জেলা প্রশাসকের সাহসিকতায় রক্ষা পান দুই গ্রামবাসী

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৪০

সাহস ডেস্ক

সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউপির দামোধরতপি ও মাহমুদপুর গ্রামের দুইদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই সংঘর্ষের ঘটনাটি বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে বারটার দিকে। এসময় জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম সরকারি কাজে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক দিয়ে গাড়িযোগে ছাতক যাচ্ছিলেন।

জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম কাল বিলম্ব না করে গাড়ি থামিয়ে নেমে সোজা ঢুকে পড়েন সংঘর্ষের মাঝখানে। গাড়িতে থাকা নিজের গোপনীয় সহকারি পিন্টু চন্দ্র দাস, নিরাপত্তাকর্মী পুলিশ কনস্টেবল মোশাহিদ মিয়া, গাড়ি চালক জসিম উদ্দিন ও অফিস সহায়ক নাসির উদ্দিনকে বললেন সবাই যেন চেষ্টা করেন সংঘর্ষ রোধ করতে। এক ফাঁকে পুলিশ সুপার ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসিকে ফোন করে সহযোগিতা চাইলেন। 

দুইদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে রামদা, লাটি-সোটা, লোহার রড, বল্লম, ইট-সুরকি, সুলফিসহ অনেক ধারালো অস্ত্র ছিল। তবুও নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে রেখেই দুই পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকার জন্য বার বার অনুরোধ জানিয়ে সরে যেতে বললেন। সাথে থাকা গোপনীয় সহকারি, পুলিশ কনস্টেকবল, গাড়িচালক ও অফিস সহায়ক লোকজনকে নিরস্ত্র করছিলেন। প্রাণপন চেষ্টা করে এক পর্যায়ে ঠেকিয়ে দিলেন দুইপক্ষের সংঘর্ষ। 

অবশ্য কিছুক্ষণ পরই দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার পুলিশ ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। এরপর জেলা প্রশাসক পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সংঘর্ষের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেন। ইউপি কার্যালয়ে দামোধরতপী ও মাহমুদপুর গ্রামের দুই পক্ষকে নিয়ে শালীসে বসেন ইউপি চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি। ঘণ্টাখানেক আলোচনা ও দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বিষয়টির প্রাথমিক মিমাংসা করা হয় এবং আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) আবারো ইউনিয়ন পরিষদে বসার সিদ্ধান্ত হয়। 

জেলা প্রশাসকের দুঃসাহসিক প্রচেষ্টায় দুইদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ রোধ হওয়ায় দামোধরতপী ও মাহমুদপুর গ্রামের নিরীহ লোকজন সস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন এবং জেলা প্রশাসককে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। গ্রামীবাসীর দাবি যেভাবে দুইটি পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল অনেক কিছু ঘটবার আশংকা ছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসক মাত্র ৪ জন লোককে সাথে নিয়ে ঠেকিয়ে দিলেন সংঘর্ষ।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মাহমুদপুর গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে সোহল মিয়ার কাছে পাওনা টাকা পেত দামোদরতপী গ্রামের ইছকন্দর আলীর ছেলে দুলু মিয়া। সামনে সোহেল মিয়াকে পেয়ে পাওনা টাকা দাবি করের ও মারধর করেন দুলু মিয়া। সোহেল মিয়াকে মারধরের বিষয়টি তার স্বজনরা জানার পর প্রতিবাদ করেন। এনিয়ে দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। 

জেলা প্রশাসকের গোপনীয় সহকারি পিন্টু চন্দ্র দাস বলেন,‘ স্যার (জেলা প্রশাসক) এত সাহস করে এইভাবে দুইদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ঢুকে পড়বেন আমরা তা কল্পনাও করিনি। জীবন বাজি রেখে তিনি ধারালো অস্ত্রের মুখে দাড়িয়ে দুইপক্ষকে বিরত থাকা ও দূরে সরে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করেন। স্যারের নির্দেশ মোতাবেক আমরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। স্যারের প্রচেষ্টায় সংঘর্ষ ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।’ 

দামোধরতপী গ্রামের মুরব্বি আরস আলী বলেন,‘ টাকা পাওয়া নিয়ে দুইজনের মধ্যে মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র দুই পক্ষই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। এই সময় ডিসি সাহেব আসায় রক্ষা হয়েছে। না হলে হয়তো অনেক কিছু ঘটে যেত। তিনি খুব বড় একটা উপকার করে দিলেন। ’

পূব পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বলেন,‘ পাওনা টাকা নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এসময় জেলা প্রশাসক মহোদয় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমে সাথের সবাইকে নিয়ে সংঘর্ষ রোধ করেন। ঘটনার পরপরই আমরা দুইপক্ষকে নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছি। আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে বসে বিষয়টির শালিস মিমাংসা করা হবে।’ 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত