দুইজন মুক্তমনা কখনোই সকল বিষয়ে একমত হবেন না
প্রকাশ : ২২ জুন ২০১৬, ১৯:১৮
(১)
দুইজন মুক্তমনা কখনোই সকল বিষয়ে একমত হবেন না। এটা হতেই পারে না। আপনি যদি মনে করেন তসলিমা নাসরিনের সকল কথার সাথে আপনি একমত হবেন, তাইলে আপনি ওঁর উত্তম চ্যালা হয়তো হতে পারবেন, কিন্তু মুক্তমনা কভি নেহি। উল্টাটাও সত্যি। একজনের সকল কথারই আপনি বিরোধিতা করবেন সেটাও কঠিন কাজ। কখনো কখনো পরম শত্রুও চরম সত্যি কথাটা বলে ফেলে। একজন মুক্তমনা কেবল একটা প্রশ্নেই নিশ্চিতভাবে সকলের সাথে একমত হতে পারেন- যে মানুষের চিন্তা ও কথা বলার স্বাধীনতা বিঘ্নিত করা যাবেনা। কণ্ঠ রুদ্ধ করা যাবেনা, এমনকি যে যদি শয়তানের কণ্ঠও হয়।
প্রসঙ্গটা হচ্ছে গুলি করে মানুষ মেরে ফেলা- যেটার পোশাকি নাম দিয়েছেন আপনারা 'ক্রসফায়ার' বা 'কথিত বন্দুকযুদ্ধ', এবং সেই সাথে আমাদের তসলিমা নাসরিন।
তসলিমা যখন বলেন যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা জামাতের রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা উচিৎ না, আমি সেটা বুঝতে পারি। সেই প্রশ্নে আমি ওঁর সাথে একমত হয়তো হবোনা, কিন্তু ওঁর বক্তব্যের যে একটা সারবস্তু আছে সেটা আমি অস্বীকার করতে পারবো না। ইংরেজিতে ওরা বলে যে I can see where are you coming from, সেরকম আমি বুঝতে পারি ওঁর সেই বক্তব্যের ভিত্তিটা কি। সত্যি বলতে দ্বিধা নাই, সেই প্রসঙ্গটা আসলেই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক- যে ফ্যাসিস্ট বা নাজি পার্টি লাইনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করাটা নৈতিকভাবে ঠিক কিনা। জামাতের রাজনীতি বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা উচিৎ কিনা সেটাও একটা বৈধ বিতর্ক।
কিন্তু তসলিমা এই কথাটা- 'ক্রসফায়ারে জঙ্গি মরলে বাংলাদেশের মানুষ কান্দে ক্যানো? জঙ্গি মরসে মরুক। ক্রসফায়ারে ওমর মতিন মরসে, তার জন্য কেউ ত কান্তাসি না। প্যারিসের জঙ্গিগুলাও ক্রসফায়ারে মরসে , কেউ কান্দে নাই। বাংলাদেশের সুশীলদের দেখি জঙ্গি অনুভূতি প্রবল।' এইটা একটা নিতান্ত বালসুলভ কথা হয়ে গেছে। তিনি যে এনালজি দিয়েছেন সেটাও ঠিক না আর যেটা উনি স্বীকৃত ঘটনা ধরে নিয়েছেন 'ক্রসফায়ারে জঙ্গি মরলে মানুষ কান্দে' এই কথাটাও ঠিক না। ফলে ওঁর সিদ্ধান্তটি- 'বাংলাদেশের সুশীলদের দেখি জঙ্গি অনুভূতি প্রবল', এটি একটি ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
(২)
প্রথমে ক্রস ফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধের ব্যাপারটা বলে নিই। আসলেই কেউ যদি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়, তাইলে এক কথা। ওমর মতিন বা প্যারিসের সন্ত্রাসীদের হাতে বন্দুক ছিল, ওরা গুলি করছিল। ওরা আসলেই পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মরেছে। কিন্তু আমাদের এখানে যেসব লোককে পুলিশ নিজের হেফাজতে থাকা অবস্থায় গুলি করে মারছে ওরা তো বন্দুক যুদ্ধে মরে না। ওদেরকে যে পুলিশঈ গুলি করে মারছে সে কথাটা কি ইতং বিতং যুক্তি দিতং বুঝাতে হবে? না। আমাদের এখানে ক্রস ফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধের নামে যেগুলি হচ্ছে সেগুলি নিতান্তই গুলি করে মেরে ফেলা।
এরপরে দেখেন আমাদের এখানে আমরা যারা ক্রস ফায়ারে হত্যা করার বিরোধিতা করছি আমরা কি জঙ্গিদের জন্য কাঁদছি? জি না জনাব। যে লোকটাকে পুলিশ গুলি করে মারছে ওর যদি মৃত্যুদণ্ড হতো তাইলে আর আমার এই কান্না দেখতেন না। আমাদের কান্নাটা হচ্ছে বিচার হচ্ছে না বলে। কেননা বিনা বিচারে যখন নির্বাহী বিভাগ একজন মানুষকে মেরে ফেলে, সেই মানুষটা নিরপরাধী হিসাবেই মারা যায়। জঙ্গি হিসাবে না।
বিচার হওয়াটা জরুরী। কেন? কারণ বিনা বিচারে মানুষ মারা একটা হত্যাকাণ্ড। শাস্তি না। শাস্তি দিতে হলে বিচার করতে হয়। বিচার জিনিসটা কি সেটা একটু বিবেচনা করেন।
আমরা যখন একটা রাষ্ট্র গঠন করি তখন আমরা কিছু কিছু কাজকে অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করি। শুধু কাজকে অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করি বললে একটু ভুল হবো- আসলে একেকটা অপরাধ হচ্ছে এক সেট কাজ সেই সাথে একেকটা মানসিক অবস্থা বা state of mindএর সমন্বয়। যেমন ধরেন কাউকে যদি আপনি হত্যার উদ্যেশ্যে লাঠি দিয়ে মারেন আর সে যদি মরে যায় সেটা একটা হত্যাকাণ্ড, তাঁর জন্যে আপনার মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজা হতে পারে। আবার আপনি যদি কাউকে খোঁড়া করে দেওয়ার উদ্দেশে লাঠি দিয়ে মারেন আর বেচারা যদি মরে যায় তাইলে সেটাও হত্যাকাণ্ড। কিন্তু আপনি লাঠি দিয়ে মারেন ঠিকই, কিন্তু লোকটাকে হত্যা করা বা খোঁড়া করে দেয়া আপনার উদ্দেশ্য ছিল না, সেটাও একটা অপরাধ হবে বটে, কিন্তু অপেক্ষাকৃত লঘু অপরাধ।
এই যে একেকটা মানসিক অবস্থার সাথে একেকটা কাজের সেট মিলিয়ে একেকটা অপরাধ হয়, এটা কে নির্ধারণ করেছে। আমরা সকলে মিলেই করেছি। রাষ্ট্রের আইন বিভাগকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি এইসব আইন বানানোর জন্যে। আর নির্বাহী বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছি যে এইসব আইন কেউ ভঙ্গ করলে তাকে ধরে বিচার বিভাগের কাছে নিয়ে যাবে আর আর আমরাই সংবিধা করে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছি এইসব অপরাধের বিচার করার জন্য।
(৩)
বিচার বিভাগ যে কাজটা করে সেটাকেই বিচার বলে। বিচার বিভাগ কি কাজ করে? বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগকে জিজ্ঞাসা করে- এই যে আপনারা বলছেন এই লোকটি মানুষ মারার উদ্দেশ্যে বোমা ফাটিয়েছে, সেটা আমি কি করে বুঝব? নির্বাহী বিভাগ তখন বলে যে- এই যে দেখেন আমি এইসব আলামত পেয়েছি, আর এই যে স্বাক্ষিরা আছে ওরা দেখেছে, আর বোমার খোসার গায়ে ওর আঙ্গুলের ছাপ পেয়েছি ইত্যাদি। বিচার বিভাগ তখন আসামীকে জিজ্ঞাসা করে- বাপু হে, এই যে সরকার বলছে তুমি নাকি মানুষ মারার উদ্দেশে ঐখানে বোমা ফাটিয়েছ, এইরকম স্বাক্ষ্য প্রমাণও পাওয়া গেছে, তোমার বক্তব্য কি? আসমাই হয়তো বলবে যে, না আমি তো আসলে জিনিসটাকে টমেটো মনে করে আমার তালত ভাইয়ের দিকে ছুড়ে দিয়েছিলাম, জিনিসটা যে বোমা আমি জানতাম না আর কাউকে মারার উদ্দেশ্যও আমার ছিল না।
বিচার বিভাগ দুই পক্ষের কথাবার্তা শুনবে। স্বাক্ষ্য প্রমাণ দেখবে। দেখে যদি মনে করে যে অভিযোগ প্রমাণিত তখন আসামীকে প্রথমে দোষী সাব্যস্ত করবে তারপর তাকে সাজা দেবে। আর জজ সাহেবদের যদি মনে হয় যে না, লোকটা সম্ভবত অপরাধটা করেনি- তাইলে তাকে ছেড়ে দিবে। এই যে একজন জজ সাহেব একটা রায় দিলেন, সেটার বিরুদ্ধে আবার আপীল হতে পারে, সেই আপীলের রায়ের বিরুদ্ধেও আপীল হতে পারে। তারপর হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
এই কাজটা কেন জরুরী? মানুষের অধিকার বা লিবার্টি রক্ষার জন্যই এই পুরো প্রক্রিয়াটা চালু রাখা জরুরী। আমার আপনার লিবার্টি রক্ষা করার জন্যই এইসব আড়ম্বর অনুসরণ করে বিচার করতে হয়। যাতে করে একজন নিরপরাধীও সাজা না পায়। এই জন্য বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগকে আলাদা রাখতে হয়। নির্বাহী বিভাগের হাতে বিচারের দায়িত্ব দিতে পারবেন না। কেননা নির্বাহী বিভাগ তো অভিযোগকারী, তাকে বিচারের দায়িত্ব দিলে সে তো তার নিজের অভিযোগকে ভুল বলবে না। অভিযোগটি ঠিক কিনা সেঁতা দেখতে হবে আসামী আর অভিযোগকারীর বাইরে তৃতীয় আরেকজন- জজ।
(৪)
আর এই বিচারটা করতে হয় প্রকাশ্যে- যেন সকলেই দেখতে পায়, জানতে পারে লোকটার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আর সেই অভিযোগের সমর্থনে কি স্বাক্ষ্য প্রমাণ আছে আর কি যুক্তিতে জজ সাহেব লোকটাকে সাজা দিল বা খালাস করে দিল। ইংরেজিতে আমরা বলি যে বিচার কেবল করলেই হয় না, বিচারটা হতে হবে দৃশ্যমান যাতে সকলের কাছে প্রতীয়মান হয় যে না, আসলেই এখানে ন্যায়বিচার হয়েছে। বিচার যদি প্রকাশ্যে না হয় আর যদি দৃশ্যমান না হয়, তাইলে সেটা ন্যায়বিচার হলো না। এজন্যে দেখবেন, অল্প কিছু বিষয় ছাড়া, সকল বিচারিক কর্মকাণ্ডই খোলা আদালতে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হয়।
বিচার প্রকাশ্যে করতে হয় কেন? দৃশ্যত ন্যায়বিচার হলো কিনা সেটা জনগণের জানা প্রয়োজন কেন? কারণ ঐ যে প্রথমেই বলেছি- আমরা যখন রাষ্ট্র গঠন করেছি তারই অংশ হিসাবে আমরাই তো কতিপয় কাজকে অপরাধ ঘোষণা করেছি আর সেইসব কাজের জন্য শাস্তির বিধান করেছি। সেকারণে যখন একজন মানুষ দেশে একটা অপরাধ করে সে আসলে আমাদের সকলের বিরুদ্ধেই অপরাধটা করে। সেকারণে মামলা পুলিশেই চালাক আর পিপি সাহেবেরাই চালাক, মামলার বাদি তো আমিও। আমাকে জানতে হবে না নয়া বিচার হচ্ছে কিনা? আর এই যে জজ সাহেবরা বিচার করছেন, ওরা যে ঠিকমত বিচার করছেন সেটাও তো আমাদের জানতে হবে। এটা আমাদের সকলের অধিকার। বিচার প্রকাশ্যে হতে হবে।
আর সবার উপরে যে কারণটা- একটা মানুষও যেন বিনা অপরাধে সাজা না পায়। আমরা যখন রাষ্ট্র গঠন করি তার মৌল ভিত্তিই হচ্ছে যে আমাদের লিবার্টি রাষ্ট্র খর্ব করতে পারবে না। এখন আমাদের মধ্যেই একজনের বিরুদ্ধে যখন রাষ্ট্র সাজা আরোপ করতে চায়, তখন তো আসলে নির্বাহী বিভাগ আমাদেরই একজনের লিবার্টি হরণ করতে চাচ্ছে। যে লিবার্টি রক্ষার জন্যে রাষ্ট্র বানিয়েছি, সেই লিবার্টি তো চোট করে হরণ করতে দেওয়া যায়না। এই কারণে একজন নাগরিকের একদিনের লিবার্টি হরণ করতে হলেও সরকার আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, লোকটা আসলেই অপরাধী।
আর একটা লোকের প্রাণ হরণ করবেন এইটা তো একটা চূড়ান্ত শাস্তি। এইরকম একটা শাস্তির সিদ্ধান্তের আগে তো একটু বিস্তারিতভাবে বিচারটা করার দরকার, নাকি? একদল পুলিশ অফিসার মনে করলো যে আমি ভয়ংকর একটা অপরাধ করেছি আর আমাকে গুলি করে মেরে ফেলল এটা তো হতে পারেনা। এইরকম কাজ তো আমার রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার সামিল।
(৫)
কেন বলছি এই ধরনের কাজ রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার সামিল? কারণ রাষ্ট্রের সৃষ্টিই হয়েছে আমাদের লিবার্টি রক্ষার প্রয়োজনে। এই কারণে দেখবেন যে বিচারের এত ইলাবরেট ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই যে দেখছেন মুল রায়ের বিরুদ্ধে আপীল আবার আপীলের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল এইসব কেন করা হয়েছে? যাতে করে একজন দুইজন মানুষের ভুলের জন্য কোন নাগরিকের লিবার্টি খর্ব না হয়। একজন জজ সাহেবও মানুষ, তিনিও ভুল করতে পারেন, সেজন্যে আপীলের বিধান রাখা হয়েছে। এবং দেখবেন যে নিতান্ত ছোটখাটো অপরাধগুলি ছাড়া অন্য সব বিচারেই একেকটা আপীলের ধাপে বিচারকের সংখ্যাও বারতে থাকে।
সেশন জজ একা যে রায় দেন, তার বিরুদ্ধে আপিল শুনতে হলে হাই কোর্টে দুইজন জজ বসেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেট ডিভিশনে আপীল শুনতে কম করে হলেও তিনজন জজ বসেন। কেন? যাতে করে ভুলের সম্ভাবনা কমে আসে। কেন? কারণ এইসব রায়ে একজন নাগরিকের লিবার্টি জড়িত। লিবার্টি রক্ষা করা সবচেয়ে জরুরী। একজন জজের চেয়ে দুইজন একসাথে হলে ভুলের সম্ভাবনা কমে। দুইজনের চেয়ে তিনজন হলে ভুলের সম্ভাবনা আরও কমে আসে। দেখেন, আমরা কিন্তু শুধু ছোট জজের বিপরীতে বড় জজ বসিয়েই ক্ষান্ত হইনাই। আমরা আপীলের প্রতিটা ধাপে জজের সংখ্যাও বাড়িয়েছি। কেন? ঐ যে বললাম, লিবার্টি।
এর পরেও কি ভুল হয় না? হয়। হতেই পারে। এইজন্য বিচার প্রক্রিয়ার মৌলিক একটা নীতি হচ্ছে সাধারণ ফৌজদারি মামলায় অপরাধ প্রমাণ করতে হয় সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে। জজ সাহেবেদের মনে যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে যে হয়তো এই লোকটা এই অপরাধটি নাও করতে পারে, তাইলেই উনারা আসামীকে ছেড়ে দিবেন। নীতিটা হচ্ছে যে প্রয়োজনে অসংখ্য অপরাধী আইনের ফাক গলে বেরিয়ে যাক, কিন্তু একজন নিরপরাধীও যেন অন্যায়ভাবে সাজা না পায়। কেন? লিবার্টি।
যেখানে মানুষের লিবার্টি জড়িত না- যেমন সাধারণ দেওয়ানী মামলা বা বাণিজ্যিক মামলা, সেইসব ক্ষেত্রে কিন্তু সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে মামলা প্রমাণ করতে হয়না। সেইসব ক্ষেত্রে জজ সাহেব দুইপক্ষের বক্তব্যের মধ্যে যারটা অধিক গ্রহণযোগ্য মনে তার তার পক্ষেই রায় দিয়ে দিবেন। আইনের চোখে মহামূল্যবান জমি বা শত কোটি ডলার কোনটাই মানুষের লিবার্টির সমান গুরুত্বপূর্ণ না।
(৬)
এত কথা কেন বলছি। লিবার্টি জিনিসটা মহা মূল্যবান এবং বেঁচে থাকার অধিকার হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান অধিকার। এই অধিকারটা একজন দুইজন পুলিশ অফিসারের গোপন সিদ্ধান্তে খর্ব করতে দেওয়া যায়না। সেই পুলিশ যত সৎ হোক আর যত বড় অফিসারই হোক। আপনি যদি আজকে ঐ জঙ্গি সন্দেহ করে এই ছেলেদের জন্যে প্রতিবাদ না করেন কালকে আমাকে যদি পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে বিনা বিচারে মারতে থাকে তখন আপনি কোন মুখে প্রতিবাদ করবেন?
আর এইরকম গোপনে সিদ্ধান্ত নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার আরও ভয়াবহ বিপদ আছে। যেই লোকটাকে পুলিশ জঙ্গি মনে করে গুলি করে মেরে ফেললো সে যে আসলেই জঙ্গি সেটা আপনি কি করে নিশ্চিত হলেন? পুলিশের কথা বিশ্বাস করতে হবে আমাকে? মাফ করবেন। আমি জানতে চাই পুলিশ কিসের ভিত্তিতে তাকে জঙ্গি মনে করেছে। আর পুলিশের অভিযোগের বিরুদ্ধে সেই লোকটার কি বক্তব্য আছে সেটাও জানতে চাই। আর এইসব শুনে একজন জজ সাহেব কি রায় দেন কি যুক্তিতে দেন সেটাও জানতে চাই।
বিচার প্রক্রিয়ায় দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোন লোকই অপরাধী না। যে লোকটাকে জঙ্গি বলে পুলিশ গুলি করে মেরেছে, যে নিরপরাধী হিসাবেই মরে গেল। আমার গলায় যতদিন আওয়াজ থাকবে আমি বলেই যাব যে বিনা বিচারে কাউকে মারা অপরাধ- অপরাধ। যে পুলিশরা গুলি করে এরকম মানুষ মেরেছে ওরা খুনি, খুন করেছে। যারা এইরকম কাজের নির্দেশ দিয়েছে ওরা খুনের নির্দেশ দিয়েছেন। মৃতব্যক্তি যদি আমার পরম দুশমনও হয়, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীও হয়- তবুও আমি একই কথা বলবো। পুলিশ বিনা বিচারে মারতে পারবে না- বিচার হতে হবে।
তসলিমা নাসরিন ভুল বলেছেন। আমি ওঁর বেশিরভাগ কথাই পছন্দ করি এবং সমর্থন করি। কিন্তু এই প্রশ্নে স্পষ্টতই তসলিমা ভুল বলেছেন। এই ভুলটা বিপদজনক। কারণ ভুলটা করেন তসলিমা নাসরিন, যার ভক্তরা বেশিরভাগই লিবার্টির পক্ষের লোক। তসলিমা যদি পুলিশের এইসব গুণ্ডামিকে সমর্থন করেন, তাইলে আমার বন্ধুদের মধ্যেই অনেকে বিভ্রান্ত হবেন।
যারা লিবার্টির বিপক্ষের লোক, ওরা লক্ষজন মিলেও যদি মন্দ কাজের সমর্থন করে তাতে যত ক্ষতি হয়, একজন তসলিমা ভুল করে হলেও পুলিশের এইসব অন্যায় কাজকে সমর্থন করে তারচেয়ে অনেক বড় ক্ষতি করতে পারেন। ভয়টা সেখানেই।