আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাঙালীর অহঙ্কার
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০১৬, ১৩:৫৯
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাঙালীর অহঙ্কার।। ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন।।
ফুঁসে ওঠা মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েছে-কমেনি।
৩১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখের মধ্যে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটির দখল হস্তান্তর করতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে স্থান সংকুলান না হওয়াকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের জায়গা কি এতই কমে গেছে, যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক কার্যক্রম ব্যহত করে বিচারপতি, রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় চেম্বার/দপ্তরের ব্যবস্থা করতে হবে? তাহলে যখন সুপ্রিম কোর্টের দখলে সড়ক ভবন ছিলোনা তখনও তো এমন কথা আসেনি? এর পেছনে কি কোনো অদৃশ্য অভিপ্রায় আছে? ঘর পোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় সেই অবস্থা আমাদের সকলের।
দেশের মানুষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই নানারকম অসঙ্গতি লক্ষ্য করে আসছে। কাটছে না শঙ্কা। শঙ্কারও নানান কারণ রয়েছে, যা ইতোমধ্যেই প্রমাণীত সত্য। কাজেই যে কোনো সময়ই অঘটন ঘটতে পারে। তবে এরকম পরিস্থিতিতে জনতার প্রতিরোধ মোকাবেলার ক্ষমতা কেউ রাখেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে; দৃষ্টান্ত ২০১৩।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার আপোষ-রফার রায় ও তার পরিবারের আস্ফালন বাংলাদেশ দেখেছে, জনতার প্রতিরোধ সেই আস্ফালন রুখে দিয়েছে। গণজাগরণ কাদের মোল্লার প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করেছে। এতবড় একটি ঘটনার পরও ষড়যন্ত্র থামেনি-চলছেই; যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ট্রাইব্যুনালের ভিতর-বাইরে একইসাথে কলকাঠি নড়ছে।
জনগণ মনে করে, দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারা শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবেনা-এমন একটি সন্ধি প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল রয়েছে, যা দূর করতেই কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের আন্দোলন এবং জনতার অতন্ত্র পাহারা। কিন্তু তাতে কী? রাজাকার শিরোমনি গোলাম আযমের অপরাধ প্রমাণীত হওয়ার পরও সর্বোচ্চ শাস্তির পরিবর্তে শুধুমাত্র বয়সের অযুহাত তুলে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা, যুদ্ধাপরাধী-নারী ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিদ্বেষী-সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা সাইদীর বিচারে ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত ফাঁসির রায় আপিল বিভাগে কমিয়ে দেওয়া এবং এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদন দীর্ঘ সময় ঝুলিয়ে রাখা, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিচার প্রলম্বিত করার সুযোগ দেওয়া, যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের বিচারে সংগঠন হিসেবে জামাতের অপরাধের প্রমাণ স্বত্বেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া, প্রসিকিউশনের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের খসড়া প্রকাশিত হওয়া, রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধা বহাল থাকা অবস্থায় শুধুমাত্র অবসরের শর্তে সদ্য বিদায়ী বিচারপতির যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় অংশ নেওয়া ইত্যাদি ঘটনা অব্যাহতভাবেই ঘটছে।
এমনকি জনগণের প্রত্যাশায় ছাই দিয়ে এরই মাঝে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা একটি কমিয়ে দেওয়া এবং সর্বপরি বর্তমান ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরের পত্র জারির বিষয়টি আমাদের হতাশ করেছে। এ ধরনের পদক্ষেপ যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করে আগামিতে যুদ্ধাপরাধী ও জামাত-শিবিরের কর্মকাণ্ডের অনস্বীকার্যতাকে প্রমাণের অভিপ্রায় বলেই মনে হয়।
তাই যদি না হবে, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের জায়াগায় পরিচালিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কী এমন সমস্যা তৈরি করেছে যে এটি সরিয়ে দিতে হবে? যদি স্থানাভাবের কারণেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরের পত্র জারি হয়ে থাকে তাহলে তো বলতেই হয়, যখন সুপ্রীম কোর্টের এক বিশাল জায়গা সড়ক ভবনের দখলে ছিলো তখন তো বছরের পর বছর কোনো সমস্যা হয়নি! এমন কি সেই জায়গা পুনুরুদ্ধারের পর বিচার ব্যবস্থাপনায়ও আমূল কোনো পরিবর্তন আসেনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাঙালীর অহঙ্কার। এটি যেখানে শুরু হয়েছে সেখানেই তার সমস্ত কাজ করে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে; আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার দেশীয় আইন ও ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন করার শক্তি-সামের্থের জানান দিবে পুরাতন হাইকোর্ট ভবন (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন)। বিশ্ব গাইবে মানবতা রক্ষায় বাংলাদেশের জয়গাঁথা। কাজেই এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে কেউই রেহাই পাবেনা-ফুঁসে ওঠা মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েছে-কমেনি।