সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশ বাদ

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:১০

সাহস ডেস্ক

২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ এ তিন বছরের জন্য জিসিএফ সভার স্থায়ী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দায়িত্ব শেষ করার দুই বছর আগেই স্থায়ী সদস্য পদ থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে স্থায়ী সদস্য পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আফ্রিকার দেশ মালাওয়িকে। মেয়াদের বাকি দুই বছর দায়িত্ব পালন করবে দেশটি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশ সামোয়ায় জিসিএফ বোর্ডের সভায় স্থায়ী সদস্য হিসেবে শেষ প্রতিনিধিত্ব করেছে বাংলাদেশ। 

স্থায়ী সদস্য পদ থেকে বাংলাদেশকে এমন সময় বাদ দেওয়া হয়েছে, যখন সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে টাকা পেতে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সরকারের সামনে। এরই মধ্যে এ তহবিল থেকে বাংলাদেশের জন্য আট কোটি ডলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬৪০ কোটি টাকা। আরো আট কোটি ডলারের একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থায়ী সদস্য পদ হারানোয় ভবিষ্যতে এ তহবিল থেকে টাকা পাওয়া বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এটি বড় ধাক্কা। 

বাংলাদেশকে স্থায়ী সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, এর পেছনে দুটি অজুহাত দাঁড় করানো হয়েছে। প্রথমত, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে রাষ্ট্রপ্রধানদের যোগদানের আগে যেসব সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেসব বৈঠকে স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি কার্যকর ও যথাযথ ভূমিকা পালন করেন না। দ্বিতীয়ত, সরকার একেকবার একেক প্রতিনিধিকে জলবায়ু সম্মেলনে পাঠায়। এতে করে কোনো ধারাবাহিকতা থাকে না। এ দুটি যুক্তি দেখিয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে।  

স্থায়ী সদস্য হওয়ার সুবাদে এত দিন অন্য সদস্যদের সঙ্গে আপস কিংবা সমঝোতা করে বাংলাদেশের প্রকল্প বোর্ডে তোলা যেত। এখন থেকে আর সেই সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে না। স্থায়ী সদস্য হওয়ায় এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে নিজেদের ঝুঁকির কথা বলা যেত, মতামত দেওয়া যেত, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও ছিল। কিন্তু সদস্য পদ বাতিল হওয়ায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে সরকার।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল জিসিএফ বোর্ডের সহযোগী সদস্য। গত বছর স্বল্পোন্নত ৪৮টি দেশের প্রতিনিধিরা এক সভায় বসে সিদ্ধান্ত নেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যেহেতু অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, তাই ২০১৬ সাল থেকে পরবর্তী তিন বছর জিসিএফ বোর্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সেই আলোকে এবার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) পক্ষ থেকে জিসিএফ বোর্ডে প্রতিনিধিত্ব করছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ করে স্বল্পোন্নত দেশের ৪৭টি দেশ একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে আগামী দুই বছর এলডিসি থেকে প্রতিনিধিত্ব করবে আফ্রিকার দেশ মালাওয়ি। ফলে মাত্র এক বছর এ দায়িত্ব পালন করতে পারছে বাংলাদেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিসিএফ থেকে টাকা পাওয়ার অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের এসব সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। কিন্তু স্থায়ী সদস্য পদ হারানোয় পরিস্থিতি কঠিন হয়ে গেল।

সূত্র বলছে, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সরকারি সংস্থা ডিএফআইডি বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ করা বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়ান্স ফান্ড (বিসিসিআরএফ) থেকে এক কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড ফেরত নিয়ে গেছে। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে শর্তে বনিবনা না হওয়ায় বিসিসিআরএফ এখন বন্ধের মুখে। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আরেক তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডে (বিসিসিটি) নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাতে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আগামী অর্থবছরেও এ খাতে কম অর্থ বরাদ্দ দেবেন বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত