হিন্দুদের কেনো ভালোবাসতে হবে?
প্রকাশ : ১২ মে ২০১৬, ২০:১৮
এক পাকিস্তানি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, 'আমরা নাকি হারিয়ে যাওয়া ভাই।' কথাটা শুনেই মেজাজ খারাপ হয়েছিল বটে। সেই ১৯৪৭ থেকে বর্তমানের সব ঘটনা তুলে ধরার পরও তিনি মানতে নারাজ। পাকিস্তানের পাঠ্যপুস্তকে তিনি পড়েছেন, ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ভারতীয় সরকার কীভাবে চুকড়িবুকড়ি করে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। সেই ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তাকে বিস্তারিত বলার পরও তিনি মানতে নারাজ।
ভারতকে তিনি দুচক্ষে সহ্য করতে পারেন না। হিংস্রতা দিয়ে কোন সময় ভালোবাসা ও সমাধান পাওয়া যায় না এটা বলার সাথে সাথে তিনি বলেছিলেন, ভারত হচ্ছে মাদার চোদ। হিন্দুদের কেনো ভালোবাসতে হবে? ভালোবাসা শুধুমাত্র ভাইদের জন্য অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য।
পাকিস্তানি ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, ভালোবাসা যদি শুধুমাত্র মুসলমানদের প্রতি মুসলমানদের হয়ে থাকে তাহলে পাকিস্তানে কেনো শিয়ারা সুন্নিদের উপর বোমা হামলা চালায়? সুন্নিরা কেনো শিয়াদের উপর বোমা ফেলায়? মুসলমানরা কীভাবে মুসলমানদের হত্যা করে? পাকিস্তানিরা কেনো এখন সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা চায়? পাকিস্তানে কীভাবে শতাধিক জঙ্গি সংগঠন বিরাজমান? পাকিস্তানে কীভাবে ও কেনো ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গরা একে অপরের শত্রু? তাহলে মুসলমানরাই কেনো মুসলমান ভাইদের রক্তে মেতে আছে? সারা বিশ্বের মুসলমানপ্রধান দেশগুলোর চিত্র তুলে না'ই ধরলাম- পাকিস্তানে কেনো এমন অবস্থা?
পাকিস্তানি ভদ্রলোকটি প্রতিত্তুরে দুটি বাক্য ব্যয় করেছিলেন, প্রথমত শিয়ারা আসল মুসলমান নয়। দ্বিতীয়ত, আমি নাকি ভারতীয় হিন্দু।
মানুষকে ভালোবাসার জন্য ধর্ম পরিচয় কখনোই মুখ্য নয়। ধর্মের ভয়ভীতি, বর্ডার, কাঁটাতার, সেনাবাহিনী দিয়ে মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, আবেগ-অনুভূতি রোধ করা যায় নি, যাবেও না। মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে; আপন করে নেবে, হোক সে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ইহুদি-শিয়া-সুন্নি-দলিত-আদিবাসী। মানুষ করেছে মানুষের সাথে মানুষের বিভাজন, ভালোবাসা সর্বজনীন।