‘পশ্চিম রণাঙ্গন সম্পূর্ণ শান্ত’

প্রকাশ : ২২ জুন ২০১৭, ১২:০৭

জার্মান সাহিত্যিক এরিক মারিয়া রেমার্ক তার যুদ্ধবিরোধী উপন্যাস 'অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট'-এর জন্য দুনিয়াজোড়া পরিচিত। ১৮৯৮ সালের ২২ জুন জার্মানির ওয়েস্ট ফেলিয়ার ওসনাব্রায়কে জন্ম।

এরিক মারিয়া রেমার্ককে মাত্র আঠারো বছর বয়সে ১৯১৬ সালে বাধ্যতামুলকভাবে যোগ দিতে হয়েছিল জার্মান সেনাবাহিনীতে। জুন ১২, ১৯১৭ তে তাকে পাঠানো হয় ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে, দু’নম্বর কোম্পানিতে। সেখানে তিনি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন। খুব কাছে থেকে দেখেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বীভৎসতা, ধ্বংসযজ্ঞ। গোলার বিস্ফোরণে বাম পা, ডান হাত আর ঘাড়ে মারাত্নক জখম হলে, তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় জার্মানির এক সামরিক হাসপাতালে। যুদ্ধের বাকিটা সময় তিনি সেখানেই ছিলেন।

একটি জার্মান পত্রিকা ১৯২৮ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ছাপে- ইংরেজি অনুবাদের ফলে পরে যেটির নাম দাঁড়ায় ‘পশ্চিম রণাঙ্গন সম্পূর্ণ শান্ত’ — All Quiet On The Western Front 'অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট'।

মানবতার দর্শনে ঋদ্ধ এই উপন্যাস সারা বিশ্বের মানুষের কাছে যুদ্ধের বীভৎসতাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে এক অনবদ্য দলিল। ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হয় মারিয়া রেমার্কের আরেকটি উপন্যাস ‘দ্য রোড ব্যাক’। নিখুঁত বাস্তবকে সাহিত্যে তুলে আনার ক্ষেত্রে মারিয়া রেমার্ক ছিলেন অগ্রগণ্য।

নাৎসিদের অত্যাচারের ফলে ১৯৩২ সালে মারিয়া রেমার্ককে নির্বাসিত জীবনে যেতে হয়। তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কারণে তার এক বোনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। হিটলার ক্ষমতা গ্রহণের পর তার সব বইয়ের কপি পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং বইগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৭ সালে রেমার্ক আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডে মারা যান।

এরিক মারিয়া রেমার্কের বইগুলো এবং তার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাগুলোর নাম উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে উল্লেখ করলাম।

রেমর্কের উপন্যাস সমুহ: 
(১৯২৯) Im Western Nichts Neues (All Quiet on the Western Front)
(১৯৩১) Der Weg Zurück (The Road Back)
(১৯৩৭) Drei Kameraden (Three Comrades)
(১৯৪১) Liebe deinen Nächsten (Flotsam)
(১৯৪৬) Arc de Triomphe (Arch of Triump)
(১৯৫২) Der Funke Leben (Spark of Life)
(১৯৫৪) Zeit zu leben und Zeit zu sterben (A Time to Live and a Time to Die)
(১৯৫৬) Der schwarze Obelisk (The Black Obelisk)
(১৯৬১) Der Himmel kennt keine Günstlinge, (Heaven Has No Favorites)
(১৯৬২) Die Nacht von Lissabon (The Night in Lisbon)
(১৯৭১) Schatten im Paradies (Shadows in Paradise)

রেমার্কের রচনা অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র
(১৯৩৭) The Road Back, পরিচালক: জেমস হোয়েল, রচনা: আর.সি. শেরিফ এবং চার্লস কেনিয়ন
(১৯৩৮) Three Comrades, পরিচালক: ফ্রাঙ্ক বোর্জাগ
(১৯৪১) So Ends Our Night (FLOTSAM অবলম্বনে), পরিচালক: জন ক্রমওয়েল, অভিনয়ে: ফ্রেডরিক মার্চ, মার্গারেট সুলিভান, ফ্রান্সেস দি, গ্লেন ফোর্ড।
(১৯৪৮) ARC DE TRIOMPHE, পরিচালক: লুই মাইলস্টোন, অভিনয়ে: ইনগ্রিড বার্জম্যান, চার্লস বয়ার, চার্লস লাফটন।
(১৯৫৯) A Time to Love and a Time to Die (ZEIT ZU LEBEN UND ZEIT ZU STERBEN অবলম্বনে), পরিচালক: ডগলাস সির্ক, অভিনয়ে: জন গেভিন, লিলো পুলভার, কেনান উইন, এরিক মারিয়া রেমার্ক।
(১৯৭৭) Bobby Deerfield (DER HIMMEL KENNT KEINE GÜNSTLINGE অবলম্বনে) পরিচালক: সিডনি পোলাক।

“পশ্চিম রণাঙ্গন সম্পূর্ণ শান্ত”
অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ও কথক পল বোমার। স্কুলের শিক্ষক কর্তৃক উদ্দিপ্ত একজন সংবেদনশীল, দয়াশীল, বড় হৃদয়ের জার্মান স্বেচ্ছাসেবক তরুন সৈনিক। এই উপন্যাসে কোন সোজাসাপটা কাহিনী নেই। পল বোমারকে দিয়ে লেখক যুদ্ধ ফ্রন্টের  মুহূর্তগুলোর দিনলিপি ফুটিয়ে তুলেছেন। এই উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় লেথা বর্ণনা পড়ে আমাদের ব্যথিত হতে হয়, ধ্বংসযজ্ঞ ও বীভৎসতা দেখে আতংকিত হয়ে উঠতে হয়।

যুদ্ধের এই ধ্বংসযজ্ঞ ও বীভৎসতা চিরন্তন। পল বোমার আমাদের জানায়, যুদ্ধ হলো এমনি একটি বিষয় যেখানে বৃদ্ধরা সিদ্ধান্ত নেয়, ক্লাবে বসে আলোচনায়, যুদ্ধ নিয়ে বিতর্কে মত্ত হয় আর তরুনরা তাদের জীবনকে সেখানে ধংস করে। প্রতিটি যুদ্ধের সাথেই মিশে আছে হাজারে হাজারে নিরীহ মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণা, আহতদের যন্ত্রণাকাতর আর্তনাদ।

এরিক মারিয়া রেমার্ক বলেছিলেন, যুদ্ধের প্রথম শিকার হয় মানুষের হৃদয়! আমরা দেখিছি পল বোমারের সাথে একই ক্লাসের আরো ২০ জন নাম লিখিয়েছিল যুদ্ধে। তখন ওদের সবার বয়স আঠারো। যুদ্ধে যাবার টগবগে উত্তেজনা, মনের মধ্যে নানান রোমান্টিক স্বপ্ন, প্রাণ থাকতে এক ইঞ্চি পিছু না হটার প্রত্যয়, পিতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা। কিন্তু সব ফিকে হয়ে আসে দশ সপ্তাহের ট্রেনিংএ। দশ বছরের স্কুলের শিক্ষা আর আদর্শ, জীবনের সূক্ষ্ণ দিক, পবিত্রতা, মহত্ব একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে যায়। বইটি আমাদের বলে দেয় যুদ্ধের পরিনিতি, ধংস।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত