শরীয়তপুরের মৃৎশিল্প বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০১৮, ১১:০৯

সাহস ডেস্ক

শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুরের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য শত বছরের। গত প্রায় ৩৪ বছর যাবত কার্তিকপুরের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ও সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিশ্বব্যাপী। এখানকার উৎপাদিত মাটির পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বিশ্বের অনেক দেশে সুনাম কুড়িয়েছে। বছরে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে এ শিল্পের হাত ধরে। তবে সরকারি-বেসরকারি কাংখিত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামের পালপাড়ার মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের। প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের ৫ শতাধিক মৃৎশিল্পী এ কাজের মাধ্যমে এ শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। ১৯৮৩ সাল থেকে পোটারী (রপ্তানীকৃত মৃৎশিল্প পণ্য) পণ্যের মাধ্যমে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এখানে তৈরি হয় বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী, ফুলের টব, মোমদানি, ফুলদানি, চামিচদানি, পেস্টদানি, ব্রাশদানি, ফুলদানিসহ সহস্রাধিক মাটির পণ্য। আর এরই মাধ্যমে প্রতি বছর পোটারী পণ্যের মাধ্যমে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আসতে শুরু করে। কিন্তু গত ৩ বছর থেকে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ও দেশ বিদেশের প্লাস্টিক পণ্যের আগ্রাসনে এ শিল্পটি এখন রুগ্ন শিল্পে পরিণত হতে যাচ্ছে। পূর্ব পুরুষদের ধারাবাহিকতায় এ কাজ করলেও এখন আর তেমন জম জমাট অবস্থা নেই এ মৃৎশিল্প সংশ্লিষ্টদের। তাই পরিবেশ বান্ধব এ মৃৎ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ও লাভজনক করতে সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ দেশীয় এবং বিশ্বব্যাপী বাজার তৈরির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এখানকার মৃৎশিল্পীরা।

কার্তিকপুর পাল পাড়ার নতুন সৃষ্টি মৃৎশিল্পের স্বত্তাধিকারী প্রদীপ পাল বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে আমাদের গ্রামের ৪ টি মৃৎশিল্পের মাধ্যমে প্রতি বছর আমরা কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছিলাম। তখন আমাদের গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবারের ৫শ’রও বেশী মৃৎশিল্পী এ কাজের সাথে জড়িত ছিল। কিন্তু গত ৩-৪ বছর থেকে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের রপ্তানীর পরিমাণ কমে আসছে। এর আগে আমরা প্রতি বছর প্রতিটি মৃৎশিল্প থেকে ২৫-৩০ লক্ষ টাকার মাটির পণ্য বিদেশে রপ্তানী করতাম। বর্তমানে অর্ডার কমে যাওয়ায় সেই রপ্তানীর পরিমাণ কমে এখন বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। সরকার যদি সঠিক পরিচর্যার করে আমাদের রপ্তানীর সুযোগ সম্প্রসারিত করে তাহলে আমরা আগের চেয়েও বেশি রপ্তানি করতে সক্ষম হবো।

একই গ্রামের মৃৎশিল্পের স্বত্তাধিকারী জহরলাল পাল বলেন, রপ্তানী করার পর থেকে আমরা ভালই ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে গত চার বছর থেকে বায়াররা আগের মত মাটির পণ্য আমাদের কাছ থেকে নিচ্ছেন না। ফলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণও কমে আসছে। তাই সরকারের তত্ত্বাবধানে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পোটারীর রপ্তানীকল্পে কার্যকর উদ্যোগ নিলে আবারও কার্তিকপুরে মৃৎশিল্পের সুদিন ফিরে আসবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, কার্তিকপুরের মৃৎশিল্পের সুনাম শুধু দেশেই নয় এর ঐতিহ্য দেশ ছাড়িয়ে উন্নত বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ শিল্পের সাময়িক সংকট সমাধানকল্পে আমরা ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়ের মাধ্যমে বিদেশী ক্রেতাদের সরাসরি সম্পৃক্ত করতে ও দেশীয় বাজার সম্প্রসারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়ে পত্র দিয়েছি। এ ছাড়াও মৃৎশিল্পীদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা স্থানীয় এবং জাতীয় এনজিওর সাথে সমন্বয় পূর্বক প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত