সংসদে শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকা দিলেন অর্থমন্ত্রী

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০১৭, ১৩:১৬

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) তালিকা অনুযায়ী দেশের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১০ জুলাই (সোমবার) সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে তিনি এই তালিকা তুলে ধরেন। এর আগে বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। 

সরকারি দলের সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। একই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তথ্য সংসদে তুলে ধরেন। যার মধ্যে দু'জন ব্যক্তি। বাকি ৯৮টি প্রতিষ্ঠান। তবে এ তালিকায় জাতীয় পার্টির নেতা শওকত চৌধুরীর মালিকানাধীন নীলফামারীর সৈয়দপুরের বিসিক শিল্পনগরীর যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যালস ও আলোচিত খাজা সোলেমানের বিসমিল্লাহ টাওয়েলসের নাম দুইবার উল্লেখ করা হয়েছে। 
 
খেলাপির তালিকায় অন্য যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের দাদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইলিয়াছ ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেড। বন্ধ এ কোম্পানিটি প্রায় এক হাজার কোটি টাকার খেলাপি। এরপরেই রয়েছে চট্টগ্রামের নূরজাহান গ্রুপের মালিকানাধীন জেসমিন ভেজিটেবল ও মেরিন ভেজিটেবল অয়েল। চট্টগ্রামভিত্তিক আরেক প্রতিষ্ঠান নূরজাহান সুপার অয়েল রয়েছে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তালিকায়। ঋণ কেলেঙ্কারিতে আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেড রয়েছে শীর্ষ খেলাপির তালিকায়। এ গ্রুপের হলমার্ক ফ্যাশনও রয়েছে। হলমার্কের বেতনভুক্ত কর্মচারী জাহাঙ্গীরের কোম্পানি আনোয়ারা স্পিনিং খেলাপি। হলমার্ক কেলেঙ্কারির আলোচিত ছয় প্রতিষ্ঠানের একটি টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামও রয়েছে। 

ঋণখেলাপির তালিকায় আরও রয়েছে ব্যবসায়ী টিপু সুলতানের মালিকানাধীন টিআর ট্রাভেলসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্রেডিং হাউস। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের মোস্তফা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এম এম ভেজিটেবল অয়েল এবং সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবস্থিত জাহাজ ও নৌযান নির্মাণকারী এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড খেলাপি। বিএনপির সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ খান মুন্নুর মালিকানাধীন মুন্নু ফেব্রিক্সও খেলাপি প্রতিষ্ঠান। এনায়েতুর রহমান বাপ্পির মালিকানাধীন চ্যানেল নাইনের মূল কোম্পানি ভারগো মিডিয়া খেলাপি। জসিম আহমেদের মালিকানাধীন শফিপুরের ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স রয়েছে খেলাপিদের শীর্ষ তালিকায়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মুজাহের হোসেনের কোম্পানি ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ খেলাপি।

আলোচিত বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস, চট্টগ্রামের জাহাজভাঙ্গা শিল্প ব্যবসায়ী নাজিমুদ্দীন চৌধুরীর এস কে স্টিল, খাতুনগঞ্জের জয়নাল আবেদীনের ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল ও ম্যাক শিপ বিল্ডার্স, আসবাবপত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অটবীর কোয়ান্টাম পাওয়ারস সিস্টেমস, মাদারীপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আবুল কালাম হাবীবের তানিয়া এন্টারপ্রাইজ, বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমের ভাই ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন রহমান স্পিনিং মিলস এ তালিকায় রয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের আলোচিত খেলাপি মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন মুন বাংলাদেশ অন্যতম খেলাপি। বেসিক ব্যাংকের আলোচিত ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান টেকনো ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, মা টেক্স ও ডেল্টা সিস্টেম এসেছে এ তালিকায়। সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে বিনিয়োগ করে আলোচিত প্রতিষ্ঠান হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থাও এসেছে শীর্ষ খেলাপির তালিকায়। দুদকের মামলায় কারাবন্দি মো. ইসলাম উদ্দিনের হাজী ইসলাম উদ্দিন স্পিনিং মিলস, রাজ্জাকুল হোসেন টুটুলের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার গ্রামবাংলা এমপিকে ফার্টিলাইজার অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে শীর্ষ তালিকায়। খুলনার ব্যবসায়ী এস এম এমদাদুল হোসেন বুলবুলের মালিকানাধী সোনালী জুট মিলস রয়েছে খেলাপির তালিকায়। 

এ ছাড়া সাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল, সালেহ কার্পেট মিলস লি, চৌধুরী নিটওয়্যারস, রনকা শোয়েল কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, এস স্পিনিং লাইন, টেলি বার্তা, কটন করপোরেশন, এক্সপার টেক, এমবিএ গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, ওয়াল মার্ট ফ্যাশন, ওয়ান ডেনিম মিলস, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, হিমালয় পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, এমদাদুল হক ভূইয়া, এম কে শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড স্টিল্স, রনকা ডেনিম টেক্সটাইল মিলস, বিশ্বাস গার্মেন্টস, মাস্টার্ড ট্রেডিং, হিন্দুল ওয়ালি টেক্সটাইল, ইসলাম ট্রেডিং কনসোর্টিয়াম, কেপিট্যাল বনানী ওয়ান, অর্জন কার্পেট অ্যান্ড জুট ওয়েভিং, এ জামান অ্যান্ড ব্রাদার্স, অরনেট সার্ভিসেস, দোয়েল অ্যাপারেল, আশিক কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্স, এইচআর স্পিনিং মিলস, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, তাবাসসুম এন্টারপ্রাইজ, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, দ্য ওয়েলটেক্স, ডেল্টা সিস্টেমস, জাহিদ এন্টারপ্রাইজ, মুজিবুর রহমান খান, নিউ রাখী টেক্সটাইলস মিলস, আলী পেপার মিলস, অলটেক্স ইন্ডাাস্ট্রজ, নর্দান ডিস্টিলারিজ, লাকি শিপ বিল্ডার্স, মাকসুদা স্পিনিং মিলস, শাপলা ফ্লাওয়ার মিল্স, সিদ্দিক অ্যান্ড কোম্পানি, মনোয়ারা ট্রেডিং, একে জুট ট্রেডিং কোং, মাহাবুব স্পিনিং, আলামিন ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট, প্রফিউশন টেক্সটাইল, মা টেক্স, সুপার সিক্স স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, টেকনো ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ন্যাম করপোরেশন, জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পিএ, সর্দার অ্যাপারেল্স, জেড অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্বাস টেক্সটাইলস, মডার্ন স্টিল মিল, নিউ অটো ডিফাইন, অনিকা এন্টারপ্রাইজ, ডি আফরোজ সোয়েটার ইন্ডা, মোবারক আলী স্পিনিং মিলস, আফিল জুট মিলস, রেজা জুট ট্রেডিং, আর কে ফুডস, আলফা টোব্যাকো ম্যানুফ্যাক্সারিং কোং, ফেয়ার এক্সপো ওয়েভিং মিলস, ফেয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার এবং ফিয়াস এন্টারপ্রাইজ রয়েছে অর্থমন্ত্রীর তালিকায়। 

চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দৈনিক ৮৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে। মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০০৯-১০ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা থেকে দুই হাজার ৪৫৫ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে করদাতার সংখ্যা ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৩ জন। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নে মুহিত জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ৩৭২৫টি শাখার মধ্যে ৩২৮১টি শাখা (৮৮%) গ্রাহকদের পরিপূর্ণ অনলাইন সেবা প্রদান করছে।

জাতীয় পার্টির এ কে এম মাঈদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশ থেকে ১৪ হাজার ৯৩১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। একই অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ৩৭ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠানো হয়। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত