জানুয়ারির মধ্যে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে বিডা

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:০১

সাহস ডেস্ক

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে জানুয়ারির মধ্যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) মাঠে নামছে।

২০২১ সালের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবসায় পরিবেশের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬ ধাপ এগিয়ে কী করে প্রথম ১০০ দেশের তালিকায় আনা যায়, তার পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিডা, যে প্রতিষ্ঠানের উপর রয়েছে দেশের বিনিয়োগের গতি বাড়ানোর ভার।

এ লক্ষ্যে বিডার উদ্যোগে শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার জ্যোষ্ঠ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যবসা-বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ তাদের চাওয়া তুলে ধরেন সভায়। আইনি জটিলতাসহ অন্যান্য বাধা দূর করতে কী করা যায় সে বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে দুই ধাপ অগ্রগতি করেছি। আরও উন্নতি করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য ভালো জায়গা।

এ লক্ষ্য ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের খসড়া অ্যাকশন প্ল্যান আগামীকাল সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ে চলে যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে এটা চূড়ান্ত করে জানুয়ারি থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।

বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৭’ প্রতিবেদনে ব্যবসা করার পরিবেশের দিক দিয়ে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬ নম্বরে। গতবছর এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান  ছিল ১৭৮ নম্বরে।

কাজী আমিন বলেন, তাদের লক্ষ্য কয়েক বছরের মধ্যেই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কে অর্থাৎ একশর নিচে নিয়ে আসা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও দুই অঙ্কে নিয়ে যাওয়া।

এবিষয়ে মতামত নিতেই যৌথসভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কে নিয়ে আসাটা প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া, আমাদেরও চাওয়া। এটা ‘অ্যাগ্রেসিভ’ লক্ষ্য, তবে অসম্ভব না। ২০২১ সালের মধ্যেই আমরা এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই।

এর জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন মুখ্য সচিব।

এসময় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে রুয়ান্ডাসহ বিভিন্ন দেশের উন্নতির উদাহরণ টেনে বলেন, তারা পেরেছে, আমরাও অবশ্যই পারব।

দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়নে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারিকরণ কমিশনকে একীভূত করে গঠন করা হয় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। 

এনিয়ে ৯ নভেম্বর(বুধবার) প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিডার প্রথম বোর্ড সভায় বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবসায় পরিবেশের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একশর নিচে নিয়ে আসার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়।

বিডার পরিচালক তৌহিদুর রহমান খান বলেন, বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্স ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।

ওই সব সিদ্ধান্তের আলোকেই বোর্ড সভার ১০ দিনের মাথায় আগামী শনিবার এই যৌথসভা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ করিম বেলায়েচি।

তিনি ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। তার মতে, এজন্য যেসব সংস্কারের প্রয়োজন সেগুলো উচ্চ পর্যায় থেকে আসতে হবে এবং তাদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।

এছাড়া ‘ইনস্টিটিউশনাল মেকনিজম’ প্রতিষ্ঠা, পরিবেশের উন্নয়নে যেসব সুপারিশ সেগুলোর বাস্তবায়ন ও কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের ওপর জরিপ চালিয়ে দশটি মাপকাঠির বিচারে ডুয়িং বিজনেস সূচক প্রকাশ করে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ। এই মাপকাঠিগুলো হল- নতুন ব্যবসা শুরু করা, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি পাওয়া, বিদ্যুৎ সুবিধা, সম্পত্তির নিবন্ধন, ঋণ পাওয়ার সুযোগ, সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন সহজ করা।

চলতি বছরের প্রতিবেদনে এর মধ্যে দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও চার ক্ষেত্রে অবনমন ঘটেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কেবল আফগানিস্তানের অবস্থানই বাংলাদেশের নিচে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে তাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ৪০৪ দিন লাগে। কেন এত সময় লাগবে?”
সহজে কীভাবে ব্যবসা করা যায় সে পরিবেশ নিশ্চিতের পথ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রুপালী চৌধুরী বিভিন্ন আইনি জটিলতার কথা তুলে ধরে বলেন, আইনের একটি ধারার অনেক রকম ব্যাখ্যা থাকে। আইনের এ ধরনের জটিলতা দূর করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃজহিরুল হক জানান, একই জায়গা থেকে যাতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব সেবা দেওয়া যায় (ওয়ানস্টপ সার্ভিস) সে লক্ষ্যেএকটি আইন করছেন তারা। 

অনেক ক্ষেত্রেই বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে যাচ্ছে বলেও আলোচনায় উঠে আসে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত