বৃষ্টি ভেজা দিনে শেষ ভালোবাসায় সিক্ত আবদুল জব্বার

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১২:৪৪

সকাল থেকেই আকাশটা অন্য রূপ ধারণ করেছিল। হয়তো বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি চাপা কান্না বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী স্বাধীনতাযুদ্ধের কণ্ঠ সৈনিক আবদুল জব্বারের বিদায় বেলা।

আজ বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী আবদুল জব্বারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাকে ঢাকা জেলার পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে সবাই শেষ বারের মত শিল্পীর প্রতি ভালোবাসা জানাতে এসেছেন এখানে।

এর আগে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বেতার ভবনে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে আব্দুল জব্বারের মৃতদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।

জানাজায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, তথ্যসচিব,বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়। 

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এর পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সদস্য এস এম কামাল, সাবেক সহসম্পাদক শফী আহমেদ, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। এর পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।

গতকাল বুধবার (৩০ আগস্ট) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। 

১৯৩৮ সালে ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মেছিলেন আবদুল জব্বার। ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাইতে শুরু করেন তিনি। ১৯৬২ সালে চলচ্চিত্রে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ আসে তার কাছে। ১৯৬৪ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে নিয়মিত গাইতেন তিনি।

জীবদ্দশায় ছয় হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন আবদুল জব্বার। এর মধ্যে কালজয়ী হয়ে আছে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’, ‘পীচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’ প্রভৃতি। 

কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বারের প্রথম স্ত্রী হালিমা জব্বার একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার এক মেয়ে দুই ছেলে মিথুন জব্বার এবং বাবু জব্বার। তারাও কণ্ঠশিল্পী। দ্বিতীয় স্ত্রী শাহীন জব্বার ছিলেন গীতিকার। তাদের মেয়ে মুনমুন জব্বার নৃত্যশিল্পী। তার তৃতীয় স্ত্রী ডলি জব্বার বাংলাদেশ বেতারের একজন কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত