ধূম্রজালে টাঙ্গাইলের পাট পণ্যের উদ্যোক্তারা

প্রকাশ | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৫১

তপু আহম্মেদ

চরম হতাশা আর ব্যবসায়ীক সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে টাঙ্গাইলের ২৫০ বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইল এর কার্যালয় নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হওয়ায় হুমকির মুখেও পড়েছে তাদের বিনিয়োগ।

জানা যায়, দেশের প্রচলিত পাট পণ্যের চাহিদা ও দ্রুত মূল্য-হ্রাসের প্রেক্ষাপটে পাট শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রচলিত পাটপণ্য সামগ্রীর পাশাপাশি উচ্চমূল্য সংযোজিত বহুমুখী পাট পণ্য উৎপাদনসহ দেশে-বিদেশে ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০২ সালে ইউরোপীয় কমিশনের অর্থায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে “জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার” (জেডিপিসি) গড়ে তোলা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জেডিপিসি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা তৈরি, প্রযুক্তি সরবরাহ ও বিপণনে সহায়তা দিচ্ছে। পাটের বহুমাত্রিক ব্যবহার ও বহুমুখীকরণের মাধ্যমে পাট শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার টেকশই উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম বিস্তৃতির অংশ হিসেবে ২০১২ সালে টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সেবা কেন্দ্রটি চালুর পর থেকে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জামালপুর ও শেরপুর এর ২৫০ জন বেসরকারি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এই উদ্যোক্তারা পাট পণ্যে তৈরি ও বাজারজাত করতে বিনিয়োগ শুরু করে লাভবানও হচ্ছে।

দীর্ঘ চার বছর ধরে বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় উদ্যোক্তারা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ায় এই শিল্পে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনাও। 

কিন্তু হঠাৎ করেই টাঙ্গাইল কেন্দ্রটি জামালপুরে স্থানান্তর করার খবরে চরম হতাশা আর ব্যবসায়িক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। খবরটি উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারা কেন্দ্রটি স্থানান্তর না করার জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে কেন্দ্রটি স্থানান্তর বন্ধে টাঙ্গাইল জেলার ৪০ লক্ষ্য মানুষের পক্ষে উদ্যোক্তা ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা মানববন্ধনসহ প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।

বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইল কার্যালয় নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হওয়ায় হুমকির মুখেও পড়েছে তাদের বিনিয়োগ।

ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) টাঙ্গাইল এর সেন্টারটি স্থানান্তর না করার দাবি জানিয়েছে উদ্যোক্তারা।

পারমিতা উইমেন্স ওয়ার্ল্ডের পরিচালক ও বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা ডা. সাহিদা আক্তার বলেন, এই কেন্দ্রটি আমাদের টাঙ্গাইলের সম্পদ। এটা চলে গেলে আর হবে না। টাঙ্গাইলের নারী উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই পাট পণ্য নিয়ে কাজ করছে। তারা পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে এই কেন্দ্রটি থেকে নানা ধরনের ডিজাইন সংগ্রহ করছে। কিন্তু কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত হলে টাঙ্গাইলের সকল নারী উদ্যেক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা নতুন কোন ডিজাইনের পণ্য তৈরি করতে পারবে না। এই পণ্যর শো-রুম গুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে এক দিকে এই শিল্পের সাথে জড়িতরা আর্থিক ও ব্যবসায়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে সম্বাবনাময় এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে নারী উদ্যোক্তারা। 

এই কেন্দ্রটি চলে গেলে নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রযুক্তি সরবরাহ ও পণ্য বিপণন সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ফ্যাশনের শপিং ব্যাগ, লেডিজ ব্যাগসহ অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য পাটপণ্য তৈরি হলেও আমরা আর আগের মত দেশ-বিদেশের মেলা গুলোতে আর অংশ নিতে পারবো না।

এই শিল্প ও নারী উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে তিনি এই কেন্দ্রটি স্থানান্তর বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অন্যান্য উদ্যোক্তারা বলেন, জেইএসসি টাঙ্গাইল থেকে বহুমুখী পাটপণ্য বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতা কর্মশালা, দক্ষতা ও উচ্চ দক্ষতা প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন ও ফ্যাশনের শপিং ব্যাগ, লেডিজ ব্যাগসহ অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য পাটপণ্য তৈরি ও বিক্রয় করে আসছি। কিন্তু এই মুহুর্তে টাঙ্গাইল সেবা কেন্দ্রটি স্থানান্তর করা হলে এ শিল্পের সাথে জড়িত আমরা সবাই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। সেই সাথে সম্ভাবনাময় এ শিল্পটিও ধ্বংসের মুখে ধাবিত হবে।

টাঙ্গাইল কেন্দ্রের ইনচার্জ দিদারুল হক জানান, আমি প্রধান কার্যালয়ে চিঠির মাধ্যমে টাঙ্গাইল কেন্দ্রের সকল তথ্য জানিয়েছি। সেই সাথে অফিস এর চুক্তিপত্র নবায়নের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত চেয়েছি। কিন্তু বিষয়টি এখন প্রধান কার্যালয়ের অধীনে। তবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রটি স্থানান্তর হচ্ছে কিনা এ ধরনের কোন অফিসিয়াল পত্র আমরা পাইনি।