বৈশাখী আমেজে মুখরিত রাবি ক্যাম্পাস

প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৫৩

রিজভী আহমেদ

আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা বছরের প্রথম দিন ১৪২৫তম বছর। বাঙালির প্রাণের উৎসবের দিন। চৈত্রের সংক্রান্তি শেষে সূর্যের নতুন আলোর সঙ্গে এসেছে বাংলার নতুন বর্ষ। তাই কবি গুরুর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ফেলে আসা বছরের সকল জরা, ভয়, দুঃখ আর আর্বজনা তাপস নিঃশ্বাসে উড়িয়ে দিয়ে নয়া প্রত্যাশায় নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)।

ঢাকের বাদ্য, মঙ্গল শোভাযাত্রা, ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সাজ আর বৈশাখী নাচে গানে ১৪২৫ সনকে বরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থী। নতুন বছরকে স্বাগত করে নিতে ভোর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা আসতে থাকেন ক্যাম্পাসে। বেলা বাড়তে বাড়তে হরেক রঙে রঙীন তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে রাবি ক্যাম্পাস।

বরেন্দ্রভূমির রাজশাহী মহানগরে বর্ষবরণ উৎসবে প্রধান আকর্ষণ রাবি ক্যাম্পাস। এবারও বর্ণিল আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিদ্যাপীঠ। নতুন আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান, কবিতা, যাত্রা, নাটকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বরণ করা হয় নতুন বছরকে। 

শনিবার সকাল ১০টায় চারুকলা অনুষদ চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢাকে বাড়ি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

তবে চারুকলা বিভাগের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্ষবরণের আয়োজনে আলাদা মাত্রা যোগ করে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ বৃহদাকৃতির পায়রা ও ষাঁড়। আয়োজকরা জানিয়েছেন, আমাদের গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির সমাজ-সভ্যতায় ষাঁড়ের অবদান অনস্বীকার্য। নগরায়নের করাল থাবায় ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া সেই ষাঁড়কে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে আনার জন্যই ষাঁড়কে এবার শোভা যাত্রায় যোগ করা হয়েছে। এছাড়াও শান্তির প্রতিক ‘পায়রা’টি অশান্ত পৃথিবীতে চলমান যুদ্ধ, বিগ্রহ ভুলিয়ে সবার মাঝে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেবে।

এর আগে সকাল আটটায় সঙ্গীত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এছাড়ায় বিকেলের দিকে অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সমবেত সঙ্গীত, লোক সঙ্গীত ও বাউল সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, হরবোলা, অভিনয় ও বাঙালী ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), বাংলা, রসায়ন, নাট্যকলা ও সঙ্গীতসহ বিভিন্ন বিভাগ এবং সংগঠনের পক্ষ থেকেও মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। ঢাক-ঢোল, ভুঁভুজেলা, পালকি, নৌকা, মুখোশ, ফেস্টুন, ব্যানারে নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মহানন্দে ক্যাম্পাসে জুড়ে শোভাযাত্রা করে। কৃষক, জেলে, সাপুড়ে, বেদেসহ বিভিন্ন সাজে সাজেন শিক্ষার্থীরা। কেউ বা আবার সাজেন বউ-জামাই ও ঘটক। শোভাযাত্রায় শিক্ষার্থীদের রঙ বেরঙের সাজ আর নানা কীর্তি যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে দিল আবহমান গ্রামবাংলার একটুকরো বর্ণিল ঝলক।

এছাড়া ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। মার্কেটিং বিভাগের উদ্যোগে রবীন্দ্র কলাভবনের সামনে ‘শিরোনামহীন’ ও অর্থনীতি বিভাগের আয়োজনে ‘আরবোভাইরাস’ শেখ রাসেল চত্বরে কনসার্টে শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করে। 

ক্যাম্পাস জুড়ে ছিল তরুণদের রঙীণ উপস্থিতি। ছেলেদের গায়ে হরেক রঙের পাঞ্জাবী, মেয়েদের পরনে লাল-সাদা শাড়ি আর মাথায় ফুল। রাবির বর্ষবরণ উদযাপন উপভোগ করতে বাহিরে থেকেও এসেছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে কর্মব্যস্ত জীবনে একটু খানি উৎসবের অবসর পেয়ে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন বর্ষবরণ উদযাপনে মেতে উঠতে। 

বাঙ্গালীর প্রাণের এই উৎসবে অভিভূত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী শিক্ষার্থীরাও। রাবির জর্ডানী শিক্ষার্থী সইফ আদ্দিন সাঈদ আদ্দিল কাদির শিহাদিহ বলেন, বাঙ্গালীরা খুব উৎসব প্রিয় জাতি। দ্বিতীয় বারের মত এবারও বর্ষবরণ দেখলাম। সবার পরনে রঙিন পোষাক ছিল, পুরো ক্যাম্পাসের পরিবেশটাও রঙীন হয়ে উঠেছিল।

এদিকে বর্ষবরণ উদ্যাপনে ক্যাম্পাসে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে যেন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর ছিল। কড়া নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া বিকেল পাঁচটার মধ্যে সব ধরনের অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশও দেয়া হয়।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত