রিজার্ভ চুরির আরও ৩ কোটি ডলারের আশায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:৩২
রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ফেরত দিয়েছে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ। সেই দেশে জব্দ হওয়া আরও তিন কোটি ডলার দ্রুত ফেরত পাওয়া যাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি টিম শুক্রবার (১১ নভেম্বর) এ অর্থ গ্রহণ করেন।
এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রবিবার (১৩ নভেম্বর) ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোঃ রাজি হাসান বলেন, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলারের বেশি অর্থ আমরা সফলভাবে ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছি। সেদেশে আরও তিন কোটি ডলার বাজেয়াপ্ত অবস্থায় রয়েছে। আমরা যেভাবে এগুচ্ছি এবং ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে ইতিবাচক ছাড়া পাচ্ছি, তাতে আশা করি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জব্দকৃত এই অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে।
ডেপুটি গভর্নর জানান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ফিলিপাইনের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য যাবে। তখন জব্দকৃত এই অর্থ ফেরত আনার বিষয়টির আরও অগ্রগতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে ফিলিপাইনের বিভিন্ন ক্যাসিনো থেকে জব্দ করা এসব অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি ম্যানিলার আদালতের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
রাজী হাসান বলেন, আগামী সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে ফেরত পাওয়া অর্থ নিউইয়র্ক ফেডে জমা হয়ে যাবে। এই অর্থের মধ্যে ডলারের অংশটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে নিউইয়র্ক ফেডে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে জমা হবে। আর পেসো অংশটি বাংলাদেশ দূতাবাসের হিসেবের মাধ্যমে নিউইয়র্ক ফেডে জমা হবে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের উদ্ধার হওয়া দেড় কোটি ডলার ফেরত আনতে একটি প্রতিনিধিদল ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় যায়। ৮ নভেম্বর প্রতিনিধিদলটি ম্যানিলায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে অর্থ ফেরত আসা নিয়ে আলোচনা করে।
ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ আগেই জানিয়েছিলেন, একটি ক্যাসিনোর মালিক কিম অং এবং তাঁর ইস্টার্ন হাওয়াই লেজার কোম্পানির ফেরত দেওয়া ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল।
ক্যাসিনো মালিক অং দুই দফায় এক কোটি ডলারের বেশি ফেরত দেন, যা তিনি দুজন চীনা জুয়াড়ির কাছ থেকে নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন।
গত সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনের আদালত বাংলাদেশ ব্যাংককে এই এক কোটি ৫২ লাখ ডলারের মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপরই বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয়।
এর মধ্যে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) সরিয়ে নেওয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। আর একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভূয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
রিজল ব্যাংকে যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এর মধ্যে ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেওয়া দেড় কোটি ডলার পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে গত আগস্ট মাসে ম্যানিলায় যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক (চুক্তিভিত্তিক) দেবপ্রসাদ দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।