‘প্রযোজকদের মেধা ও যোগ্যতা থাকা দরকার’

প্রকাশ | ৩১ মে ২০১৬, ১৫:৩১ | আপডেট: ৩১ মে ২০১৬, ১৫:৩৮

বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে নায়ক নায়িকার পাশাপাশি খল নায়ক বা ভিলেন চরিত্রকেও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তুলেছিলেন হুমায়ূন ফরিদি, রাজিব ও আহমেদ শরীফরা। তাদের মন্দ চরিত্রের অভিনয় মানুষকে হলমুখি করতে রেখেছিলো, বিশেষ অবদান রেখেছিলো। সময়ের পরিবর্তনের ধারায় এখন খল চরিত্রে যারা নিজেকে প্রমাণ করেছে দুর্দান্ত অভিনেতা হিসেবে তাদের মধ্যে অন্যতম অভিনেতা শিমুল খান। আজকে সাহসের মুখোমুখি চলচ্চিত্রের মন্দ মানুষ শিমুল খান। 

সাহস: কেমন আছেন?
শিমুল খান: আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভাল।

সাহস: বর্তমান ব্যস্ততা কোন কোন কাজ নিয়ে?
শিমুল খান: বর্তমানে হাসিবুর রেজা কল্লোলের স্বত্বা, রুবেল আনুশের নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প, সোহেল আরমানের ভ্রমর, ইফতেখার চৌধুরীর বিজলী, বন্ধন বিশ্বাসের শুন্য, রাজিবুল হাসানের হৃদয়ের রংধনু, খান জেহাদের কল্প না, সফিক হাসানের রক সহ আরও বেশকিছু সিনেমার শ্যুটিং নিয়ে ব্যাস্ত আছি এবং আরো একাধিক ছবির চুড়ান্ত কথা বার্তা চলছে।

সাহস: মিডিয়ায় আপনার পথচলা শুরু কোন মাধ্যম দিয়ে?
শিমুল খান: প্রথমে ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত র্যা ম্প মডেলিং, তারপর ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত টিভি নাটকে অভিনয় অবশেষে ইফতেখার চৌধুরীর দেয়া ব্রেকে; ২০১৩ সালের সুপারহিট সিনেমা ‘দেহরক্ষী’র মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় সুপ্রসন্ন আগমন।

সাহস: আপনার উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের কথা বলুন যা আপনাকে তৃপ্তি দিয়েছে?
শিমুল খান: প্রতিটি কাজই আমার কাছে স্পেশাল তবে প্রথম দেহরক্ষী এবং দ্বিতীয় মুস্তাফিজুর রহমান মানিকের কিছু আশা কিছু ভালবাসা এরপর অনন্ত জলিলের মোস্ট ওয়েলকাম-২, রাজ রাজ্জাক প্রযোজিত বাপ্পারাজ পরিচালিত কার্তুজ, সৈকত নাসিরের ‘দেশা-দ্যা লিডার’, আশিকুর রহমানের ‘মুসাফির’ কে উল্লেখযোগ্য ভাবে স্মরণ করতে চাই।

সাহস: অভিনয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রভাবিত করে কার কার অভিনয়?
শিমুল খান: কারো অভিনয়ই আমাকে প্রভাবিত করেনা, তবে টম হ্যাংকস, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, আমির খান, হৃতিক রোশান, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী, নাসিরুদ্দিন শাহ এবং বাংলাদেশে একমাত্র হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় আমার অত্যান্ত ভাল লাগে।

সাহস: আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রে কি কাংখিত পরিবর্তন আসছে?
শিমুল খান: হ্যাঁ অবশ্যই আসছে, তবে হতাশাজনকভাবে সেটাও খুবই শ্লথ গতিতে আসছে কিন্তু কাংখিত পরিবর্তনের জন্য; আগা থেকে মাথা পর্যন্ত আমাদের টোটাল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে রিসেট দিতে হবে অন্যথায় অসম্ভব।

সাহস: বর্তমান মিডিয়ায় নতুনদের কাজের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলোকে প্রতিবন্ধকতা মনে করেন?
শিমুল খান: ছবির অনুন্নত বাজারজাত প্রক্রিয়া এবং আমাদের নিম্নমানের ক্ষুদ্র চলচ্চিত্র বাজারই বর্তমান মিডিয়ায় নতুনদের কাজের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা আর মূলত এই কারণেই পরিচালক-প্রযোজক-প্রদর্শকরা পুরাতন শিল্পীদের দিয়েই কাজ করাতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন কারণ সবশেষে সিনেমা একটি বানিজ্যিক বিষয় কাজেই সবাই চায় তাদের পুজির নিশ্চয়তা যেটা এই দেশের দরিদ্র মার্কেটে নতুন শিল্পী দিয়ে সম্ভব নয় আর মার্কেট বড় না হলে সহসা এই প্রতিবন্ধকতার কোন সমাধানও আসবেনা।

সাহস: আমাদের শিল্প মাধ্যমকে আরো শক্তিশালী করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে মনে করেন?
শিমুল খান: প্রথমত, চলচ্চিত্র পরিবেশন ব্যবস্থাকে উন্নত চলচ্চিত্র বিশ্বের আদলে সাজানো এবং ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে প্রযোজকের প্রতিটি আয়ের সঠিক হিসাব রক্ষণ প্রথা চালু করা। দ্বিতীয়ত, উন্নত চলচ্চিত্র বিশ্বের আদলে একটি সুবিশাল ফিল্ম সিটি গড়ে তোলা যেখানে শহুরে-গ্রামীণ বা যে কোন গল্পের সিনেমা ওয়ানস্টপ সলিউশনে এককভাবে সেখান থেকেই শ্যুটিং করে পোষ্টের জন্য বের করে আনা সম্ভব হবে। তৃতীয়ত, একটা পুর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেমন ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) এবং এখান থেকেই একজন প্রডাকশন পারসন থেকে শুরু করে সকল প্রকার পেশাদার শিল্পী-কলাকুশলী-প্রযোজক বেরিয়ে আসবে।

সাহস: বর্তমান সময়ের নবীন খল অভিনয় শিল্পীদের মধ্য থেকে রাজীব, আহমেদ শরিফ, হুমায়ুন ফরিদিরা বেড়িয়ে আসছেনা কেনো? সীমাবদ্ধতা কোথায়?
শিমুল খান: কেউ কারো জায়গা নিতে পারেনা আর পারবেওনা, তবে একজন হয়তো আরেকজনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে অথবা একজন হয়তো আরেকজনের নিচে পরে থাকতে পারে; তবে এখন সবাই নিচেই পরে থাকছে এর প্রধান কারণ অভিনয় ক্ষুধা আর তীব্র ইচ্ছার অভাব অন্যকিছু নয়।

সাহস: নবীন ডিরেক্টরদের কাজের মান নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
শিমুল খান: অনেকেই ভাল করছে। অনেকেই প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি ভাল করছে আবার অনেকেই কমবেশি আমাদের হতাশ করছে। তবে আমি নতুনদের নিয়ে অনেক আশাবাদী।

সাহস: গল্প ভীনদেশি গল্প বা সিনেমা থেকে চুরি করার যে প্রবনতা এই মেধাচুরি নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
শিমুল খান: মেধা না থাকলে চুরিতো করবেই, কাজেই আপাত দৃষ্টিতে সিংহভাগ মেধা চুরিতে আমি অন্যায়ের কিছু দেখিনা তবে কষ্টটা তখনই লাগে; যখন দেখি মেধা সম্পন্ন মানুষগুলো কষ্ট করে নিজের মেধা না খাটিয়ে সহজিয়া পদ্ধতিতে অন্যের মেধা চুরি করে।

সাহস: যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণের যে হিরিক পড়েছে, এই যৌথ প্রযোজনা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
শিমুল খান: যৌথ প্রযোজনা সিনেমা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া তবে আমার দৃষ্টিতে, যৌথ পরিচালনা অগ্রহণযোগ্য তরিকা তবে যৌথ প্রযোজনাকে খারাপ কিছু বলবোনা। শুধুমাত্র প্রতিটি যৌথ প্রযোজনাকে অবশ্যই ৫০/৫০ ভাগে ভাগ করে দুই পারের সমান কর্তৃত্ব আইন কঠোরভাবে নিশ্চিত করার জোরালো ব্যক্তিগত দাবি জানাচ্ছি।

সাহস: হিরো না হয়ে এন্টি হিরো চরিত্রে কেনো এলেন?
শিমুল খান: নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করা হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন কাজ, আর আমি ছোটবেলা থেকেই সবসময় সবচেয়ে কঠিন কাজটি করতেই প্রাধান্য দেই বেশি। শুধুমাত্র এই কারণেই; মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নেতিবাচক চরিত্রকে প্রাধাণ্য দেবো যদিও আমার একমাত্র লক্ষ্য একজন আদর্শ সব্যসাচী অভিনেতা হওয়া।

সাহস: অনেককেই দেখা যাচ্ছে ভিন্নধারার চলচ্চিত্র বলে কিছু সিনেমা রিলিজ দিচ্ছে যা আদতে না নাটক হচ্ছে, না সিনেমা হচ্ছে। এই বিষয়টাকে কি দর্শক বিমুখতার একটা কারণ বলে মনে করেন? 
শিমুল খান: না আমি মোটেও তা মনে করিনা, কারণ একটি দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সব ধরণের সিনেমাই হওয়া উচিত এবং যার যেটা পছন্দ সে সেটাই দেখবে; আর ভাল করে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন যে এই ধরণের সিনেমারও আলাদা দর্শক আছে যদিও সেটা সীমিত পরিসরে।

সাহস: কেবল টাকা হলেই কি চলচ্চিত্র মাধ্যমে প্রযোজনায় আসা উচিত? নাকি টাকার সাথে আরো কিছু বোধ বা যোগ্যতা থাকা উচিত?
শিমুল খান: চলচ্চিত্রে উন্নত দেশ গুলোতে প্রযোজক কখনোই অর্থ বিনিয়োগ করেনা, প্রযোজক ছবিতে অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য আলাদা আলাদা ফিন্যান্সার নিয়োগ দেন অতপর প্রযোজক ফিন্যান্সারদের কাছ থেকে অর্থ জমাটবদ্ধ করে সুষম বাজেট দিয়ে; একজন বিশ্বস্ত পরিচালকের মাধ্যমে ভাল একটা সিনেমা নির্মাণ করিয়ে পরিবেশকের মাধ্যমে বাজারজাত করে থাকেন। আর সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিচালক হবার জন্য, যে পরিমাণ মেধা বা যোগ্যতা থাকা দরকার ঠিক তেমনি করে প্রযোজক হবার জন্য বোধকরি তারচেয়ে বেশি মেধা বা যোগ্যতা থাকা দরকার তার একজন প্রযোজক হিসেবে; কারণ পরিচালক পুরো সিনেমা নির্মাণ টিমকে পরিচালনা করে আর প্রযোজক সেই ছবির পরিচালক এবং পরিবেশককে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে পুরো সিনেমাটাকে নির্মাণ পূর্ব সময় থেকে শুরু করে একদম বাজারজাত করা পর্যন্ত গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

সাহস: ভিলেন বা এন্টি হিরো চরিত্রে অনেকেই কাজ করছে, তাদের চেয়ে আপনার স্পেশালিটি কি? আপনার অভিনয়ে নতুন কি আছে যা দর্শককে আপনার অভিনয় দেখতে আগ্রহী করবে?
শিমুল খান: আমি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পে, স্বঘোষিত একমাত্র বাজে অভিনেতা তাই এই দেশের সবার ভাল অভিনয় ফেলে; আশাকরি একদিন সকল দর্শক সিনেমা হলে শুধুমাত্র আমার একতরফা বাজে অভিনয় দেখার জন্য লাইন দেবে।

সাহস: বিশেষ কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখেন?
শিমুল খান: বিশেষ কোন পছন্দের চরিত্র নেই, তবে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন চরিত্রগুলোতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি নির্দ্বিধায় অভিনয় করে যেতে চাই; অন্যান্য অভিনেতারা যেই কঠিন চরিত্রগুলোতে অপারগতা প্রকাশ করবে আমি সেই চরিত্রগুলোকে লুফে নিয়ে অভিনয় করতে চাই।

সাহস: অভিনেতা শিমুল খানকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
শিমুল খান: কোন স্বপ্ন নেই তবে লক্ষ্য আছে, আর আমার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে এখন পৃথিবীর সবেচেয়ে বাজে সব্যসাচী অভিনেতা আমি; কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সব্যসাচী অভিনেতা হবোই হবো আমি।

সাহস: বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
শিমুল খান: কোন স্বপ্ন নেই, তবে বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে আমার বিশাল বিশাল প্রত্যাশা আছে আর সেই প্রত্যাশাগুলো হচ্ছে; ভবিষ্যতে একদিন প্রাণের ঢাকাই বাংলা চলচ্চিত্র দিয়ে বিশ্বজয় করবো আমরা বাণিজ্যে এবং অস্কারে।

সাহস: আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য সাহসের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
শিমুল খান: সাহসকেও ধন্যবাদ, শুভকামনা এবং ভালবাসা।