ভোটার গ্রেডিং পদ্ধতি...

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০১৭, ১৫:৩৪

শতাব্দী ভব

সরকারি বা বিরোধী প্রায় সব রাজনৈতিক দলই কিন্তু আসলে জনগণের অধিকার নিয়ে সব সময়ই সোচ্চার। অধিকারের কথা আসলেই অনেকগুলো মাথা সামনে চলে আসে। মৌলিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি। শুরুতে যারা খটকা খেয়েছেন তাদের বিচলিত হবার দরকার নাই, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের মাত্র একটা অধিকার নিয়েই জনগণের পাশে আছে, ভোটাধিকার।

কর্তৃত্ববাদী সরকার, সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, দিব্যতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, আইনানুগমনবাদী সরকার এমন অনেক সরকার ব্যবস্থাই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে গণতন্ত্রের ভিত্তিতে বেশিরভাগ সরকার ব্যবস্থা পরিচালিত হওয়ায় ভোটের উপরই ক্ষমতা নির্ভর করে। জনগণের দেয়া ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে, যে দলের জনপ্রতিনিধি বেশি নির্বাচিত হবেন তাদের নিয়েই সরকার গঠন হবে। অতি সংক্ষেপে এই হলো সারমর্ম। বেশতো, আপাত চোখে বেশ নিরিহ ও গ্রহণযোগ্য সমাধান। কিন্তু আসলে কি তাই?

তাই যদি হবে, তাহলে ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি, নির্বাচন বয়কট, কালো টাকার ব্যবহার, পেশি শক্তির ব্যবহার বা এমন হাজারো নেতিবাচক ঘটনা আমরা দেখি কেন? এটা বুঝতে গেলে কাউকে বিশেষ গুণের অধিকারি হতে হবে না, বিষয়টা জলের মতো সহজ। ভোটে জেতা মানে আলাদিনের চেরাগ জেতা। জনগণকে সেবা নয় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে এটাই ভোট ফ্যাক্টর। আমরাতো সাদা চোখেই দেখি সামান্য নিউ মার্কেটের ফুটপাতে এক হাত জায়গায় একটা টুকরি ফেলার জন্য কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়, এ চিত্র সর্বত্র। আমরা একবার একে ভোট দেই পরেরবার তাকে আর একে, একই বৃত্তে ঘুরপাক।

সংবিধানে আছে রাষ্ট্রের চোখে সবাই সমান, বাস্তবিকই কি আপনি তাই মনে করেন? ওদিকে না যাই, আপনি শৈশব থেকেই দেখে আসছেন প্রতিযোগিতার অপর নাম জীবন। স্কুলে নিশ্চয় সবার রোল নাম্বার এক থাকে না। বিসিএস পাশ না করে নিশ্চয়ই আমরা সরকারি উচ্চপদে চাকুরি পাই না। কোন জায়গাটা আছে আপনি দেখান যে ওখানে প্রতিযোগিতা ছাড়াই বা যোগ্যতার কোন নিক্তি ব্যতিত সবাইকে সমান চোখে দেখা হয়। একটা জায়গা অবশ্য আছে, রাষ্ট্রের চোখে সকল ভোটার সমান।

একজন বকলমের ভোট আর একজন পিএইচডিধারীর ভোট সমান। আমরা কেবল বোকার মতো ভোট দেবার সময়ই সমান অধিকার পাই। কাউকে খাটো করছি না কিন্তু বাস্তবতা হলো ভোটের উপর নির্ভর করে দেশ কোনপথে যাবে। আর বেশিরভাগ মুর্খের রায়ে আমি দেশ পরিচালনার ভার আরেক মুর্খের হাতে তুলে দিতে পারি না। দশটা চোর যদি বলে এই আমাদের নেতা, হয়ে গেলো? বিষ্ময়।।। খুলি আর মগজের দাম এক হয়ে গেলো? একজন অশিক্ষিত, একজন স্বল্প শিক্ষিত আর একজন উচ্চশিক্ষিতের একই মূল্য? তাই যদি হবে তবে সবক্ষেত্রেই হোক। একজন শ্রমিক ঘন্টাপ্রতি যে সন্মানি পান একজন উচ্চপদস্ত চাকুরেকেও একই সন্মানি ও সুযোগসুবিধা দেয়া হোক। তাহলে আমার আপত্তি নাই, থাকার কথাও না। না হলে?

ভোটারদের গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হোক এখনই। আমি একটা প্রস্তাবনা রাখছি, বিস্তারিত বিশেষজ্ঞদের কাজ। ধরি, ক খ গ তিনভাগে ভোটার নির্বাচন হবে। প্রতিটি ভাগের মূল্যমান ধরি যথাক্রমে ১, ৩, ৫। রাষ্ট্রের যে কোন নাগরিকের বয়স আঠারো হলেই সে গ গ্রেডের ভোটার। এরপর প্রতিবছর অন্যান্য সব পরিক্ষার মতো একটি ভোটার পরিক্ষা দিয়ে তাকে বি এবং এ গ্রেডে নিয়ে যেতে হবে নিজেকে। এবং এটা করা খুব কঠিন কিছু না। ডিজিটাল যুগে অনলাইনেও পরিক্ষা নেয়া সম্ভব। তাতে লাভ?

লাভ অনেক। রাজনীতিটা তখন নীতি ঠিক রেখেই করতে হবে। লুঙ্গি, শাড়ি আর দুইশ টাকা দিয়ে ভাড়াটে মিছিলের লোক নেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ রাজনীতিকরা তখন চাই এ ও বি গ্রেডের ভোটারদের মন জয় করতে। কারণ পাঁচজন সি গ্রেডের ভোটারকে সন্তুষ্ট করার চেয়ে একজন এ গ্রেডের ভোটার সন্তুষ্ট করলে বেশি লাভ। আর গাধার পাল সংখ্যায় বেশি হলেও সিংহের ভোটের কাছে সিংহভাগ হেরে যাবে। স্বপ্ন দেখি...

বিয়ের আলোচনায় কনে পক্ষ পাত্র কি করে জানার আগে জানবে পাত্র কোন গ্রেডের ভোটার?...ভালো কথা,

এই একটামাত্র ভোটার গ্রেডিং সিস্টেম দিয়ে সমাজ, পৃথিবী কোন কিছুরই আমুল বদলে ফেলা সম্ভব না। এটি সিন্ধুর মধ্যে একটা বিন্দুমাত্র তবুও নতুন পৃথিবী গড়ার বড় একটা পদক্ষেপ হতে পারে ভোটার গ্রেডিং পদ্ধতি, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস (Trust)।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত