‘শিক্ষার্থীদের টাকায়’ এমপিকে সংবর্ধনা
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:০৯
ময়মনসিংহের একটি কলেজের জাতীয়করণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে সংবর্ধনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন নান্দাইলের শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে কলেজ জাতীয়করণে ‘অসামান্য অবদানের জন্য’ এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনের জন্য ৩০০ টাকা করে দেওয়ার কথা জানালেও তা স্বীকার করেননি অধ্যক্ষ।
শিক্ষার্থীদের টাকায় এভাবে সংবর্ধনার আয়োজনের সমালোচনা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। আর এমপি তুহিন বলেছেন, তিনি না চাইলেও 'জোর করে' সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে তাকে।
প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ জাতীয়করণের সরকারি ঘোষণার অংশ হিসেবে সম্প্রতি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের জাতীয়করণ হয়। এরপর এমপিকে সংবর্ধনা জানানোর উদ্যোগ নিয়ে কার্ড ছাপানোর পাশাপাশি ফেইসবুকে ওই অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির একজন ছাত্র সাংবাদিকদের জানান, সংবর্ধনা উপলক্ষে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নিয়েছেন 'স্যারেরা'।
আরেক ছাত্র বলেন, “কলেজে অনেক গরীব ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তবে এমপি স্যারের সংবর্ধনা বলে স্যারদেরকে টাকা দিয়েছে সবাই।”
কলেজের ২ হাজার ৬৪৮ জন ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হলে মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় আট লাখের কাছাকাছি। তবে সংবর্ধনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন শহীদ স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নাজিম উদ্দিন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষার্থী বা কলেজ ফান্ড থেকে টাকা নিইনি। আমরা শিক্ষকরা মিলেই টাকা দিয়ে আয়োজন করেছি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের “ তবে এ আয়োজনে কত টাকা খরচ হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি অধ্যক্ষ।
অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ-৯ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনকে একটি ক্রেস্ট ও মানপত্র তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক স্বপন চৌধুরী। তিনিও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এটা দুঃখজনক। এটা আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে।”
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে। আমাদের দলীয় সংসদ না হয়ে অন্য দলের সংসদ সদস্য হলেও কলেজ জাতীয়করণ হত। এখানে সংবর্ধনার কী প্রয়োজন? আমি শুনেছি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের দলের জন্য এটা খুবই দুঃখজনক।”
এ বিষয়ে এমপি তুহিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি সংবর্ধনা নিতে চাইনি। কলেজ থেকে আমাকে জোর করে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ টাকা নেওয়ার বিষয়টা জানা নেই আমার।”