নোট বাতিল পরবর্তী গুজবঃ একটু তলিয়ে দেখা

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৪০

সুজন ভট্টাচার্য

নোট বাতিলের পর তিন সপ্তাহর বেশি পার হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে দু দিন কষ্ট করতে বলেছিলেন। রাজনীতিকদের প্রতিশ্রুতির যে কোনো সময়সীমা থাকে না, অভিজ্ঞতায় আমাদের জানা। দু দিন পরেই তিনি পঞ্চাশ দিনের কথা বললেন। এখন পাঁচ বছরের গল্পটার জন্য আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়। নগদের অভাবে ক্ষেতমজুরদের মজুরি না মেটাতে পারার গ্লানিতে যদি কেউ আত্মহত্যা করেন, সেটাকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। আর নয়া-অর্থনীতির সূচনা থেকে প্রতিবছর এতসংখ্যক কৃষক দেনার দায়ে আত্মহত্যা করেন যে আমাদের গা- সওয়া হয়ে গেছে। আসুন, আমরা বরং মুকেশ আম্বানী কবে বিশ্বের সবথেকে ধনী মানুষ বলে স্বীকৃত হবেন, তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি।

শুরু থেকেই তথ্য ও যুক্তির বিস্তারে আমি বলে আসছি, নোট বাতিলের এই ঘটনায় দুটি সুফল হবে। এক, জাল টাকার হাত থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া যাবে; আর দুই, কালো টাকার একটা সামান্য অংশ আটকে যাবে। তখন কেউ কেউ বলেছিলেন, তাই বা কম কী? সত্যিই তো, কিছুই যখন হয় না, তখন এটাতেই সন্তুষ্ট থাকতে অসুবিধে কোথায়? অসুবিধে কোথাও নেই, যদি না একইসাথে দেখতাম -

ক) ডাল কেলেংকারিতে জড়িত ব্যবসায়ী ও প্রধানমন্ত্রীর ঘণিষ্ঠ আদানী গ্রুপকে ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ছাড় দেওয়া
খ).নোট বাতিলের পরবর্তী পর্যায়ে স্টেট ব্যাঙ্কের বড় ব্যবসায়ীদের নতুন করে ৭০০০ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া ঋণকে তামাদি করে দেওয়া
গ) ৫০০ কোটি টাকার উপরে ঋণের কিস্তি মেটানো হচ্ছে না, এমন সব বড় ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা প্রকাশ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রিয় সরকারের বক্তব্য পেশ - এরা কেউই ইচ্ছে করে ঋণ শোধ করছেন না, এমন নয়; কাজেই নাম প্রকাশ করা উচিৎ নয়।
ঘ) বিদেশে টাকা পাঠানোর সীমাকে ৭৫,০০০ ডলার থেকে দুই দফায় বাড়িয়ে ২,৫০,০০০ ডলার করে দেওয়া( মানে টাকার হিসাবে মোটামুটি ৫০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ১.৭০ কোটি)
ঙ) বৃহৎ সংস্থাকে ৬৫,০০০ কোটি টাকা করছাড়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া

কে কতটুকু দেখবেন, সেটা তার মনের চোখের উপর নির্ভর করে। এটা ঘটনা, উদার অর্থনীতির হাত ধরে গত সাড়ে তিন দশকে মধ্যবিত্তের একটা অংশ দ্রুত ইন্ডিয়ান হয়ে গেছে। এদের উপার্জন, জীবনধারণ, মানসিক গড়ন - সবটাই নয়া অর্থনীতির সঙ্গে জড়িয়ে। এদের পকেটে নানাবিধ কার্ড আছে তাই নয়, এরা সেগুলোকে ব্যবহার করাটাই অস্তিত্বের শর্ত বলে মনে করেন। এরাই নোট বাতিলের ঘটনার সবথেকে বড় সমর্থক। এটা ঘটনা, বিশ্বায়নের হাত ধরে আজ আমার-আপনার পরিচিত বহু ছেলেমেয়ে বিদেশে যাচ্ছে। একদম সত্যি। ভারতের রপ্তানি অনেক বেড়েছে। ঠিক। কিন্তু পাশাপাশি এটাও সত্যি, আমদানির বহর বেড়েছে তার থেকে অনেক বেশি। শেয়ার বাজারে আজ বিদেশি বিনিয়োগই সবকিছুর নির্ধারক। শেয়ারে বিনিয়োগ ফাটকা পুঁজি ছাড়া কিছুই নয়। চাইলেই কাল তুলে নিয়ে যেতে পারে। তার পরিণতি যে কী, ৯০-এর দশকে এশিয়ান বাঘরা দেখেছিল।

না, আজ আর গরীব মানুষের কথা তুলবো না। আজ বরং নোট বাতিলের ঘটনায় যারা উল্লসিত, তাদের কথাই ধরা যাক। নোট বাতিলের পরই এরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আস্তিনে আরও তাস আছে। এরাই ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে, টুইটারে প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপের আগে কালো টাকা আটকানোর জন্য আর কী কী করেছেন তার তালিকা দিতে শুরু করলেন। প্রতিটা তথাকথিত পদক্ষেপকে তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে আমি একটা লেখা লিখি, যাতে দেখা যায় দাবীগুলো হয় মিথ্যে, নয়তো ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। মজা হোলো, যারা এই প্রচার করছিলেন, তারা কেউই কিন্তু আমার লেখাটাকে খণ্ডন করতে এগিয়ে এলেন না। এবার শুরু হোলো নতুন প্রচার। আগামীদিনে প্রধানমন্ত্রী আর কী পদক্ষেপ নিতে চলেছেন, তার তালিকা দেওয়া শুরু হোলো। আশ্চর্য! এরা এত খবর রাখেন; শুধু নোট বাতিলের ঘটনার কোনো পূর্বাভাষ দিতে পারলেন না?

যাই হোক, এরা মূলত যে কথাগুলো বলছেন, সেগুলো হোলো –

১) ইলেকট্রনিক প্রপার্টি পাস বুক (e-PPB) শুরু করা হবে ১.৪.২০১৭ থেকে যার ফলে বেনামদার সম্পত্তি ধরা পড়ে যাবে এবং সরকার সেই সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে নেবে ৩১.৩.২০১৮র পরে।
২) সুইজারল্যান্ডের সাথে সরকারের চুক্তি হয়ে গেছে। এবারে সুইস ব্যাঙ্কের সমস্ত কালো টাকার হদিশ সরকার পেয়ে যাবে।
৩) সরকার নগদ টাকার বদলে চেক-কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বাড়াতে চাইছে।
৪) আয়করের বসলে এবার Bank Transaction Tax চালু করা হবে, যেখানে প্রতিটি চেক বা কার্ড ব্যবহারের উপর অয়ানুপাতিক খর ধার্য করা হবে, যা উৎসমূলেই কাটা হয়ে যাবে।

উপরের কথাগুলোর মধ্যে একমাত্র তিন নম্বরটাই সত্যি। সে কথা আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি। সরকার যদি সত্যি-সত্যিই কালো বা জাল টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নোট বাতিল করতেন, তাহলে তার একটা পূর্ব-প্রস্তুতি থাকতো। অর্থাৎ প্রায় কাছাকাছি পরিমাণে নোট আগেই ছাপিয়ে রাখা হোতো, যাতে সঙ্গে-সঙ্গেই বাজারে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। ৮.১১.২০১৬ মধ্যরাত পর্যন্ত ভারতের বাজারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃক ছাপা টাকার মোট মূল্য ছিল ১৭.৫৪ লক্ষ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৫০০ টাকার নোটের সংখ্যা ছিল ১৫৮৯ কোটি, যার মোট মূল্য ৭.৮৯ লক্ষ কোটি টাকা; আর ১০০০ টাকার নোট ছিল ৬৮৪ কোটি, যার মোট মূল্য ৬.৮৪ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২২৭৩ কোটি নোট বাতিল করা হোলো, যার অর্থমূল্য ১৪.৭৩ লক্ষ কোটি টাকা।

২১ তারিখ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রেস বিবৃতি অনুযায়ী ১০.১১.১৬ থেকে সেদিন পর্যন্ত ব্যাঙ্কে মোট জমা পড়া টাকার পরিমাণ হোলো ৫.৫৪ লক্ষ কোটি টাকা। নোট বদল হয়েছে ৩৩,০০০ কোটি টাকার। অর্থাৎ বাতিল নোট ফেরৎ এসেছে ৫.৮৭ লক্ষ কোটি টাকার মানে ৪১.৫৭%। মাত্র ১২ দিনে। অন্যদিকে এই কদিনে ব্যাঙ্ক ও এ টি এম থেকে নোট ইসু হয়েছে ১.১৩ লক্ষ কোটি টাকার। এরমধ্যে আরো দুদিন গেছে। যদি একই অনুপাতে ধরা যায়, তাহলে দুদিনে নোট ফেরত এসেছে এক কোটি টাকার। আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে ছেড়েছে আরো ০.১৯ লক্ষ কোটি টাকা। তাহলে কী দাঁড়ালো? দু সপ্তাহে বাতিল নোট ফেরত এলো ৬.৮৭ লক্ষ কোটি টাকার (৪৬.৬৪%)। আর নতুন নোট ছাড়া হোলো ১.৩২ লক্ষ কোটি টাকার। মানে বাজারে এখনো পর্যন্ত বাতিল টাকার ৭.৪৮% ফেরানো হয়েছে। এই হিসাবে সম্পূর্ণ সমতা ফেরাতে গেলে নিদেনপক্ষে আরো প্রায় দু মাস সময় লাগবে। মাথায় রাখতে হবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন গভর্নর উর্জিত প্যাটেল দায়িত্ব নেন ৫.৯.১৬ তারিখে। যদি সেইদিনই তিনি নতুন টাকার ফর্মায় সই করে থাকেন, তাহলে বাজারে ছাড়া নতুন নোট ৮.১.১.২০১৬ তারিখের আগেই ছাপা হয়েছে। সেই হিসাবে নোটের ঘাটতি মেটাতে আরো ৩৩০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

কাজেই নিশ্চিত ভাবেই ধরে নেওয়া যায়, এত টাকা বাজারে আর ছাড়া হবে না। বাজারকে ক্রমাগত ক্যাশলেস ইকোনমির দিকে ঠেলা হবে। অর্থাৎ চেক, নেট ব্যাঙ্কিং বা কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে উৎসাহ দেওয়া হবে। বাহারে নোটের হাহাকার সামলাতে এগিয়ে এল মোবাইল ওয়ালেট কোম্পানিগুলো। এদের মধ্যে সবথেকে বড় অংশীদার হোল Paytm। ৯.১১.২০১৬ তারিখেই পেটিএম ভারতের সমস্ত সংবাদপত্রে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাপিয়ে তাদের সংস্থার মাধ্যমে লেনদেন করার বিজ্ঞাপন দেয়। পেটিএম কোম্পানির সদরদপ্তর নয়ডাতে। যারা দাম মেটাবেন, তাদের মোবাইল ওয়ালেটে টাকা ভরালেই হবে, আর যারা দামটা নেবেন, তাদের ৭০০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে, প্রতিটি লেনদেনের ২% ফি হিসাবে নেওয়া হবে। নিঃসন্দেহে সেই টাকাটা ক্রেতাদের পকেট থেকেই কেটে নেওয়া হবে।

নগদে খরচা করতে গেলে কোনো ক্রেতাকেই বাড়তি ব্যয় করতে হয় না। কিন্তু এই ধরণের লেনদেনের জন্য ক্রেতাকে বাড়তি মূল্য দিতে হবে যা ঢুকবে মাঝখানে থাকা মোবাইল ওয়ালেট কোম্পানির হাতে। এবারে দেখা যাক এই Paytm কোম্পানিটি কাদের। ২০১০ সালে কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় One97 Communication কোম্পানির শাখা হিসাবে। ২০১৫ সালে One97 Communication- এ চিনা সংস্থা Ant Financial Services Group-এর বিনিয়োগ করে ৫৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ( মোট পুঁজির ২৫%)। রতন টাটাও এখানে বিনিয়োগ করে। ২০১৫তেই পেটিএমকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স দেয়। চিনের বিরুদ্ধে যারা বাণিজ্যিক প্রতিরোধের শ্লোগান দিচ্ছেন, এই প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য শোনার আগ্রহ রইলো। মোদ্দা কথা হোলো, ক্যাশলেস মার্কেটের ফায়দা তুলবে এইসব বহুজাতিক সংস্থাগুলো। আর তার দাম দিতে হবে আমাদের।

প্রথম যে কথা অর্থাৎ e-Property Pass Book, প্রস্তাব হিসাবে খুবই ভালো। কিন্তু আদৌ কি এইসব গুজব প্রণেতাদের মস্তিষ্ক ছাড়া সরকারের মাথায় এর কোনো অস্তিত্ব আছে? প্রথমত, সম্পত্তি মানে এক্ষেত্রে জমি-বাড়ির কথা বলা হচ্ছে। তার মধ্যে কৃষিজমিও থাকবার কথা। ভারতে কৃষিজমির মালিকের সংখ্যা ঠিক কত, তার প্রকৃত সংখ্যা নেই। ধারণা করা যায়, বড় থেকে একদম প্রান্তিক কৃষক মিলিয়ে সংখ্যাটা ২০ কোটির কম নয়। এই বিপুল পরিমাণ মানুষের সম্পত্তির তথ্য একবছরের মধ্যে নেটওয়ার্কে তুলে ফেলার মতো পরিকাঠামো আছে কিনা, সেটাই তো বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। PAN কার্ডের কথাটাকেও এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতে PAN কার্ড আছে ১৭ কোটি মানুষের। এদের ৯০%ই শহুরে। অর্থাৎ PAN কার্ড আছে এমন গ্রামীন মানুষের সংখ্যা ১৭ লক্ষ। তাহলে অবশিষ্ট ১৯ কোটি ৮৩ লক্ষ মানুষের ক্ষেত্রে কী হবে?

এবারে আসি Bank Transaction Tax-এর কথায়। যারা এইসব কথা ছড়ান, তারা জানেনই না যে ২০০৫ সালে ভারতেও Bank Cash Transaction Tax চালু হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডঃ মনমোহন সিং। একদিনে ৫০,০০০ টাকার উপর টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তোলা হলে ০.০১% হারে কর চালু করা হয়। ২০০৯ সালে এই কর উঠে যায়। আলোচ্য Bank Transaction Tax প্রথম চালু করেছিল অস্ট্রেলিয়া, ১৯৮২ সালে। ২০০৫ সালে Goods & Service Tax চালু হবার পরে সেই কর উঠে যায়। ১৯৮৪ সালে আর্জেন্টিনাও একই পথে হাঁটে এবং ১৯৯২ সালেই প্রত্যাহার করে নেয়। এখানেও Income Tax আলাদাভাবেই ছিল। ব্রাজিলেও সরকারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার খরচ তোলার জন্য BBT চালু হয়েছিল। তাহলে ভারতে হঠাৎ করে Income Tax তুলে দিয়ে Bank Transaction Tax চালু হবে, এমনটা ভাবার কারণটা কী? হ্যাঁ, সরকার আলাদা করে এই কর চাপাতেই পারেন।

সবশেষে সুইজারল্যান্ডের সাথে চুক্তির প্রসঙ্গ। ১৮.১১.২০১৬ তারিখে এমন গুজবের পরিপ্রেক্ষিতেই আমি বলেছিলাম সেইদিন পর্যন্ত এমন কোনো চুক্তি ছিল না। প্রাথমিক চুক্তি সই হয়েছে গতকাল। কার্যকরী হবে ১.৪.২০১৮ থেকে। কিভাবে? ঐদিন বা তারপর থেকে সুইস ব্যাঙ্কে যেসব ভারতীয় নতুন করে অ্যাকাউন্ট খুলবেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য সুইস ব্যাঙ্ক দেবে ২০১৯ এর সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু ১.৪.২০১৮-র আগেই যেসব অ্যাকাউন্ট আছে, তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দেবে না। তাহলে কী দাঁড়ালো? যারা আগেভাগেই সুইস ব্যাঙ্কের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে, তাদের টিকি ছোঁয়া যাবে না। অথচ মজা হোলো, নরেন্দ্র মোদি নিজেই নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, এই টাকা তিনি তিন মাসের মধ্যে উদ্ধার করে আনবেন। আর এখন তাতে যে হাত দেওয়া যাবে না, সেটা নিশ্চিত করে দেওয়া হোলো।

২০০৯ সালে বিদেশ থেকে কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেবার জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়, যাত নং হোল 176 of 2009। ২০১১ সালেই বিজেপি সংসদে বিদেশে যেসব ভারতীয়ের কালো টাকা জমানো আছে, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করার দাবী করেন। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং জবাবে বলেন, এমন একটি তালিকা সরকারের কাছে আছে। কিন্তু চুক্তি অনযায়ী সেই তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রের মনমোহন সিং সরকার এমন ২৬ জনের তালিকা সুপ্রিম কোর্টের জন্যই জমা দেন, যা প্রকাশ্যে আনার নয়। সেই বছরেরই ২৭শে অক্টোবর নরেন্দ্র মোদির সরকার আরো তিনটি নাম এইভাবেই জমা দেয়। বোঝাই যাচ্ছে, কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আসল চেহারাটা কী। তিতিবিরক্ত হয়ে মূল মামলাকারী প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ রাম জেঠমালানী ২০১৫ সালের ১২ই মে প্রকাশ্যেই বলেন কালো টাকার প্রশ্নে বিজেপি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করছে না।

এর সাথে যোগ করুন বিদেশে টাকা পাঠানোর উর্ধসীমাকে ৭৫,০০০ ডলার থেকে বাড়ীয়ে ২,৫০,০০০ ডলার করে দেবার সিদ্ধান্ত যা বর্তমান সরকারেরই নেওয়া। অর্থাৎ এই সরকারই বিদেশে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা আগে করে দিল, যাতে যাদের প্রচুর কালো টাকা আছে, তারা সেই সুযোগ নিয়ে হাত পরিষ্কার করে ফেলতে পারে। আরো একটা উল্লেখযোগ্য তথ্য হোলো ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ধারাবাহিকভাবে বিদেশী ব্যাঙ্ক HSBC-র জেনেভা শাখায় অ্যাকাউন্ট আছে এমন ১১৯৫ জন ভারতীয়ের নামের তালিকা প্রকাশ করে। এই সরকার এই নিয়ে বিশেষ কিছু করেছে বলে জানা যায় নি। আবার ২০১৬ সালেই ৩রা এপ্রিল International Consortium of Investigative Journalists (ICIJ) Panama Paper Leak নামে একটি তথ্য সামনে আনে যাতে দেখা যায় অমিতাভ বচ্চন, ঐশর্য রাই বচ্চন, নিরা রাদিয়া, হরিশ সালভে সহ ৫০০ জন ভারতীয়ের নামাছে। ICIJ-র অক্তব্য অনুযায় এদের সকলেরই সুইস ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে। সরকার এর বিরুদ্ধে কী পদক্ষে নিয়েছে, আজ অবধি জানা যায় নি।

এটাই হোলো বাস্তবতা। সরকার একদিকে চোরদের বাঁচবার রাস্তা করে দিচ্ছে, আবার উল্টোদিকে বাজারে কালো টাকার উপর যুদ্ধ করিছি বলে প্রচার করছে। একদল সব বুঝেও কীর্তন করে যাচ্ছে, আরেকদল অত তলিয়ে না দেখেই সেই কীর্তনে গলা মেলাচ্ছেন।


লেখকঃ কবি ও লেখক 
কলকাতা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ