চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০১৬, ১৬:২৬

সাহস ডেস্ক

১০ অক্টোবর সোমবার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৪ সালের এই দিনে যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীকে নড়াইলের মাছিমদিয়ায় চিত্রাপাড়ে শিল্পীর বাসভবন চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এসএম সুলতান ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের শ্যামল ছায়াঘেরা চিত্রা পাড়ের মাছিমদিয়া গ্রামের দরিদ্র রাজমিস্ত্রি মেছের আলীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের নাম মাজু বিবি। মা বাবা আদর করে তাঁর নাম রাখেন লাল মিয়া।

এসএম সুলতান ১৯৪১ সালে কোলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে প্রথম স্থান লাভ করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহযোগিতায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র হয়েও তিনি কোলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে যান এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বাসায় থেকে কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পান।

কয়েক বছর পর একঘেয়েমি শিক্ষাজীবন তাকে দুর্বিষহ করে তোলে। এরপর ১৯৪৩ সালে তিনি খাকসার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। একবছর পর ১৯৪৪ সালে শিক্ষা জীবনের ইতি টেনে শুরু করলেন বোহেমিয়ান জীবন। চলে গেলেন কাশ্মীর। সেখানে উপজাতিদের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। সে সময় হার্ডসন নামে এক কানাডিয়ান মহিলার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। তার সহযোগিতায় ১৯৪৬ সালে কাশ্মীরের সিমলায় তার প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয়। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে তিনি কাশ্মীর ছেড়ে লাহোরে চলে যান। সে সময় শিল্পী ও পণ্ডিত নাগী চুগড়তাই, শাকের আলী, শেখ আহম্মদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। ১৯৪৮ সালে লাহোরে ও ১৯৪৯ সালে করাচির ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের চিত্র প্রদর্শনীতে তিনি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন।

এসএম সুলতান ১৯৫০ সালে নিউইয়র্কে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে ব্রকলিন ইনস্টিটিউট অব আর্ট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের পক্ষে অংশ নিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় ২০টি প্রদর্শনীতে অংশ নেন তিনি। ১৯৫৩ সালে তিনি ফের দেশে ফিরে আসেন। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি কোনো প্রদর্শনী করতে পারেননি। তবে ১৯৭৬ সালে ঢাকায় তার একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

এই ২১টি বছর তিনি নড়াইলের পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়ে ছিলেন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি ছাত্রছাত্রীদের ছবি আঁকায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি নিজ গ্রামে নন্দন কানন প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল, ফাইন আর্ট স্কুল, ১৯৬৯ সালে নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে ফাইন আর্ট স্কুল এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী ১৯৭৩ সালে যশোরে একাডেমি অব ফাইন আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যশোরের ফাইন আর্ট স্কুলটি পরে চারুপীঠ নামে পরিবর্তন করা হয় এবং কুড়িগ্রামের ফাইন আর্ট ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে শিশুস্বর্গ নামকরণ করা হয়।

এসএম সুলতান ১৯৮৩ সালে প্রথম সরকারের সহযোগিতা পান। জীবনের শেষকটা দিন তিনি তার প্রিয় জন্মস্থান নড়াইলেই বসবাস করেন তার প্রিয় পশুপাখি ও ভালবাসার মানুষদের নিয়ে। হেয়ালী শিল্পী শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের শিশুস্বর্গ। সরকারি সহযোগিতায় নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে চিত্রা নদীর পাড়ে ২ বিঘা জমিতে তার বাসভবন নির্মাণ করা হয়। নড়াইলের মাটি, প্রকৃতি আর মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জীবনের শেষকটা দিন অতিবাহিত করেন।

শিল্পী সুলতানের আঁকা ছবি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হয়েছে। ১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলা, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোর ও করাচি, ১৯৫৯ সালে লন্ডন, নিউইয়র্ক, বোস্টন, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে, ১৯৮৭ সালে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকায় এবং ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের খ্যাতনামা ৯ জন চিত্রশিল্পীর সঙ্গে যৌথ প্রদর্শনী ছাড়া দেশে-বিদেশে আরও অনেকবার চিত্রপ্রর্দশনী অনুষ্ঠিত হয়।

শিল্পী সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য পদকে ভূষিত হয়েছেন।

এদিকে নড়াইলে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হচ্ছে এসএম সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কোরআনখানি, শিল্পীর কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনাসভা, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত