হঠাৎ হাম বেড়ে শিশুর মৃত্যু

প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৭, ১৩:৫৯

সাহস ডেস্ক

রাজধানীসহ সারাদেশে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে করে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। টিকা নিয়েছে এমন শিশুরও হাম হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সরকারকে হামের টিকার ব্যাপারে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে।

রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গত ২১ মে (রবিবার) ১৬ জন হামের রোগী ভর্তি ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১ জানুয়ারি (রবিবার) থেকে ২১ মে (রবিবার) পর্যন্ত  ৪৬৫ জন হাম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে সব বয়সের রোগী রয়েছে। এরই মধ্যে এই হাসপাতালে ১০টি শিশু মারা গেছে। ১৭ মে ১টি, ১৯ মে ২টি, ২০ মে ১টি, এপ্রিলে ১টি এবং মার্চে ৫টি শিশুর মৃত্যু হয়। এদের বয়স ১ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। 

এ ছাড়া কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত সপ্তাহে একটি শিশু হামে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

হামে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, গত দু-তিন মাসে বেশ কয়েকটি শিশু হাম আক্রান্ত হয়ে তার চেম্বারে এসেছে। হামে আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে হামে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

স্থানীয় একটি পত্রিকায় বরিশাল, পিরোজপুর, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ীর সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই সব জেলাতেও হামে আক্রান্ত হয়ে অনেকে চিকিৎসকদের কাছে আসছে।

২২ মে (সোমবার) মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, আমি এই হাসপাতালে ১৮ বছর কাজ করছি। এত হামের রোগী আগে দেখিনি। তিনি জানান, হাম ওয়ার্ডে ২৫টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো দিন রোগী আসছে শয্যাসংখ্যার চেয়েও বেশি।

বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) বাস্তবায়িত হয় মাতৃ, নবজাতক, শিশু ও কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায়। এই কর্মসূচির পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, প্রতিবছর কিছুসংখ্যক শিশু টিকার বাইরে থেকে যায়। এরা হামের ঝুঁকিতে থাকে। এ ছাড়া টিকা দেওয়ার পরও ১৫ শতাংশ শিশুর সঠিক প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে ওঠে না। তার মতে, প্রতিবছর প্রায় ১৮ শতাংশ শিশু হামের ঝুঁকিতে থাকছে এবং এদের সংখ্যা পুঞ্জীভূত হচ্ছে।

ইপিআই কর্মকর্তারা বলছেন, শিশুর বয়স ৯ মাস বা ২৭০ দিন হলেই প্রথম ডোজ এমআর (হাম ও রুবেলা) টিকা দিতে হয়। দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হয় বয়স ১৫ মাস হলে। গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি পুরোনো ওয়ার্ডে সাতটি টিকাদান কেন্দ্রে ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে শিশুদের টিকা দেন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী। প্রতিটি কেন্দ্র মাসে একবার যান মাঠকর্মীরা।

মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, গ্রামে টিকা কার্যক্রম ভালো চলছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্ভর করতে হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওপর। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কিছু দুর্বলতার কারণে শহরাঞ্চলে ইপিআই দুর্বল। হামের রোগী শহরেই বেশি।’ তিনি বলেন, নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির বাইরে প্রতি তিন-চার বছর পরপর সারা দেশে জাতীয়ভাবে হামের টিকার গণ ক্যাম্পেইন হয়। সর্বশেষ গণ ক্যাম্পেইন হয়েছিল ২০১৪ সালে। এ বছর শেষের দিকে জাতীয়ভাবে ক্যাম্পেইন করার পরিকল্পনা আছে।

এ বিষয়ে শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, হঠাৎ হাম দেখা দেওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা দরকার। শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচি, ইপিআই এবং পেশাজীবী সংগঠন একসঙ্গে বসে সমাধান খুঁজতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত