‘দুই চারটা হিন্দুকে মুসলমান বানান আগে’

এটি আওয়ামী লীগের এক নেতার ভাষ্য। সেই নেতার কাছে গিয়েছিলেন কয়েকজন তাবলীগের হুজুর। তো ওই আওয়ামী লীগের নেতা তাদের বলেছেন -‘সাইদী সাহেব এমনে খারাপ হলেও অনেক হিন্দুকে মুসলমান বানিয়েছে। আপনারা কি পেরেছেন? আগে দুই চারটা হিন্দুকে মুসলমান বানান!’

আমি নিজ কানে শুনলাম এবং দেখলাম আওয়ামী লীগের ওই নেতা এই কথা বলছেন।

হিন্দুকে মুসলমান বানানোর কথা যে তিনি বলেছেন, এতে আমি মোটেই অবাক হইনি। আমি দীর্ঘদিন ধরে মাইনরিটি এবং হিন্দুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছি। আমি জানি বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেমন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় নিজ চোখে দেখেছি আমার ক্লাস মেটরা হিন্দু বন্ধুদের হাসি ঠাট্টার ছলে হলেও বলতো
-কিরে গুরুর মাংস খাবি?

আমি জানি এই হাসি ঠাট্টার ছলে বলা কথাটার মানে কি। এর মানে হচ্ছে, আয় তোকে হাফ মুসলমান বানিয়ে দেই। পারলে জোর করেই বানিয়ে দেয়! আর নিয়মিত “মালাউন” বলা তো তেমন কিছুই না।

আমি বিশ্বাসী মানুষ, নিয়মিত নামাজ পড়ি। আমার মাথায় কোন ভাবেই আসে না, বাংলাদেশের মানুষ গুলো কিভাবে এতোটা সাম্প্রদায়িক হয়ে বেড়ে উঠে! আমার ধারণা ভারতীয় উপমহাদেসের দেশ গুলোর মতো সাম্প্রদায়িক মন মানসিকতার মানুষ এই পৃথিবীতে পাওয়া দুষ্কর হবে! তবে হিন্দুদের মুসলিম বানানোর যেই কথা আওয়ামী লীগ এই নেতা বলেছেন, তাতে আমি মোটেই অবাক হইনি। ভাষাগত ডিসকোর্স নিয়ে কাজ করি বলে; আমি বরং তার ভাষাগত দিকটাই ব্যাখ্যা করছি।

খেয়াল করে দেখেন এই নেতা বলেছেন- “দুই চারটা” হিন্দুকে মুসলমান বানাতে। অর্থাৎ হিন্দুদের তিনি “দুই, চারটা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অনেকটা বস্তুর মতো। যেমন ধরুন আপনি দুই চারটা পাতিল কিনলেন, চেয়ার কিনলেন কিংবা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু কিনলেন! অর্থাৎ তিনি হিন্দুদের আসলে মানুষই মনে করছেন না।

অথচ একজন চিহ্নিত অপরাধীকে তিনি বলেছেন “সাইদী সাহেব” খারাপ হলেও অনেক হিন্দুকে মুসলমান বানিয়েছেন! তিনি সাইদীকে খারাপ বলার পরও কিন্তু “সাহেব” বলেছেন! অর্থাৎ তিনি তাকে সম্মান করছেন!

এই আওয়ামী লীগ নেতার কাছে হিন্দুরা মানুষ না, বস্ত সমতে হলেও; সাইদী কিন্তু মস্ত বড় “সাহেব!”