নারীর সম্ভ্রম রক্ষাই আমাদের সংস্কৃতি

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৭, ১৫:২০

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ বেড়েই চলেছে। বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনার রেশ না কাটতেই তিন জেলায় শিশু, স্কুল ছাত্রীসহ তিনজনকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে, মাদারীপুর সদর উপজেলায় এক দুলাভাইয়ের বিরুদ্ধে তার শ্যালিকা পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রীকে এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় এক যুবকের বিরুদ্ধে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া যশোরের মণিরামপুরে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। (কালের কণ্ঠ : ১৭-০৫-২০১৭)

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগোচ্ছে। শিক্ষার হার বাড়ছে। সার্বিকভাবে জনগণের জীবনযাত্রার মানও বাড়ছে। কিন্তু সামাজিক ও পারিবারিক অঙ্গনে অশান্তি এবং অস্থিরতাও বাড়ছে সমানতালে। শিক্ষার হার বাড়ছে, কমছে সততা। আপাতভদ্রলোক বাড়ছে, কমছে নিখাদ ভালো মানুষ। জনসংখ্যা বাড়ছে, কমছে ‘মানুষ’। আইন কঠোর হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও বাড়ছে; কমছে না অপরাধপ্রবণতা। মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবে জ্ঞান করতে না পারলে স্বাভাবিক নিয়মেই হারিয়ে যায় মানবিক মূল্যবোধ।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলাম। ইসলামে কখনোই অশ্লীলতা, পৈশাচিকতা ও আদিম পশুত্বকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। বরং মানবসভ্যতার ইতিহাসে অশ্লীলতা নির্মূলে ইসলাম সর্বাধিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অশ্লীল পোশাক, নৃত্য, জেনা-ব্যভিচার ও বল্গাহীন জীবনযাপন ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।

প্রকৃত মুসলিম সমাজব্যবস্থায় কখনোই অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা স্থান পায়নি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। ’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩২০)

ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ইসলামী সমাজে অন্যদের তুলনায় অনেক কম। তা সত্ত্বেও আমাদের পারিবারিক সুখ-বন্ধন কেড়ে নিতে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র দিন দিন বাড়ছে। বিবাহবহির্ভূত অবাধ জীবনাচারের কোনো সুফল চীন, জাপান, কানাডা ও পশ্চিমারা পায়নি। সেসব দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা সংকট দেখা দিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিয়ে-শাদির ব্যবস্থা না করা হলে সমাজে তা নানা অপরাধ উসকে দিতে বাধ্য। নারী-পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষণ সহজাত হলেও সামাজিক বিপর্যয় রোধে এর বিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণের তাগিদ কেউ অস্বীকার করে না। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন বিশেষত ইসলাম ধর্মের নির্দেশনা মেনে নেওয়ার বিকল্প নেই।

ধর্ষণ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের সঙ্গে যায় না। এটি পশ্চিমা দেশগুলোতে নিষিদ্ধ হলেও মহামারির আকার ধারণ করেছে। ধর্ষণ নিয়ে কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান দেখুন—‘ইউরোপে এক-তৃতীয়াংশ নারী ধর্ষণের শিকার। ’ (বিবিসি নিউজ : ০৫-০৩-১৪ ইং)

‘ইউরোপে প্রতি ২০ জনে একজন নারী ধর্ষণের শিকার। ’ (ঢাকা ট্রিবিউন : ১৪-০৩-২০১৪ ইং)

যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ষণের শিকার হওয়াদের মধ্যে ৯১ শতাংশ নারী ও বাকি ৯ শতাংশ পুরুষ। প্রতি তিনজনে একজন নারী ধর্ষিত হয়। ১৮ বছরের আগে ৪০ শতাংশ নারী এখানে ধর্ষণের শিকার হয়। প্রতি ১০৭ সেকেন্ডে একজন ধর্ষিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী দুই লাখ ৯৩ হাজার শিশু-কিশোরীর ধর্ষিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এখানে ৬৮ শতাংশ ধর্ষণের রিপোর্ট হয় না। ৯৮ শতাংশ ধর্ষকের শাস্তি হয় না। এমনকি কারাগারেও নারীদের স্বস্তি নেই। দুই লাখ ১৬ হাজার নারী প্রতিবছর কারাগারে ধর্ষিত হয়।

যুক্তরাজ্যেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বিস্তর। তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৮৫ হাজার মহিলা ধর্ষিত হয় গ্রেট ব্রিটেনে। প্রতিবছর যৌন হয়রানির শিকার হয় প্রায় ৪০ হাজার নারী। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়ালসে প্রতিদিন ২৩০ জন ধর্ষিত হয়। প্রতি পাঁচজন নারীর একজন ১৬ বছরের আগেই ধর্ষিত হয়। (দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ জুলাই ২০১৫)

বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই জাতীয় স্বার্থে ওই সব নরপিশাচ, বর্বর, দানব ও আদিম পশুদের রুখতেই হবে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। ‘সম্মতিতে যৌনতা হলে তা অপরাধ নয়’—এমন তত্ত্বের আলোকে অবাধ যৌনতাকে বৈধতা দিয়ে ধর্ষণ রোধ করা যাবে না। এটা অস্বীকার করা যাবে না, যেসব দেশে অবাধ যৌনতা আছে, সেসব দেশেই ধর্ষণের পরিমাণ বেশি। তাহলে আমাদের হুঁশ কবে ফিরবে?
লেখক : শিক্ষক, মাদরাসাতুল মদিনা
সূত্র: কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত