রিজার্ভ চুরির অর্থ আদায়ে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করবে

প্রকাশ | ১৪ মে ২০১৭, ১৬:০৯

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রায় এক বছর ধরে তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে এই চুরির সঙ্গে জড়িত বিদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিতও করেছে সিআইডি। ওইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিদেশি নাগরিকদের জাতীয়তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। তাদের বিস্তারিত পরিচয় পেয়েছি। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যার যতটুকু দায়, সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। এর পর  গ্রেপ্তারের জন্য তাদের নিজ নিজ রাষ্ট্রসহ ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলো দোষীদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হলে, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের মাধ্যমে অর্থ ফেরত চেয়ে সুপারিশ করা হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলো সহযোগিতা না করলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ অন্যান্য সংস্থায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হবে। মানি লন্ডারিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের নিজ নিজ দেশের সরকার আমাদের সহযোগিতা করতে বাধ্য। না হলে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে ওইসব দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করব। ওইসব রাষ্ট্রের কাছে আমরা অর্থ ফেরত চাইব।’

তদন্ত সূত্র জানায়, দেশি-বিদেশি অন্তত ৮০ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি। তাদের মধ্যে বিদেশি রয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ জন। বাংলাদেশেও আছে ১১ জন। বিদেশিদের মধ্যে ৩০ জন ফিলিপাইনের, ২৩ জন চীনা, সাতজন শ্রীলঙ্কান ও একজন জাপানের নাগরিক রয়েছেন। এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। অভিযোগপত্র দাখিলের আগে আরও বাড়তে পারে।

নাম প্রকাশ না করে সিআইডি একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) অনৈতিকভাবে টাকা বের করে দিয়েছে। আমরা তা প্রমাণ করেছি।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে হ্যাকাররা। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার গ্রাহকের নাম ভুল করায় শ্রীলঙ্কায় আটকে যায়। পরে তা ফেরত আনা হয়। বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলার যায় ফিলিপাইনের একটি বেসরকারি ব্যাংকে। সেখান থেকে ক্যাসিনো হয়ে হংকংয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয় ওই অর্থ। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় গত ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক যুবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ইন্টারপোল ওই মামলা তদন্তে পুলিশকে সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। অভিযুক্ত নাগরিকদের দেশগুলোও তদন্ত করছে।

পুলিশ জানায়, ফিলিপাইনের ৩০ নাগরিকের মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা, অর্থগ্রহণকারী ও সুবিধাভোগী ব্যক্তিরাও রয়েছেন। চুরির অর্থ ফিলিপাইনের ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পর চলে যায় ২৩ জন জুয়াড়ির হাতে। তারা সবাই চীনা নাগরিক। ফিলিপাইনের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কাউন্সিল (এএমসিএল) সবার নাম-ঠিকানা সিআইডিকে দিয়েছে।

সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ‘ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের (আরসিবিসি) কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে যেসব কথাবার্তা বলেছেন, তা ছিল চোরের মতো। এছাড়া অপরাধটি আন্তঃদেশীয় হওয়ায় তদন্তের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে না। রাষ্ট্রগুলো তাদের নাগরিকদের অপরাধ আড়াল রাখতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা আদায়ে বাধ্য করছি।’

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায় না করা গেলে, রাষ্ট্রকে অর্থ দিতে বাধ্য করা যাবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘কোনও রাষ্ট্র সরাসরি অর্থ দিতে বাধ্য নয়। তবে  দেশের মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানা করে সে অর্থ ফেরত দিতে পারে। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পলাতক থাকে, তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেও টাকা আদায় করা যায়। এই প্রক্রিয়াতেই এগোতে হবে।’

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম বলেন, ‘আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সময়মতো সবকিছু দেশের নাগরিকদের জন্য প্রকাশ করব। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বলার সময় হয়নি।’