শ্রাবণ প্রকাশনীকে বইমেলায় ২ বছর নিষিদ্ধ করেছে বাংলা একাডেমি

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৩০

সাহস ডেস্ক

আগামী দুই বছরের জন্য একুশে বইমেলায় কোনও স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা শ্রাবণ প্রকাশনীকে। ‘একাডেমির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা’ করায় ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে বইমেলা কমিটির সচিব জানিয়েছেন। 

বাংলা একাডেমি বইমেলা কমিটির সচিব জালাল আহমেদ জানান, গত ১০ নভেম্বর বাংলা একাডেমির কাউন্সিলের সভায় শ্রাবণ প্রকাশনীকে বইমেলায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বইমেলায় বাংলা একাডেমি পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘ইসলাম বিতর্ক’ নামে একটি বই নিষিদ্ধ করেছিল। আর একাডেমির সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন শ্রাবণ প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী রবিন আহসান। যা বাংলা একাডেমির বইমেলার স্বার্থের পরিপন্থী। আর এজন্য বৃহত্তর স্বার্থে বাংলা একাডেমির বইমেলায় শ্রাবণ প্রকাশনীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আগামী বইমেলার জন‌্য স্টল বরাদ্দের আবেদন করতে গিয়ে এই প্রকাশনীর কর্ণধার রবিন আহসান বিষয়টি জানতে পারেন।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসান সাহস২৪.কম কে বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে আমি কী বিষয়ে কথা বলব সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে। এমন তো নয় যে আমি মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কথা বলেছি! বইমেলার মতো মুক্তবুদ্ধির চর্চার একটি ক্ষেত্র থেকে কেবল বই প্রকাশের অপরাধে একজন প্রকাশককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি মনে করেছি এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত তাই প্রতিবাদ করেছি’

রবিন আহসান আরো বলেন, ‘যেকোনো অপরাধে রাষ্ট্র কাউকে গ্রেপ্তার করতেই পারে। কিন্তু বাংলা একাডেমি বইমেলার মতো শিল্প সাহিত্যের পীঠস্থান থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া এটা একজন প্রকাশকের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে বলেই মনে করেছি।’

রবিন আহসান প্রশ্ন করেন, বইমেলা চলার সময় কেন প্রকাশককে গ্রেপ্তার করা হবে? তিনি তো আর চোর ডাকাত নন। একজন সম্মানিত প্রকাশক।

‘বই নিষিদ্ধ করা হলে আইন অনুযায়ী তা জব্দ করা হোক। স্টল বাতিল করা হোক। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি তা করতেই পারে। কিন্তু একজন বৃদ্ধ প্রকাশককে বইমেলা থেকে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে হয়েছে।’

‘আর তাই প্রতিবাদ করেছি। শাহবাগে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি। টেলিভিশনের টক শোতে কথা বলেছি। মতামত জানিয়েছি। আর এই প্রতিবাদ করাটা যদি অপরাধ হয় আর সে অপরাধে বইমেলায় আমার অংশ নেওয়াটা বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে আমি বলব আমরা মধ্যযুগে বাস করছি।’

রবিন আহসান আরো বলেন, ‘বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের শিল্প- সাহিত্য বিকাশ এবং বিচরণের তীর্থক্ষেত্র। এটা কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। কেউ যদি স্থুল অজুহাতে আক্রোশবশত এবং ব্যক্তিস্বার্থে একে ওকে নিষিদ্ধ করেন, তবে সেটা আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের জন্যই ক্ষতিকর।’

রবিন সাহস২৪.কমকে বলেন, ‘বই মেলায় স্টল পাওয়ার আবেদন করতে ফরম তুলতে গিয়ে জানতে পারি আমাদের আগামী দুই বছর কোনো স্টল দেওয়া হবেনা। তবে এবিষয়ে আগে থেকে কোনো নোটিস পাইনি।’

অনলাইন পোর্টাল জাগরণীয়ার প্রতিবাদঃ
‘কোন ধরণের নোটিশ ছাড়াই অমর একুশে বইমেলা থেকে ২ বছরের জন্য শ্রাবণ প্রকাশনীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলা একাডেমি।

ধারণা করা হচ্ছে গত বইমেলায় বদ্বীপ প্রকাশনী নিষিদ্ধ ঘোষণা ও এর প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিককে গ্রেপ্তারের পর প্রতিবাদ করা এবং টকশোতে বাংলা একাডেমির সমালোচনা করায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

জাগরণীয়া মনে করে এহেন সিদ্ধান্ত মত প্রকাশের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ এবং একুশে বইমেলার যে চেতনা তার পরিপন্থী।

জাগরণীয়া এই সিদ্ধান্তের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে এবং একই সাথে ঘোষণা করছে যে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে জাগরণীয়া আগামী ২ বছর অমর একুশে বইমেলা সংক্রান্ত সব ধরণের সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকবে।
------- সম্পাদক।।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত