লালমনিরহাটে শিক্ষার্থী ছাড়াই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:৪১

আসাদুজ্জামান সাজু
কছিমপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনসেট ঘর থাকলেও নেই কোনো শিক্ষার্থী

রাতারাতি ঘর ও সাইনবোর্ড তুলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। শিক্ষার্থী না থাকলেও সরকারি বই উত্তোলন ও বিস্কুট তুলে হরিলুট করা হচ্ছে।

লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলছে এনিয়মেই। এছাড়া প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় খোলার সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও জেলার আনাচে কানাচে গড়ে উঠছে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। নামসর্বস্ব ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে শিক্ষা উন্নয়নের নামে চলছে সরকারি চাকুরি পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা।

জানা গেছে, জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দেওদাপাড়া, ঘোনাবাড়ী, পূর্ব জগতবেড়, ইসলামনগর, জমগ্রাম ও রহমতপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানবাড়ী দিঘলটারী, কচুয়ারপাড়, বাংলাবাড়ী তাজিমুদ্দিন জহিরুদ্দিন, টামতলীরহাট মনিরিয়া, রাধানাথ শমসেরীয়া, মস্তবহাট সিদ্দিকীয়, বৈরাগীরহাট স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো কোনো শিক্ষার্থী ছাড়াই কাগজে কলমে চলছে বছরের পর বছর। এ ছাড়া জেলার ৫ উপজেলায় প্রতি ইউনিয়নে ১টি করে আবার কোন ইউনিয়নে ২টি করে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। সব চেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এর বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা ও তার পাশে হাতীবান্ধা উপজেলায়। ওই বিদ্যালয়গুলোতে কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয় অসংখ্যা শিক্ষক। অথচ সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় খোলার সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনো প্রকার প্রয়োজন ছাড়াই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসব স্কুল ও মাদ্রাসা। সবারই চেষ্টা কীভাবে সরকারি করা যায়। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত চলছে জোর লবিং। হাজার হাজার টাকা স্কুল, মাদ্রাসার ফাইল সরকারি করণে নামে খরচ করছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।

পত্রিকায় ব্যাক ডেটে ভুয়া বিজ্ঞাপন, ভুয়া তারিখ, জাল সই, দলিল করে লালমনিরহাট জেলায় ভুয়া স্কুল আর ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা শতাধিক। এ সকল বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শুধু মাঠে একটি টিনের ঘর। অর্থলোভী কিছু ব্যক্তি এগুলোকে স্কুল, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নাম দিলেও দেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোঝার কোনো উপায় নেই। শিক্ষার্থীদের বসার কোনো বেঞ্চ নেই। নেই অফিস কক্ষ। শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। অথচ ৭-৮ বছর ধরে কাগজে- কলমে ওই সকল বিদ্যালয়ে পাঠদান অব্যাহত বলে দেখানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের ভুয়া নাম ব্যবহার করে বছরের শুরুতেই বইসহ শিক্ষা উপকরণ গ্রহণ এমনকি শিক্ষার্থীদের নামে বিস্কুট তুলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলো থেকে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় ২ থেকে ৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেশীরা শিক্ষকদের চিনেন না। দু’ একজন শিক্ষার্থীর দেখা পেলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে চিনেন না। কি ক্লাস নেন, কী নাম সেটিও বলতে পারেন না। অথচ সরকারি করণের চেষ্টায় কাগজে- কলমে বেশ সফলভাবে চলছে প্রাথমিক শিক্ষার স্কুল ও মাদ্রাসাগুলো।

পাটগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম মোস্তফা বলেন, কিছুটা শুনেছি, পুরোপুরি এসব জানি না। আমার অফিসের লোকবল কম। সরে জমিনে বিষয়টি দেখব।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর কুতুবুল আলম বলেন, ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয়েছে এ ধরণের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারপরও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

লালমনিরহাট জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল ইমরান খন্দকার বলেন, ভুয়া শিক্ষার্থী বা অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও যদি কেউ এ রকম করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সাহস২৪/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত