আইলা ক্ষতিগ্রস্থদের হাহাকার আজও কমেনি

প্রকাশ : ২৫ মে ২০১৮, ১৪:৪৯

সাহস ডেস্ক

আজ ২৫ মে, ২০০৯ সালের এই দিনে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে তছনছ হয়ে যায় সুন্দরবন ঘেষা সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার উপকুলীয় অঞ্চল। তবে ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের হাহাকার কমেনি। এলাকায় নেই কোন কর্মসংস্থান। সুপেয় পানির অভাব তীব্র। অর্থের অভাবে ঘর নির্মান করতে না পারায় বেড়িবাঁধের ওপর খুপড়ী ঘরে তুলে বসবাস করছেন অনেকেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও সংস্কারের অভাবে মারাত্মকভাবে পাঠদান কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।

২০০৯ সালের ২৫ মে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় “আইলা” আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলীয় জনপদে। মুহুর্তের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি উপজেলার উপকুলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪-১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী ও শিশুসহ পাঁচশতাধিক মানুষ, হাজার হাজার গবাদী পশু আর ঘরবাড়ি। ক্ষণিকের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো পরিবার। লক্ষ লক্ষ হেক্টর চিংড়ি আর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকুল রক্ষা বাঁধ আর অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সর্বনাশা “আইলা”র আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায় নিহত হয় ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু। আর আহত হয় সহস্রাধিক মানুষ। আইলার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

আইলার আঘাতের পর থেকে গোটা এলাকা উদ্ভিদ শূণ্য হয়ে পড়েছে। লবাক্ততার কারণে প্রায় দশ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। ফলে গোটা এলাকাজুড়ে তীব্র কর্মসংস্থানের সংকট সৃষ্টি হয়। কর্মহীন মানুষ এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে বাইরে চলে যাচ্ছে। সুন্দরবন, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর উপর নির্ভরশীল ওই এলাকার মানুষের জীবন যাপন এখন দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের অভাব-অনটন বেড়েই চলেছে। ক্রমে বাড়ছে দরিদ্র ও অতি দরিদ্রের সংখ্যা। 

এছাড়া বনদস্যুদের অত্যাচারে সুন্দরবন নির্ভর মানুষগুলিও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অপহরণের ভয়ে তারা সুন্দরবনে মধু আহরণ ও কাঁকড়া সংগ্রহে যেতে পারছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলিও ঝুঁকির মধ্যে। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি নামক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জনবসতি গ্রাস করছে। এছাড়া বুড়িগোয়ালিনী, হরিনগরসহ প্রায় একশ কিঃ মিঃ বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কামালকাটি এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও অন্যান্য বাঁধগুলি হুমকির মুখে। 

খাবার পানির তীব্র সংকট ভূগছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। গাবুরা ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মধ্যে ১৩টি গ্রামের মানুষদের খাবার পানির একমাত্র উৎস ‘পুকুর’। অনেক নারী ২/৩ কিঃমিঃ পাঁয়ে হেটে এক কলস পানির জন্য। নোংরা আবর্জনায় পরিপূর্ণ হওয়ায়, এসব পানি পান করে রোগাক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। কিছুটা স্বচ্ছল লোকেরা বিশ টাকা দরে পানির ড্রাম পাশের উপজেলা কয়রা থেকে কিনে আনছেন। 

গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাসান আলী গাজী বলেন, আইলার সময় সাগরের লবণ পানি এসে সমগ্র এলাকা ভাসিয়ে দেয়। এরপর থেকে সেখানে কৃষি ফসল উৎপন্ন হয় না, গাছ-গাছালি শূন্য হয়ে পড়া গোটা এলাকা মরুভূমির মতো পড়ে আছে। কাজের খোঁজে মানুষ প্রতিদিন প্রায় দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া অব্যাহত রেখেছে।

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, ‘পানি সংকট এবং কাজের অভাবে অনেক মানুষ এলাকা ছেড়েছে। ৭ কি. মি. উপকূল রক্ষা বাঁধসহ গোটা ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। আকাশে মেঘ হলে নির্ঘুম রাত কাটে উপকূলবাসীর।’ এসব বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

খলষেবনিয়া এলাকায় ক্লোজার বেড়িবাঁধের ওপর বসবাসকারী শতাধিক মানুষ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। অর্থাভাবে তারা পিতৃভিটায় ফিরে যেয়ে ঘর তৈরি করতে পারছে না।

আইলার পর পাউবোর বেড়িবাঁধ কেটে নদীর পানি চিংড়ি ঘেরে উঠাতে দিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। ফলে এলাকায় না হচ্ছে চিংড়ি চাষ, না হচ্ছে কোন ফসল। ফলে মানুষের হাতে কোন কাজ না থাকায় বহু পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।

চকবারা ক্লোজার সংলগ্ন নদীতে নেট জাল দিয়ে রেণু সংগ্রহ করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে ২০১৩ সালে কোষ্টগার্ড জাল দিয়ে রেনু ও পোনা সংগ্রহ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায়, ওই সব এলাকার লোকজন একেবারে বেকার হয়ে পড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত