আর্জেন্টিনার সেই জয়টা ছিল কলঙ্কিত

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০১৮, ১২:২৩

গতকাল খেলা আর্জেন্টিনারও ছিল, পেরুরও ছিল, তবে পেরু ও আর্জেন্টিনার মধ্যে ছিল না। আমাদের কপাল ভালো যে এই বিশ্বকাপে পেরু আর আর্জেন্টিনার মধ্যে কোন খেলা হবে না। ফুটবল ইতিহাসের কলঙ্ক পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। কলঙ্কটা কি? খেলাধুলার খোঁজখবর যারা রাখেন তারা জানার কথা ১৯৭৮ সনের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা আর পেরুর সেই পাতানো খেলার কথা। বয়স্ক যারা আছেন, আপনাদের হয়তো অনেকের মনেই আছে আরকি। ১৯৭৮ এর বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনাই জিতেছিল, কিন্তু সেই জয়টা ছিল কলঙ্কিত- চিটিং করে জেতা।

১৯৭৮ এর বিশ্বকাপ হয়েছিল আর্জেন্টিনায়, সেটাতে কাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা।

পেরু আর আর্জেন্টিনার খেলাটার কথা বলি। গ্রুপ পর্বের শেষ খেলা, ফাইনাল রাউন্ডে যাওয়ার জন্যে আর্জেন্টিনার দরকার ছিল এই খেলায় অন্তত চার গোলের ব্যাবধানে জেতা। আর্জেন্টিনা সেই খেলায় জিতেছে ৬-০ গোলে। খেলাটা যে পাতানো ছিল সেটা খেলা চলাকালীন সময়েই একরকম দৃশ্যমান ছিল। আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পর দেখা গেল নিশ্চিত গোলের সুযোগগুলিতেও পেরুর খেলোয়াড়রা রহস্যময় কারণে একের পর এক সেগুলি মিস করছেন আর পেরুর গোলকিপারও কি এক রহস্যময় কারণে সহজ বলও ঠেকাতে পারছিল না।

কি ছিল সেই রহস্যময় কারণ? একাধিক কারণের কথা জানা যায়। ব্রিটিশ মিডিয়ার রিপোর্ট হচ্ছে, আর্জেন্টিনার সামরিক ডিক্টেটররা সেসময় পেরুকে উপহার দিয়েছে কয়েক জাহাজ খাদ্য শস্য। আর্জেন্টিনায় ফ্রিজ করে রাখা পেরুর বিশাল বিশাল সব ব্যাংকএকাউন্ট একই সময় খুলে দেওয়া হয়। আর আরেকটা কাজ করেছিল আর্জেন্টিনার মিলিটারি ডিক্টেটররা। পেরুর যেসব বামপন্থী বিপ্লবী নেতারা সেসময় আর্জেন্টিনায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন, সেরকম ১৩ জনকে ধরে ওরা পেরুতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। অভিযোগ হচ্ছে যে এইসবের বিনিময়েই পেরু খেলাটা ছেড়ে দেয়।

আরেকটা অভিযোগ করেছে কলম্বিয়ার একজন বড় ড্রাগ ডিলার ওর আত্মজীবনীতে। পেরুর খেলোয়াড়দেরকে নাকি দেওয়া হয়েছিল মোটা অঙ্কের নগদ টাকা। পেরুর ক্যাপ্টেন অবশ্য সেটা অস্বীকার করেছে।

এরপরই আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠে। আর সেই খেলাটায় যদি আর্জেন্টিনা এতো বড় মার্জিনে না জেতে তাইলে ফাইনালটা হতো ব্রাজিল আর হল্যান্ডের মধ্যে। ব্রাজিল সমর্থকদের বেশিরভাগই জানে, আর্জেন্টিনায় ওদেরকে চোট্টামি করে ফাইনালে ওঠা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

আর ফাইনালে যে ওরা হল্যান্ডের সাথে জিতেছে সেটাও কিন্তু ফেয়ার খেলা ছিল না। আর্জেন্টিনার মিলিটারি ডিক্টেটর গুণ্ডামি করেই নিশ্চিত করেছিল যাতে হল্যান্ড জিততে না পারে। কিভাবে? প্রথমেই ওরা ইয়োহান ক্রুইফকে আর্জেন্টিনায় যেতে দিল না। গুণ্ডারা গিয়ে বন্দুকের মুখে ক্রুইফকে আটকে রেখেছে, 'আর্জেন্টিনায় যাবি না'। ক্রুইফের নিজের জবানিতে "I had a rifle at my head, I was tied up, my wife tied up, the children were in the apartment in Barcelona,"

সেবছর হল্যান্ড ছিল ফেভারিট সব হিসাবেই ওদেরই জেতার কথা। আর হল্যান্ডের জন্যে ক্রুইফ যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন যে তো আর বুঝিয়ে বলার কিছু নাই। আর্জেন্টাইন গুণ্ডারা ক্রুইফকে খেলতে দিল না। আপনি যদি অনুমান করেন মেসিকে আটকে রাখলে আর্জেন্টিনা দলের আজকে কি হাল হবে বা রোনাল্ডোকে আটকে রাখলে পর্তুগাল?

না, খেলা তো খেলাই। মাঠে খেলেও হয়তো আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিততে পারতো সেবার। কেন নয়? ফেভারিটরাঈ তো সবসময় কাপ জেতে না। কিন্তু ১৯৭৮এর এই কাপ জেতার সকল গৌরবই ম্লান হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার সেইসব গুণ্ডামি আর চোট্টামি। কলঙ্ক ঢেকে দিয়েছে ওদের গৌরবকে। এরপর আর্জেন্টিনার হয়ে যখন ম্যারাডোনা খেলতে এসেছেন- এই ঈশ্বরপ্রতিম প্রতিভার ছটায় আর্জেন্টিনার সেইসব কলঙ্ক অনেকটা ঢাকা পড়েছে বটে, কিন্তু মুছে যায়নি একদমই।

এগুলি কিন্তু এমনিই বাজারি গুজব না। একটু গুগল করলেই পাবেন, দায়িত্বশীল সব পত্রিকা, ইয়োহান ক্রুইফের নিজের সাক্ষাৎকার, পেরুভিয়ান সেনেটরের বক্তৃতা এইরকম গুরুত্বপূর্ণ সব সূত্র।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত