বিরতির পর... আবার সুপান্থ প্রদীপ

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:৪০

অভিনয়ের রঙিন জগতে নিত্য নতুন স্বপ্নবাজ তরুন তরুণীর আনাগোনা। অনেকেই অভিনয়গুনে নজর কাড়ছে দর্শকদের। যারা আশান্বিত করছে আমাদের নাটক সিনেমার ভবিষ্যৎ। তেমনই একজন অভিনেতা সুপান্ত প্রদীপ । ২০০৮ থেকে টেলিভিশন মিডিয়ায় পথচলা শুরু করে তারপর দীর্ঘ বিরতির পরে আবার ফিরছেন অভিনয় দ্যুতি ছড়িয়ে। আজকে সাহসের মুখোমুখি সুপান্থ প্রতীক। সাহসের পাঠকদের জন্য সুপান্থ প্রদীপের আদ্যপান্ত তুলে এনেছেন শাহাদাত রাসএল। 

সাহস : শুরুতে শুরুটা নিয়ে শুনতে চাই ...
প্রদীপ : আমার অভিনয়ের শুরুটা ক্লাস এইট থেকে। যশোরে বেত্রাবতী নামে একটা থিয়েটার ছিলো সেখানেই আমার প্রথম যুক্ত হওয়া। ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি ভালবাসাটা বাড়লো। এরপর উদীচীতে ছিলাম। 

সাহস : টেলিভিশনে শুরুটা কিভাবে?
প্রদীপ : টেলিভিশনে আমার অভিনয়ের শুরুটা আবদুল্লাহ আল মামুন স্যারের একজনমে ধারাবাহিক দিয়ে। একজনমে ধারাবাহিকটি ২০০৮ সালে এটিএন বাংলা চ্যানেলে প্রচার হয়। এরপর চিত্র নায়িকা রোজিনা আপার সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করি। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি অভিনয় করি রোজিনা আপার বদনাম ধারাবাহিকে। বদনাম নাটকটি ২০০৯ সালে চ্যানেল আইতে প্রচার হয়। আসলে টেলিভিশনে আমার গুরু হচ্ছেন রোজিনা আপা। 

সাহস : বদনাম ও একজীবনে ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কি কি কাজ করেছেন?   
প্রদীপ : এইগুলো ছাড়া অসীম গোমেজের উদ্দীপন, অতনু আদিত্যের বর্নমালা যোদ্ধা, ইরানী বিশ্বাসের উড়োকথা, সাজিদ হাসান বাবলুর অশ্রু নয়ন তারা, জুয়েল মাহমুদের ধারাবাহিক কুয়াশার ফুল, শামিম জামানের ধারাবাহিক আড়াল, মির সাব্বিরের ধারাবাহিক নোয়াশাল, ধারাবাহিক পরম্পরা সহ আরও কিছু নাতকে অভিনয় করে আনন্দ পেয়েছি। 

সাহস : টেলিভিশনে অভিনয়ের জন্য কি মঞ্চের অভিজ্ঞতা থাকা জরুরী? 
প্রদীপ : আমি মনে করি অবশ্যই মঞ্চের অভিজ্ঞতা থাকা জরুরী। কারণ দেখুন সবকিছুর জন্যই একটা স্কুলিং জরুরী। অভিনয় মানে কেবল দাঁড়িয়ে থেকে ডায়লগ দেয়া না, অভিনয়ের ভেতরে কিন্তু অনেকগুলো বিষয় আছে এখানে বডি মুভমেন্ট আছে, এক্সপ্রেশনের ব্যপার আছে, ক্যারেক্টারাইজেশনের ব্যপার আছে, আবৃত্তি আছে, ছন্দ আছে, তাল আছে। থিয়েটার কিন্তু একজন অভিনেতার এইসব ভিত্তিটা তৈরি করে দেয়। কারণ টেলিভিশনে কাজে নেমে গেলে তো আর আপনি স্কুলিং এর সুযোগ পাবেন না। তাই আমি মনে করি মঞ্চ থেকে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে আসা উচিত। 

সাহস : নতুন যারা অভিনয়ে আসে তাদেরকে কোন কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়?
প্রদীপ : আসলে এক্ষেত্রে আমি বলবো ডিরেক্টরদের কিছু বিষয় আছে যেমন ধরেন কেউ যখন নতুন কাজ করতে আসে তখন ডিরেক্টররা নতুন একজন আর্টিষ্টের ক্ষেত্রে কিন্তু অভিজ্ঞ আর্টিষ্টের আউটপুট পাবেন না। মানে একজন সিনিয়র আর্টিষ্ট যেভাবে দ্রুত ডিরেক্টরের ডিম্যান্ড বুঝতে পারবে একজন জুনিয়র আর্টিষ্ট কিন্তু ততো দ্রুত বুঝতে পারবেনা। তাই এক্ষেত্রে একজন জুনিয়র আর্টিষ্টের সাথে ডিরেক্টরের বোঝাপড়া ও সহজ আচরণটা খুবই জরুরী। 

সাহস : নতুনদেরকে পরিচালকরা সুযোগ দিতে চায়না বলে একটা কথা আছে ...
প্রদীপ : হ্যা এটা আমিও শুনেছি। অনেক ক্ষেত্রে এরকম হয়। কারণ এখানে চ্যানেল আর এজেন্সির চাহিদার একটা বিষয় আছে। হয়তো সবকিছু মিলিয়েই কিছু আচরণ নতুন আর্টিষ্টদের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। 

সাহস : প্রডিউসর হতে গেলে কি কি যোগ্যাতা থাকা উচিত ? কেবল টাকা থাকলেই কি যে কেউ প্রডিউসর হতে পারে?
প্রদীপ : অবশ্যই প্রডিউসর হতে গেলে টাকাটাই একমাত্র যোগ্যতা হতে পারেনা। তাদের অবশ্যই আরও কিছু যোগ্যতা খুব জরুরী। তবে একটা কথা আছে যে কেউ কাজের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে আসে আর কেউ এসে কাজ করতে করতে কাজটাকে ভালোবেসে ফেলে। তবে শিল্প মাধ্যমে কাজ করার ক্ষেত্রে একটা শিল্পীসুলভ মন থাকা জরুরী। শিল্প বোঝার মতো মানসিক পরিপক্বতা না থাকলে তাকে দিয়ে কোনদিন শিল্প সৃষ্টি সম্ভব না। শিল্প মাধ্যমে কাজ করতে গেলে সবার আগে শিল্পকে ভালোবাসতে হবে।

সাহস : আপনি তো অভিনয়ের শুরুতেই সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। পরিচালনা নিয়ে ভাবনা কি?
প্রদীপ : পরিচালনা নিয়ে কোন ভাবনা নেই। আমি যখন অভিনয়ে আসি তখন রোজিনা আপা আমাকে বললেন যে অভিনয় শিখতে হলে ক্যামেরার পেছনের নির্মানের প্রক্রিয়া জানা জরুরী কারণ ডিরেক্টরিয়াল ভিউ বা ক্যামেরার পজিশন জানা থাকলে ক্যামেরার সামনে কাজ করতে সুবিধে হয়। শর্ট ভুল কম হয়। আমি মূলত নিজেকে অভিনেতা হিসেবে তৈরি করার জন্যই সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি, পরিচালক হবার জন্য না। 

সাহস : আপনার সমসাময়িক নবাগত পরিচালকদের ব্যপারে আপনার ভাবনা কি? 
প্রদীপ : নতুন পরিচালকদের অনেকেই খুব চমৎকার কাজ করছে। যাদের কাজে নতুনত্ব আছে। আর এরাই কিন্তু আগামীর নাটক ও চলচ্চিত্রের নেতৃত্ব দেবে। অপরদিকে অনেকেই দেখা যায় কিছুদিন কোন একজন পরিচালকের থার্ড এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করে একজন প্রডিউসর পটিয়ে ফেলে নাটক পরিচালনায় নেমে পড়ছে। এদের কাজগুলো একদিনে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেনা আবার এদেরকে টাকা লগ্নী করে অনেক প্রডিউসর ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মিডিয়া থেকে সরে যাচ্ছে। 

সাহস : সিনেমা নিয়ে আপনার ভাবনা কি? 
প্রদীপ : আসলে আমরা যারা নাটকে অভিনয় করি সবারই মূল স্বপ্নের জায়গা বড় পর্দায় কাজ করা। আমারও ইচ্ছে আছে তবে সেটা এখনই না। এখন আমি নাটক নিয়েই থাকতে চাই। আর সিনেমায় অভিনয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই।
 
সাহস : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 
প্রদীপ : আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত