আজ বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস

প্রকাশ | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:৫৬

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন থেকেই পৃথিবীতে চলমান চিত্র প্রদর্শন শুরু হয়েছিল।

ফ্রান্সের প্যারিস নগরীর ‘কাপুসিন ক্যাফে’ নামক প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধন অধিবেশনে সেদিন নিজেদেরই উদ্ভাবিত প্রক্ষেপণ যন্ত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন অগাস্ট লুমিয়েঁ (১৮৬২-১৯৫৪) ও লুই লুমিয়েঁ (১৮৬৪-১৯৪৮) নামের দুই ভাই।

তাদের সেদিনের প্রদর্শিত সে চলচ্চিত্র আজও জীবন্ত আছে এবং তা টিকে থাকবে, যতদিন মানব সভ্যতা বেঁচে আছে। এভাবেই নিজের সৃষ্ট চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষও টিকে থাকবে তার পূর্ণাঙ্গ অবয়ব নিয়ে। সেই থেকে ২৮ ডিসেম্বর বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। আজ বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস।

এবার আসা যাক পৃথিবীর প্রথম প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের কথা। কী ছিল তাতে? পর্দা জুড়ে প্রচণ্ড গতির একটা পুরো ট্রেন এসে ঢুকছে স্টেশনে, এই হলো A Train Reaches the Station, সেই চলচ্চিত্রের প্রধান দৃশ্য। সে সময় আরও প্রদর্শিত হয়েছিল A Boat Leaves the Harbour, Baby at the Breakfast Table এবং Watering the Garden -এ ধরনের ছবিগুলোও। 

বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তাই ১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারিখটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, কারণ এ দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। সেদিন প্রদর্শনীর মাধ্যমে যে চলচ্চিত্র শিল্পের অভিষেক ঘটেছিল আজ মানুষের মনের সুপ্ত বাসনা, স্বপ্ন, বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের কল্পনা তার সঙ্গে মিশে গেছে। উপরন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের ফল হিসেবে চলচ্চিত্র বর্তমান পৃথিবীর এক অপ্রতিরোধ্য গণমাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। 

বিশেষত আলোক বিজ্ঞানের বিকাশ, অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিদ্যুৎ শক্তির আবিষ্কার এবং পরবর্তীতে সেলুলয়েড-যৌগ (১৮৭২) ও প্রজেক্টরের আবিষ্কার চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে অভানীয় অবদান রেখেছে। 

চলচ্চিত্র তাত্ত্বিকদের ভাষায় লুমিয়েঁ ভাইদের ক্যামেরা, ইস্টম্যানের সংবেদনশীল সেলুলয়েড ফিল্ম আর আঁতিয়েন মারের প্রজেক্টরের সংমিশ্রণেই আজকের চলচ্চিত্রের জন্ম। 
হাজার বছর ধরে পৃথিবীর বহুদেশের বহু মানুষের বহুরকম ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রের বিকাশ সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানী, শিল্পী, চিকিৎসক, গবেষক, ধর্মযাজক, সঙ্গীতজ্ঞ, ইতিহাসবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, সাধারণ মানুষ, লোকশিল্পী, গণিতজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক, ব্যবসায়ী, সৈনিক, প্রকৌশলি, কবি, সাহিত্যিক, রাষ্ট্রনায়ক কার না অবদান আছে এ গণসংস্কৃতির উন্মেষ ও বিকাশে? জগৎ বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল, ইটালিয়ান রেনেসাঁর পুরোধা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি থেকে শুরু করে ধর্মযাজক এথনিয়াস কারচার, সেনাপতি পোর্তো, বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস, কেপলার, রজার বেকন, টমাস আলভা এডিসন, ডিকসন, ট্যালবট, মেব্রিজ, প্রকৌশলি আইজাক, জুলেমার, ইস্টম্যান, পিটার রজেট আরও অগণিত নাম ওতপ্রোতভাবে চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।  

ছায়ানৃত্য, ম্যাজিক লণ্ঠন, টকি বা বায়োস্কোপের যুগ পার হয়ে চলচ্চিত্র আজ পদার্পন করেছে একবিংশ শতকে। বিজ্ঞান, চিত্রকলা, সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, মনস্তত্ত্ব সবকিছুই এখন চলচ্চিত্রের বিষয়। 

বিশেষত নান্দনিকতা ও চিত্রভাষা বিকাশে চলচ্চিত্র লুমিয়েঁ ভ্রাতৃদ্বয়, জর্জ মেলিয়েঁ, পোর্টার, গ্রিফিথ, চার্লি চ্যাপলিন, আইজেনস্টাইন, পুদোভকিন, কুলেশভ, দভজেঙ্কো, ফ্লাহার্টি, জিগাভের্তভদের কাছে ঋণী। এ শিল্পের বিকাশের বিভিন্ন পর্বে ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তবাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি, ইটালি, ব্রিটেন, সুইডেন, জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তাত্ত্বিক ও চলচ্চিত্রকারগণ পথিকৃতের ভূমিকা রেখেছেন। কারিগরি উৎকর্ষ সাধনের পাশাপাশি এক্সপ্রেশনিজম, আভাঁগার্দ, সুররিয়ালজম, অথরিজম, নুভেলভাগ, নিও রিয়ালিজম, নিউ ওয়েভ, এক্সিসটেনশিয়ালিজম, সেক্সচুয়ালিজম, ফ্রি সিনেমা মুভমেন্ট, নতুন জার্মান সিনেমা, ওবার হাউজেন ঘোষণাসহ নানা ধরনের আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের অঙ্গনে। বিভিন্ন ধরনের মতবাদ ও মতামতের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রচলনের ফলে এখন চলচ্চিত্রের নানান ধরনের ফরম্যাট নিয়ে বিশ্বব্যাপী  পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এছাড়া চলচ্চিত্র অঙ্গনকে ঘিরে নৈতিকতা, যৌনতা, অশ্লীলতা, অবক্ষয় ইত্যাদি বিতর্কও যথারীতি চালু আছে। 

সবশেষে এই বলা চলে চলচ্চিত্র সংস্কৃতি অঙ্গনকে আলোকিত করে রেখেছে। তাই বিশ্ব  চলচ্চিত্র দিবস  উদযাপনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট আলোচনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আযোজন করেছেন।  

আয়োজকরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় বিকেল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এর প্রতিপাদ্য ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস ও আমাদের চলচ্চিত্র ঐতিহ্য’।

সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আলোচনায় অংশ নেবেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান ও কাজী হায়াৎ এবং ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. নাদির জুনায়েদ।