বৈশাখী আমেজ রাবির মতিহার চত্বরে

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৫৮

রাবি প্রতিনিধি

দিব্য প্রাণে লাগুক দোলা নববর্ষের রঙে রঙে স্লোগানে ১৪২৩ বর্ষকে বিদায় দিয়ে নতুন বর্ষ ১৪২৪ কে বরণে প্রস্তুত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। নতুন বর্ষকে স্বাগত জানাতে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপিঠে চলছে জোর প্রস্তুতি। সারা দেশের মত বৈশাখী আমেজে প্রস্তুত রাবির মতিহার চত্বর। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠেছে প্রাণের উচ্ছ্বাসে।

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিভিন্ন বিভাগ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বর্ষ উদযাপনে গ্রহণ করেছে আয়োজনের প্রস্তুতি। বাঙালী জাতির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে ফুটিয়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে আপন মনে। এ যেন বৈশাখী আমেজে রাবির সাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠন পৃথক পৃথক আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত জায়গায় মঞ্চ, ব্যানার, ফেস্টুন তৈরির কাজে ব্যস্ত। এছাড়াও বাঙালী জাতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন জিনিসপত্র। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য চলছে নৃত্য ও আবৃত্তির অনুশীলন। আর সে আয়োজন উপভোগ করতে অধীর অপেক্ষায় রয়েছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের প্রধান আকর্ষণ থাকছে চারুকলা অনুষদকে ঘিরে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গোটা রাজশাহীবাসী পহেলা বৈশাখে একবার হলেও ছুটে আসেন চারুকলা চত্বরে ঐতিহ্যবাহী এ দিনটির আয়োজন উপভোগ করতে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ ৫০ ফুট আকৃতির বিশাল ‘গিরগিটি’। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘বর্ণচোরা’। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার অগ্রভাগে থাকবে এই বর্ণচোরা। এর মাধ্যমে লুকিয়ে থাকা বিশেষ বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।

গিরগিটি তৈরিতে ব্যস্ত একজন শাহিনুর রহমান বলেন, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এই গিরগিটি (বর্ণচোরা)। এছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাহন পালকী ও ময়ূরপঙ্খী নৌকা। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন পেইন্টিংয়ের কাজ চলছে। কয়েক ধাপে পেইন্টিংয়ের কাজ করতে হবে। আশা করি বৈশাখের আমেজকে আরো বাড়িয়ে তুলতে আমাদের এই আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়কে রাঙিয়ে তুলবে।

বর্ণচোরা সর্ম্পকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল মোমেনীন চোধুরী জানান, এই বর্ণচোরার মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে সমাজ বাস্তবতায় মানুষের যেভাবে চরিত্র পাল্টে যায় সেটাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের রঙ পরিবর্তনের যে অভ্যাস দেখি সেটাও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আর বৈশাখের দিনটিকে ঘিরে আমাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি অনুষ্ঠানের একটা উদ্দেশ্য থাকে। আর গ্রামের সাধারণ মানুষ সারা বছর যে দুঃখ-গ্লানিকে মুছে দিয়ে বিভিন্ন রং-চং দিয়ে আনন্দে ভরে  উঠে আমাদের বাঙালি সাংস্কৃতিতে। মানুষের চরিত্রের যেমন রঙ বদলায় ঠিক তেমনিভাবে এ বর্ণচোরাটির রঙ আলপনা দেওয়া থাকবে।

তিনি আরো বলেন, এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপনে প্রায় তিন লক্ষ টাকা বাজেট রয়েছে। এর মধ্যে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান স্পন্সর হয়ে এক লক্ষ টাকা দিচ্ছে। বাকিটা চারুকলা অনুষদকে বহন করতে হবে। আর শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ বিশাল আকৃতির গিরগিটি তৈরি করতে লক্ষ টাকার মত ব্যয় হচ্ছে। এত অল্প পরিমাণ অর্থ দিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পহেলা বৈশাখের আয়োজন বেশ কষ্টসাধ্য বলেও জানান তিনি। এছাড়া বিভিন্ন পাখি, গ্রমীণ পরিবেশের চিত্র তৈরি করা হয়েছে। যেগুলো শোভাযাত্রাকে আরো রাঙিয়ে তুলবে।

চারুকলা অনুষদের অধিকর্তা ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চারকলা অনুষদ এবারও বৈশাখ উৎসব বরণের আয়োজন রয়েছে। প্রথমে সকাল ৮টায় সঙ্গীত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হবে। পরে সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা। দুপুর আড়াইটায় থাকবে অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সমবেত সঙ্গীত, লোক সঙ্গীত ও বাউল সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, হরবোলা, অভিনয় ও বাঙালী ফ্যাশন শো।

এদিকে অন্য বিভিন্ন বিভাগও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নানা আয়োজন হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে বাংলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত বাংলা সমিতি, নাট্যকলা বিভাগ, সঙ্গীত বিভাগ, ফোকলোর বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ, ফিন্যান্স বিভাগ, আইন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়েছে।

চারুকলা অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আসমা আইরিন বলেন, প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখ উপভোগ করবো। খুবই ভালো লাগছে প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বৈশাখকে বরণ করে নিবো। বড় ভাই-আপুদের সঙ্গে কয়েকদিন ধরে কাজ করছি, ভালো লাগছে। আর বৈশাখের দিনে সবাই বন্ধুরা একসঙ্গে লাল-সাদা পোশাকে একত্রিত হবো। সবমিলিয়ে অনেক ভালো লাগছে এবারের বৈশাখী আয়োজনকে সামনে রেখে।

বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা আক্তার বলেন, এবারই প্রথাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করব। ভাবতেই অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছে। বড় ভাইয়া আপুদের কাছে পহেলা বৈশাখে ক্যাম্পাসে ও বিভাগে খুব মজা হয় বলে জেনেছি, দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে আছি।

এদিকে পহেলা বৈশাখের আগের দিন সন্ধ্যায় চৈত্র সংক্রান্তি অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে সন্ধ্যায় চৈত্রের শেষ দিনে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনুষ্ঠান শুরু হবে বলে জানা গেছে।এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব বাংলা বর্ষকে বরণ করে নিতে বৈশাখী কনসার্টের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমচত্বরে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট বৈশাখী উৎসবে গ্রহণ করেছে বিভিন্ন কর্মসূচি। কমসূচির মধ্যে রয়েছে পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরে শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার এর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অপর্ণ, ভোর ৫টায় সূর্যবরণ, সকাল ১০টায় আনন্দ শোভাযাত্রা ও দুপুরে পান্তা-ইলিশে বৈশাখ উদযাপন কর্মসূচি।

জোরদার থাকবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মজিবুল হক আজাদ খান। তিনি আরো বলেন, পহেলা বৈশাখ উদযাপনে যেন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর রয়েছে। এজন্য ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিকেল পাঁচটার মধ্যে সব ধরনের অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশও রয়েছে।

উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও নতুন অভিভাবক নিয়োগ না দেওয়ায় এবার পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক ছাড়া উৎসব করতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈশাখ উৎসব আয়োজন সম্পর্কে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন টিএসএসসি চত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ যোগ দিবে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত