ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায় ৩ নভেম্বর
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৩৪
দেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় এক অধ্যায়ের দিন ৩ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বিনা বিচারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিমূঢ় পুরো জাতি।
ইতিহাসের কালো এ অধ্যায়টি প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে জেলহত্যা দিবস হিসেবে। শাসকদল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
জাতির চার সূর্যসন্তানকে হত্যার ৩৮ বছর পর ২০১৩ সালে শেষ হয় কাপুরুষোচিত ও নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত বিচার। তবে জীবিত আসামিদের মধ্যে এখনো পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনসহ সাজাপ্রাপ্ত সবাই।
জানা গেছে, তারা সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে এখনো করা হয়নি আপিল বিভাগের রায়ের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন। রাষ্ট্রপরে আপিল মঞ্জুর এবং বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল জেলহত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। রায়ে জাতীয় চার নেতা হত্যার দায়ে দফাদার মারফত আলী শাহ ও এল ডি দফাদার আবুল হাসেম মৃধার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। বিচারিক আদালত তাদের মৃত্যুদণ্ড দিলেও হাইকোর্টের রায়ে তা বাতিল করা হয়েছিল।
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ ওই রায় দেন। আর এ মামলায় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলেন হাইকোর্টই। তবে জেলহত্যার ঘটনায় ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি আপিল বিভাগের রায়ে। কারণ হাইকোর্টে করা আপিলে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা চাওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে নির্মমভাবে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন। এর পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে পলাতক আসামি রিসালদার (ক্যাপ্টেন) মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১২ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এর পর ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। এতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মারফত আলী শাহ ও আবুল হাশেম মৃধাকে বেকসুর খালাস দিয়ে রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এ ছাড়া চারজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে অব্যাহতি পান। অন্য আট আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পৃথক পাঁচটি লিভ টু আপিল করা হয়। ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আর্জি জানায়। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপরে আপিল আবেদন মঞ্জুর করেন। তখন এক আদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এবং হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এল ডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। আত্মসমর্পণ না করলে তাদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেন আদালত। জেলহত্যা মামলায় হাইকোর্টে অব্যাহতি পাওয়া চারজন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদের বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
এখনো পলাতক রয়েছেন এ মামলার অন্যতম আসামি মেজর আহমদ শরফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাশেম ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসার। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় তাদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।
এ ছাড়া জেলহত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পান বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, সেনা কর্মকর্তা মো. খায়রুজ্জামান ও আজিজ পাশা।