এসএম সুলতানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০১৮, ১০:৪৭

সাহস ডেস্ক

বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী আজ শুক্রবার (১০ আগস্ট)। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এই গুণী শিল্পী। তার বাবার নাম মেছের আলী, মা মাজু বিবি। রাজমিস্ত্রি পিতা মেছের আলীর নান্দনিক সৃষ্টির ঘষামাজার মধ্য দিয়ে ছোট বেলার লাল মিয়ার (সুলতান) চিত্রাঙ্কনের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ হয়। শিল্পী সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইল জেলা প্রশাসন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এসএম সুলতান ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। স্কুলের অবসরে বাবার রাজমিস্ত্রির কাজে সহযোগিতার করার ফাঁকে ছবি আঁকতে শুরু করেন। এসময় তার আঁকা ছবি স্থানীয় জমিদারদের দৃষ্টি আর্কষণ করে। জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালে নড়াইলের জমিদার ব্যারিস্টার ধীরেন রায়ের আমন্ত্রণে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে আসলে তার একটি পোট্রেট আঁকেন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র এসএম সুলতান। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ অন্যরা। লেখাপড়া ছেড়ে ১৯৩৮ সালে কলকাতায় গিয়ে ছবি আঁকা শুরু করেন তিনি। সেসময় চিত্র সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান এসএম সুলতান। ১৯৪৪ সালে আর্ট স্কুল ছেড়ে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে।

১৯৪৫-৪৬ সালে ভারতের শিমলায় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে লাহোরে সুলতানের চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। এরপর ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের একক ও যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন।

পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লীসহ খ্যাতিমান শিল্পীদের ছবির পাশে সুলতানই এশিয়ার একমাত্র শিল্পী যার ছবি এসব প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হবার সুযোগ লাভ করে। ১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই নড়াইলে ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থপন করেন ‘শিশুস্বর্গ’।

পরবর্তীতে সুলতান তার নিজস্ব অর্থায়নে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট দ্বিতলা নৌকা (ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ) নির্মাণ করেন। সুলতানের শিল্পকর্ম ছিল বাংলার কৃষক, কৃষাণী, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওড়,বাওড়,জঙ্গল,সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি।

এসএম সুলতান চিত্রাপাড়ের লালমিয়া শিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া ১৯৮২ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা পান। সুলতানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য শিল্পীর মৃত্যুর পর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শিল্পীর বাসভবন সংলগ্ন দুই একর ৫৭ শতক জমির ওপর নির্মিত হয়েছে এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।

দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রামের নিজ বাড়ির আঙিনায় তাকে শায়িত করা হয়।

সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এসএম সুলতানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুলতান সংগ্রহশালা চত্বরে আজ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কোরআন পাঠ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিল্পীর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা, শিশুস্বর্গ মিলনায়তনে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও পুরস্কা বিতরণ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত