দিকে কবি শামসুর রাহমান দৈনিক পাকিস্তানের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। সেখানে তিনি ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এই পত্রিকা দৈনিক বাংলা নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কবি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তিনি দৈনিক বাংলা থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি সাহিত্য পত্রিকা অধুনা’র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

প্রতিবাদী কবি শামসুর রাহমান পাকিস্তান শাসন আমলে সরকারি পত্রিকায় কাজ করা সত্ত্বেও আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের প্রতি বিদ্রুপ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারা ভোগের সময় তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি কবিতা লেখেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতের ওপর পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদেও তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ।

তার লেখা ‘বর্ণমালা, আমার দুখিনী বর্ণমালা’, ‘আসাদের শার্ট’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ এসব কবিতার মধ্যে তার বিদ্রোহী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৮৭ সালে স্বৈরশাসন আমলে পরপর ৪ বছর ধরে কবি শামসুর রাহমান ‘শৃংখল মুক্তির কবিতা’, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা লেখেন। স্বৈরশাসনের পতন হলে তিনি লিখেন ‘গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা’। তার প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। কাব্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশুতোষ গ্রন্থসহ তার রচিত শতাধিক বই রয়েছে।

সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, সাংবাদিকতার জন্য মিতসুবিশি পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক ও আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধি দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত