মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি

১ বছর পাথর উত্তোলন বন্ধ, ক্ষতি ১৮ কোটি টাকা

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৯:০০

দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল পাথরখনি পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোং লিমিটেডে গত ১ বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এরফলে খনিটিতে ইতোমধ্যে প্রতিমাসে দেড় কোটি টাকা করে ১ বছরে ১৮ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। খনির ইয়ার্ডে মজুদ সব ধরনের পাথর বিক্রি শেষ হয়েছে ৮ মাস আগে। অন্যদিকে, খনিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ৬০০ শ্রমিক বেতন ভাতার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানা গেছে। 

খনি সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে মধ্যপাড়া পাথর খনিতে পাথর উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ হয়। দেশের একমাত্র সম্ভাবনাময় ভূ-গর্ভস্থ এই পাথর খনিতে উৎপাদন শুরু হয় ২০০৭ সালের ২৫ মে। সেময় খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছিল উত্তর কোরিয়ার নামনাম। নামনাম চলে যাওয়ার পর বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানীয়া ট্রেস্ট করপোরেশন (জিটিসি) ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি খনির দায়িত্ব নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করে। জিটিসি ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৬বছরে ৯২ লাখ মেঃটন পাথর উত্তোলনের চুক্তি করে। তবে তারা ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯২ লাখ মেঃটন পাথর উত্তোলন করতে সক্ষম হয়। 

এদিকে, গত ১৫ আগষ্ট (জিটিসি) মধ্যপাড়া পাথর খনিতে আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী পালন উপলক্ষে এক আলোচনা সভা শেষে খনি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে ছিলেন সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে খনিতে পুনরায় উত্তোলন শুরু হবে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (২৪ সেপ্টেম্বর) খনি সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টস সংযোজন ও স্থাপন শেষ হয়নি। স্টোপ উন্নয়ন শেষ করে পাথর উত্তোলন শুরু করতে আরও এক মাস পেরিয়ে যাবে। সে হিসেবে আগামী অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পাথার উত্তোলন শুরু হতে পারে বলে খনি সূত্রে বলা হয়েছে।
 
খনির একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ১৪৪ কোটি টাকার মাইনিং ইকুইপমেন্ট আমদানীর জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে এক চাহিদাপত্র প্রদান করে জিটিসি। সে সময় যন্ত্রপাতির বাজার মূল্য ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা নিয়ে খনি কর্তৃপক্ষের সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার হস্তক্ষেপে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি টাকায় ইকুইপমেন্টস বিদেশ থেকে আমদানীর উদ্যোগ নেয় মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনি কর্তৃপক্ষ। 

এসময় জিটিসির অনুকুলে ৩৬টি এলসি খোলা হয় প্রায়াজনীয় সব ইকুইপমেন্টের জন্য। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে উল্লেখিত সব ইকুইপমেন্টস এর মধ্যে ৩০টি এলসির মালামাল আসার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি তা আনতে পারেনি। জিটিসির একটি সূত্র জানায় মূল খননযন্ত্র রেইজ বোরিং মেসিনসহ ২১টি এলসির মালামাল খনিতে এসে পৌছেছে। ৪টি এলসির মালামাল চট্রগ্রাম পোর্টে ও ১টির যন্ত্রপাতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছেছে।

এদিকে, দেশে সবচেয়ে বড় সেতু নির্মানের কাজ চলছে পদ্মায়। পদ্মা সেতুতে এখানকার পাথর বিক্রির সমুহ সম্ভাবনা থাকা সত্বেও তৃতীয় কোন পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় কোনরুপ ষড়যন্ত্রের কারণে পাথর উত্তোলন বিলম্ব করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত টিম গঠনের দাবি করেছে মধ্যপাড়া খনি সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষেরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে দেশীয় উন্নত মানের পাথর পদ্মা সেতু নির্মানে ব্যবহারে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টির পেছনে শক্ত কোন হাত থাকা অস্বাভাবিক নয়। এসব ব্যক্তি আরও বলেন, দেশে নদীশাসন, সেতু নির্মান, ভবন নির্মান, সড়ক নির্মানসহ সকল নির্মান কাজে পাথর ব্যবহার ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে পাথর আমদানী করে চাহিদা পূরন করতে হয়। মধ্যপাড়ার পাথর উন্নত মানের হওয়া সত্বেও অতীতে দেখা গেছে উত্তোলনকৃত পাথর বিক্রি আশানুরূপ না হওয়ায় মজুদ বৃদ্ধি পেয়ে খনি ইয়ার্ডে স্থান সংকুলান হতো না। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত