লক্ষ্মীপুরে উৎপাদন হচ্ছে ৩’শ কোটি টাকার সুপারি

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:৩০

মিসু সাহা নিক্কন

সুপারির রাজধানী হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিচিত। কৃষি জমির পাশে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় সুপারি গাছ রোপন করে প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে ৩’শ ২৫ কোটি টাকার সুপারি। অর্থকারী এ ফসলকে ঘিরে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে বিরাট অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। উৎপাদিত এ ফসলের বাজার দর ভালো থাকায় সুপারি চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এখানকার মানুষের। সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোক্তরা এগিয়ে আসলে এখানকার উৎপাদিত সুপারি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি সুপারি নির্ভর শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হলে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন জেলাবাসী।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জেলায় প্রতি বছর ৬ হাজার ২৬৫ হেক্টর ভূমিতে সুপারি বাগান করা হয়। যার বাজার মুল্য ৩’শ ২৫ কোটি টাকা। এবার প্রতি (১২৮০ পিছ) এক ক্রাউন সুপারি প্রথমদিকে ১৫-১৬ ‘শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলায় সব চাইতে বেশী সুপারি উৎপাদন হয় রায়পুর, সদর ও রামগতি উপজেলায়। মৌসুমে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সুপারি বিক্রির বাজার বসলেও সদর উপজেলার দালাল বাজার বসে জেলার সবচেয়ে বড় সুপারির হাট। এখানকার উৎপাদিত সুপারি পানের সাথে খেতে বেশ মজাদার হওয়ায় জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিদেশেও যাচ্ছে এ অঞ্চলের সুপারি।
 
সুপারি চাষীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের বৃষ্টির পানিতে সুপারি গাছে ফুল আসে। এরপর এ ফুল থেকে সৃষ্ট সুপারি। আর পুরোপুরি পাকা হয়ে হলুদ রং ধারন করে কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে। মূলত কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসই সুপারির ভরা মৌসুম। আর তখনই সুপারি বিক্রি শুরু করেন সুপারি চাষীরা। এখন এখানকার প্রতিটি বাগানে সুপারির হলুদ রং এর সমরাহ, মাইলের পর মাইল পাকা সুপারির হলুদ রং এ চেয়ে গেছে। এতে হাঁসি ফুটেছে সুপারির বাগান মালিকদের মুখে। তবে গত বছরে তুলনায় এবার সুপারির বাজার দাম কিছুটা কম হওয়া হতাশায় চাষী। গেলে বছর প্রতি ক্রাউন সুপারি বিক্রি হয়েছে ১৮-১৯‘শ টাকায় আর এবার তা বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬‘শ টাকায়।

চাষীরা জানান, সুপারি বাগানের পরিচর্যা, রক্ষণা-বেক্ষণে কৃষি অফিসের কোনো পরামর্শ ও সহযোগিতা সঠিক সময়ে পায় না। এতে করে গাছগুলো দুর্বল হয়ে পড়ায় আশানুরূপ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের দাবী সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ দিয়ে আন্তরিক ভূমিকা রাখবে কৃষি সম্প্রসারন দপ্তর। 

সুপারি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর এ জেলায় লক্ষাধিক মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়। মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে সুপারি ক্রয় করতে ভীড় জমান দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সুপারি ব্যবসায়ীরা ।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সুষ্ঠ রক্ষণা-বেক্ষণ, বেশি বেশি সুপারি গাছ রোপন, কৃষক ও সংশি¬ষ্ট কৃষি বিভাগের লোকজনের আন্তরিক প্রচেষ্টাই পারে লক্ষ্মীপুরে সুপারির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত সুপারি।    

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলায় প্রতিবছর ৩’শ ২৫ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদিত হয়। সঠিক সময়ে সুপারি চাষীরা বাগান পরিচর্যার কারনে এ জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়ে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত