দেশের রাজনীতি নষ্ট করার দায় জিয়ার

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৫

ষাট ও সত্তুরের দশকে প্রতিটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ গলাটিপে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। না পারলে অসহযোগীতা করেছে, ক্যুদেতা ঘটিয়ে নেতৃত্বদানকারী নেতাদের হত্যা করেছে।

একই কাজ এশিয়ার বাংলাদেশে, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়ায় ক্যুদেতার নায়করা কমিউনিস্টদের হটাতে জাতীয়তাবাদী নেতা সূকর্ণকে ক্ষমতাচ্যুত করে গৃহবন্দি করে।

জেনারেল সুহার্তো ক্ষমতা দখল করে কেবলমাত্র রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই পুঁজিবাদী ধারায় প্রতিস্থাপিত করেন। রাষ্টের নানা রকম প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন থেকে শুরু করে অন্য কিছুর দিকেই হাত বাড়াননি।

পক্ষান্তরে জেনারেল জিয়া ক্যুদেতার মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর পরই দেশের নানাবিধ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধের বিপরীতে দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে ফেলেন। তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের দিকে তাকালেই দেখা যায়, সমন্বয়ের রাজনীতির নামে জান্তা জেনারেল জিয়া মশহুর রাজাকারদের তার মন্ত্রীসভায় জায়গা দেন।

মুক্তিযুদ্ধের দলসমূহ ও মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতির প্রতি সীমাহীন নির্যাতন ও কোনঠাসার নীতি গ্রহণ করেন।

একই সাথে বন্দুকের নলের মুখে একটি নামকাওয়াস্তে গণভোটের আয়োজন করে, অধ্যাদেশ জারি করেন ৭৫’ এর ক্যুদেতার ফলে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার করা যাবে না।

৭৯’ এর সংসদে জেনারেল জিয়ার দল বিএনপি সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় ৭৫’ এর ক্যুদেতা  ও হত্যাকান্ডের বিচার করা যাবে না।

জান্তা জেনারেল জিয়া ও তার দলে ভিড়ে যাওয়া নানান দলের বিশ্বাসঘাতকেরা এটিকে গণতান্ত্রিক ও বৈপ্লবিক কর্ম বলে অভিহিত করেন।

দেশের স্থপতিকে পরিবারসহ খুন করা ও জাতীয় নেতাদের খুন করার বিচার না করার আইন পাশ করাই জান্তা জিয়ার মুক্তিযুব্ধের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা প্রমাণ করে। একই সাথে জিয়া সমন্বয়ের রাজনীতির নামে সমস্ত রাজাকারদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেন ও ৭১’ এর অভিযোগ থেকে রেহাই দেন।

মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়া জিয়া মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা দেখাননি, তার হাতে ক্ষমতা আসামাত্রই জিয়া তার মনের গহীনে জমে থাকা পাকিস্তানী ভাবাদর্শ বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দিতে থাকেন।

“আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ান্স।” জান্তা জিয়ার সদম্ভ উক্তি দেশের রাজনীতিকে ধর্ষিত করে উদযাপনের উর্দির আস্ফালন!

জান্তা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে কতটা সৎ ছিলেন, তা রাজনীতিতে বিবেচ্য না।

জান্তা জিয়া ফিলসফিক্যালি করাপ্টেড ছিলেন, দেশের রাজনীতিতে আদর্শহীন রাজনৈতিক প্রজন্মের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন, দেশের রাজনীতিকে অর্থলুন্ঠনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছিলেন।

ছাত্র ও যুব সমাজকে নিজের দলে টেনে আনার জন্য নানা রকমের অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা তিনি নিয়েছিলেন, হাট – বাজারের ইজারাদার থেকে শুরু করে গ্রাম্য আদালত বানিয়ে, ক্ষমতার ভাগ দিয়ে তিনি রাজনীতিতে পাকাপাকিভাবে বেয়াদবীর সংস্কৃতি চালু করেছিলেন।

এ নষ্টামি রাজনীতিতে এখনও চলছে চলবে আরও অনেককাল, দেশের রাজনীতি নষ্ট করার দায় একমাত্র জান্তা জিয়ার।

এ ক্ষেত্রে জিয়ার কোন উত্তরাধিকার নাই। তিনি একমাবেম - এক ও অদ্বিতীয়।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ