রবি ঠাকুর, সাম্প্রদায়িকতা ও মুদ্রার ভিন্ন পিঠ

প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৭, ১২:১১

আবু সাঈদ জিয়াউদ্দিন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যক্তি হিসাবে যতটা গুরুত্বপূর্ণ – তার চেয়ে হাজার গুন বেশী গুরুত্বপূর্ন হয়ে আছে তাঁর রচনাবলী। কবিতা, গান, নাটক, ছোটগল্প আর প্রবন্ধে। বাংলা সাহিত্য জগতে যে বিশাল ভান্ডার রবি ঠাকুর গড়ে তুলেছেন উনার সুদীর্ঘ জীবন কালে তা বাংলা সাহিত্য এবং ভাষায় রবির মতোই কিরণ ছড়াচ্ছে এবং আগামীতে ছড়াবে। বস্তুত বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য এখন রবিময় হয়েই আছে এই বিশ্ববরেণ্য কবির কারনেই। যে কোন মানুষের সীমাবন্ধতা থাকে – রবিঠাকুরেরও সীমাবদ্ধতা ছিলো – ছিলো ভুলভ্রান্তি। একজন নোবল বিজয়ী সাহিত্যিককে দিয়ে "সুলেখা কালি শ্রেষ্ঠ কালি" ধরনের বিজ্ঞান করিয়ে নিয়েছিলো সুযোগ সন্ধানীরা – তেমনি স্বদেশী আন্দোলনের সময় রবি ঠাকুরকে নানান ভাবে ব্যবহার করে নেতারা। মোদ্দা কথা মানুষ রবি ঠাকুর কখনই সমালোচনার উর্দ্ধে বলে কেউই বলবেন না। কিন্তু রবি ঠাকুরে বিশাল সাহিত্য কর্ম – যা বাংলাভাষাকে বিশ্ব জগতে মহিমান্বিত করেছে – তাকে আড়াল করে তার বিরুদ্ধে একটা সাম্প্রদায়িক প্রপাগান্ডা চালানো একটা ধারা শুরু হয়েছে মুলত ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম লগ্ন থেকেই। আজকের এই রবি ঠাকুর বিরোধী সাম্প্রদায়িক অসুস্থ চর্চার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে শততম জন্মবার্ষিকী পালন নিয়ে। তৎকালীন শাসকশ্রেনী প্রথম দিকে অনুষ্ঠান করতে দিতে রাজী ছিলো না – পরে আন্দোলনের মুখে আনুমোদন দেয়। সেই সময়কালের পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের দালাল মোনায়েম খানের একটা উক্তি ছিলো খুবই মজাদার -

পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে তিনি দেশের বরেণ্য দুই শিল্পী ও সুরকার, শেখ লুৎফর রহমান এবং আবদুল লতিফকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'আপনারা রবীন্দ্রসংগীত লিখতে পারেন না?' কি তাজ্জব ব্যাপার! দুজনই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

এখানে সুষ্পষ্ট যে – মোনায়েম খান রবি ঠাকুর সম্পর্কে সামান্যই ধারনা রাখতেন। এই ধরনের অজ্ঞ শাসক শ্রেনীর কাছে রবি ঠাকুর ছিলেন একজন "হিন্দু কবি" – সুতরাং তাকে যেন তেন ভাবে পাকিস্তান থেকে দুরে রাখতে হবে। কিন্তু শাসকদের এই অদূরদর্শী মনোভাব এবং কর্মকান্ড বাঙালী মধ্যবিত্তের মাঝে রবি ঠাকুরে আসন আরো জোড়ালো করে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে আমরা "আমার সোনার বাংলা" জাতীয় সংগীত হিসাবে পেয়েছি আর আজকে রমনার বটমূলের ছায়ানটের বর্ষবরণ আর ত্কে ঘিরে যে বাঙালী উৎসব – তাও কিন্তু এসেছে পাকিস্তানী শাসকদের বরি ঠাকুরে প্রতি ঘৃণার মনোভাবের প্রতিবাদ হিসাবেই।

এখানে আরেকটা উক্তি বেশ গুরুত্বপূর্ন -যা তৎকালীন শাসক শ্রেনী – 

১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি জাতীয় পরিষদে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি করে বলেছিলেন, Rabindra Nath Tagore was never a part of our culture and literature. এ খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদের ঝড় উঠল পূর্ব বাংলায়। [এখানে উল্লেখ্য, পূর্ববঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থেকেও যিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে রক্তক্ষয়ী '৫২-র সূচনা করেছিলেন_সেই খাজা নাজিমুদ্দিনেরই কনিষ্ঠ ভ্রাতা এই খাজা শাহাবুদ্দিন।]

এই ধারা অব্যহত থাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় কালেও। সেই সময় এই রবি ঠাকুর বিরোধী প্রচারনা কাজটি করে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম – তারা সত্য মিথ্যা মিশিয়ে রবি ঠাকুরকে ইসলাম এবং মুসলমানের শত্রু হিসাবে প্রচার অব্যহত রাখে। নীচের দুইটি উদাহরণ বিষয়টকে পরিষ্কার করবে।

৩০ এপ্রিল ১৯৭১: দৈনিক সংগ্রাম
"যারা পূর্ব পাকিস্থানকে 'বাংলাদেশ' করেছিল, জিন্নাহ হলকে 'সূর্য সেন' করেছিল, রবীন্দ্রনাথকে জাতীয় কবি করেছিল আর সেই ঠাকুরেরই 'ও আমার সোনার বাংলা' জাতীয় সংগীত করেছিল তারা পাকিস্থানী হবার যোগ্যতা সর্বোতভাবে হারিয়েছে বলে কোন পাকিস্থানী আজ তার সমর্থন যোগাবে না।"

১০ এপ্রিল ১৯৭১: দৈনিক সংগ্রাম
"রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি হিন্দু"
এখানে উল্লেখ্য যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকৃত পক্ষে একজন ব্রাহ্ম সমাজের লোক ছিলেন – "তাঁদের উপাস্য ছিল "নিরাকার ব্রহ্ম", – উল্লেখ্য যে ব্রাহ্মসমাজের উদ্যেগেই গিরীশ চন্দ্র সেন পবিত্র কোরানের বাংলা অনুবাদ করে বাংলাভাষীদের কোরান পড়া সহজ করেছিলেন। এখনও অনেক প্রপাগান্ডা বিশ্বাসীরা প্রচার করছে যে রবি ঠাকুর হিন্দু ছিলেন। প্রপাগান্ডার মেশিনে ধোলাই হওয়া মগজগুলো একশ্বেরবাদী ব্রাহ্মসমাজ এবং মুর্তিপুঁজক হিন্দু ধর্মের তফাৎ করার মতো সামান্য জ্ঞানটুকু চর্চার মতো মেধা ব্যয় করতে পারে না।

১৯৭১ সালের ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করা হলো রবি ঠাকুরে "আমার সোনার বাংলা" – কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধ্যকে হত্যা করে পাকিস্তানী ভাবধারায় পুনপ্রতিষ্ঠার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়  - তখন আবার রবি ঠাকুরকে আবারো আড়ালে চেষ্টা চালনো হয় – অসুস্থ কবি  কাজি নজরুল ইসলামকে ঢাকায় এনে – তাঁকে জাতীয় কবি বানানোর জন্যে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব দেওয়ার মাধ্যমে  কাজি নজরুল ইসলামকে ইসলামের কবি হিসাবে সাহিত্যের সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো হয়।

অন্যদিকে দেখছি ওয়াজ মাহফিল থেকে রাজনৈতিক বক্তব্যের মাঝেও কবি নজরুল ইসলামকে ইসলামের জাগরনের কবি হিসাবে প্রচার চলতে থাকে পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন হিন্দু আর ইসলাম বিদ্বেষী ইত্যাদি প্রচার করে রবি ঠাকুরের প্রতি একটা ঘৃনার প্রপাগান্ডা চলছে অব্যহত ভাবে। আজও অবাক হয়ে দেখি – রবি ঠাকুরে বিশাল সাহিত্যকর্মের বিষয়ে অজ্ঞ ব্যক্তিরাও খড়কূটার মতো রবীন্দ্রনাথের মাঝে সাম্প্রদায়িকতার চিহ্ন খুঁজে ফিরেন। তারা বিপুল উৎসাহে প্রচার করেন – রবীন্দ্রনাথ একজন ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন – সুতরাং তা লেখা গান জাতীয় সংগীত হতে পারে না।

তাদের এই দীনতা থেকে মুক্তির জন্যেই হয়তো কবি প্রার্থনা করছেন -
ক্ষমা কর মোরে তাত,
            আমি যে পাতকী ঘোর,
            না জেনে হয়েছি দোষী,
            মার্জ্জনা নাহি কি মোর!
            ও! সহে না যাতনা আর,
            শান্তি পাইব কোথায়–
            তুমি কৃপা না করিলে
            নাহি যে কোন উপায়!
            আমি দীন হীন অতি–
            ক্ষম ক্ষম কাতরে,
            প্রভু হে, করহ ত্রাণ
            এ পাপের পাথারে।
              কাফি– আড়াঠেকা

রবি ঠাকুরে ঈশ্বরপ্রেম এবং ইশ্বরের প্রতি প্রবল ভালবাসার প্রবল অভিব্যক্তির বহিপ্রকাশ এই গানটি যে কোন বিশ্বাসীকে নাড়া দেবে – যারা রবি ঠাকুরের মাঝে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধের খোঁজ পেয়ে রবি ঠাকুরের বিশাল কর্মের ভান্ডার থেকে নিজেদের বঞ্চিত করেন তাদের জন্যে সত্যই মায়া হয়।   

ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা
প্রভু,       তোমার পানে, তোমার পানে, তোমার পানে।
              যায় যেন মোর সকল গভীর আশা
প্রভু,       তোমার কানে, তোমার কানে, তোমার কানে।
              চিত্ত মম যখন যেথায় থাকে,
              সাড়া যেন দেয় সে তোমার ডাকে,
              যত বাধা সব টুটে যায় যেন
প্রভু,       তোমার টানে, তোমার টানে, তোমার টানে।
              বাহিরের এই ভিক্ষাভরা থালি
              এবার যেন নি:শেষে হয় খালি,
              অন্তর মোর গোপনে যায় ভরে
প্রভু,       তোমার দানে, তোমার দানে, তোমার দানে।
             হে বন্ধু মোর, হে অন্তরতর,
            এ জীবনে যা-কিছু সুন্দর
            সকলি আজ বেজে উঠুক সুরে
প্রভু,       তোমার গানে, তোমার গানে, তোমার গানে।


(২)
এই পরিকল্পিত প্রপাগান্ডার আড়ালে রবি ঠাকুরে বিশাল কর্মযজ্ঞ আড়াল হয়ে যায় – সাথে সাথে আড়াল হযে যায় অনেক উল্লেখযোগ্য তথ্য এবং বিষয়াবলী। আগেই বলেছি – জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবার ছিলো ব্রাহ্মসমাজের অনুসারী।যারা একশ্বেরবাদী ছিলো এবং তাদের প্রার্থনা সভায় কোরান, বেদ,গীত বাইবেল সবই পড়া হতো। সেই দিক দিয়ে দেখলে অবাক হবার কিছু নেই যে রবি ঠাকুর মোহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে একটা উচ্চ ধারনা পোষন করতেন। তার কিছু প্রমানও তাঁর লেখায় পাওয়া যায়। 

"দৈনিক আজকালের খবর"র একটা প্রবন্ধে এইভাবে বিষয়টা এসেছে – 

১৯৩৩ সালের ২৬ নভেম্বর পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উপলক্ষে ভারতের মুম্বাই শহরে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইসলাম ও ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক বিশ্বনবী সম্পর্কে ওই আলোচনা সভায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি অপূর্ববাণী প্রদান করেছিলেন।

তিনি বাণীতে লিখেছিলেন,
‘জগতে যে সামান্য কয়েকটি মহান ধর্ম আছে, ইসলাম ধর্ম তাদের মধ্যে অন্যতম। মহান এ ধর্মমতের অনুগামীদের দায়িত্বও তাই বিপুল। ইসলামপন্থীদের মনে রাখা দরকার, ধর্মবিশ্বাসের মহত্ত্ব আর গভীরতা যেন তাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ওপর ছাপ রেখে যায়। আসলে এ দুর্ভাগা দেশের অধিবাসী দুটি সম্প্রদায়ের বোঝাপড়া শুধু তো জাতীয় স্বার্থের সাম্প্রতিক উপলব্ধির ওপর নির্ভর করে না। সত্যদ্রষ্টাদের নিঃসৃত শাশ্বত প্রেরণার ওপরও তার নির্ভরতা। সত্য ও শাশ্বতকে যাঁরা জেনেছেন ও জানিয়েছেন, তারা ঈশ্বরের ভালোবাসার পাত্র এবং মানুষকেও চিরকাল ভালোবেসে এসেছেন।’

একই ভাবে দেখা যায় ১৯৩৪  সালে কলকাতা বেতারে "ঈদে মিলাদুন্নবী" উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা বানী প্রচারিত হয় – সেখানে তিনি বলেছেন -

"ইসলাম পৃথিবীর মহত্তম ধর্মের মধ্যে একটি, এ কারণে তার অনুবর্তীগণের দায়িত্ব অসীম। যেহেতু আপন জীবনে এ ধর্মের মহত্ত্ব সম্পর্কে তাদের সাক্ষ্য দিতে হবে। ভারতে যেসব ধর্ম-সমাজ আছে, তাদের পরস্পরের প্রতি সভ্য জাতি যোগ্য মনোভাব যদি উদ্ভাবিত করতে হয়, তাহলে কেবল রাষ্ট্রীয় স্বার্থবুদ্ধি দ্বারা সম্ভব নয়। আমাদের নির্ভর করতে হবে সেই অনুপ্রেরণার প্রতি, যা ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র ও মানবের বন্ধু সত্যদূতের অমর জীবন থেকে চির উৎসারিত। আজকের এ পুণ্যানুষ্ঠান উপলক্ষে মুসলিম ভাইদের সঙ্গে একযোগে ইসলামের মহাঋষির উদ্দেশ্যে আমার ভক্তি উপহার অর্পণ করে উৎপীড়িত ভারতবর্ষের জন্য তার আশীর্বাদ ও সান্ত্বনা কামনা করি।’ বিশ্বকবির এ বাণী থেকে মহানবী সা.-এর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।"

রবি ঠাকুরের সুষ্পষ্ট উক্তি – ইসলাম হলো মহান ধর্মের অন্যতম। তারপরও কি তাকে ইসলাম বিদ্বেষী বলা যাবে?

মুসলমানদের বিষয়ে রবি ঠাকুরের মনোভাবের আরো কিছু প্রমান পাওয়া যায় ১৯৩৬ সালে দিল্লি জামে মসজিদ থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় পাঠানো শুভেচ্ছা বানী থেকে – সেই বানীতে তিনি লিখেছেন -

‘যিনি বিশ্বের মহত্তমদের মধ্যে অন্যতম, সেই পবিত্র পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদ সা.-এর উদ্দেশে আমি আমার অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি। মানুষের ইতিহাসে এক নতুন সম্ভাবনাময় জীবনশক্তির সঞ্চার করেছিলেন হজরত মুহাম্মদ সা. - পয়গম্বর এনেছিলেন নিখাঁদ, শুদ্ধ ধর্মাচরণের আদর্শ। সর্বান্তকরণে প্রার্থনা করি, পবিত্র পয়গম্বরের প্রদর্শিত পথ যারা অনুসরণ করেছেন, আধুনিক ভারতবর্ষের সুসভ্য ইতিহাস রচনা করে তারা যেন জীবন সম্পর্কে তাদের গভীর শ্রদ্ধা এবং পয়গম্বরের প্রদত্ত শিক্ষাকে যথাযথভাবে মর্যাদা দেন। তারা যেন এমনভাবে ইতিহাসকে গড়ে তোলেন, যাতে আমাদের জাতীয় জীবনে শান্তি ও পারস্পরিক শুভেচ্ছার বার্তাবরণটি অটুট থাকে।’

সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায় – কলকাতার মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত দেশ সম্পাদক অমিতাব চৌধুরীর লেখা ‘রবীন্দ্রনাথ ও ইসলাম’ গ্রন্থে। সেই সংকলনের ভুমিকা লিখেছেন  প্রখ্যাত কবি ও সমালোচক আবদুল মান্নান সৈয়দ। সেখানে বলা হয়েছে শান্তি নিকেতনে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হতো এবং সেখানে রবি ঠাকুরে লেখা একটি প্রায়ই গাওয়া হতো। গানটি হলো -

কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আস–
    সাধক ওগো, প্রেমিক ওগো,
        পাগল ওগো, ধরায় আস।
            এই   অকুল সংসারে
দুঃখ-আঘাত তোমার প্রাণে বীণা ঝংকারে।
            ঘোর  বিপদ-মাঝে
কোন জননীর মুখের হাসি দেখিয়া হাস॥
            তুমি    কাহার সন্ধানে
সকল সুখে আগুন জ্বেলে বেড়াও কে জানে।
            এমন    ব্যাকুল করে
কে তোমারে কাঁদায় যারে ভালোবাস।
            তোমার   ভাবনা কিছু নাই–
কে যে তোমার সাথের সাথি ভাবি মনে তাই।
            তুমি   মরণ ভুলে
কোন অনন্ত প্রাণসাগরে আনন্দে ভাস॥

রবি ঠাকুরের রসুল (সঃ) এবং ইসলাম সস্পর্কে অত্যান্ত স্বচ্ছ ধারনা এবং ইসলাম সম্পর্কে বেশ উঁচু ধারনা পোষন করতেন তা উপরে উদাহরনগুলো থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তারপর কি আমরা বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যকে সমৃদ্ধকারী এই বিশ্ববরেন্য কবির গায়ে সাম্প্রদায়িক নোংরা কাদা লাগানোর জন্যে পরম সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থীদের দারস্থ হবো – তাদের প্রপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে বাংলা সাহিত্যের বিশাল একটা অংগনকে এড়িয়ে চলবো – বাংলা সাহিত্য জগতের এই মহা সৃষ্টি স্রষ্টাকে ঘৃনা করবো!

(লেখাটি তৈরীতে বিশেষ সহায়তা নেওয়া হয়েছে –  মো. মিন্টু আলী বিশ্বাস রচিত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর প্রতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও অভিমত। ধর্মচিন্তা : বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর প্রতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও অভিমত  লেখক : প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় " )

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত