উন্নয়নের কালে লুট’ই একমাত্র রূপকথা

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০১৮, ১১:৪৭ | আপডেট: ০২ মে ২০১৮, ১৭:১৪

বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চাপে নতি স্বীকার করেছে সরকার। বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) ও অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর তাঁর পুরো টিম নিয়ে সভা করে সিআরআর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সভা শেষে সিআরআর কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। 

এই প্রথমবারের মত কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি নির্ধারণী সংস্থা হিসাবে তাদের অধিনস্ত ব্যাংকের সাথে দর কষাকষি করে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে, এটি বিষ্ময়কর। বিশ্বের আর কোথাও এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা কে জানে? 

নীতি নির্ধারণী সংস্থা হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারীদের সাথে বসে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে এটি লজ্জাজনক

নীতি নির্ধারণী ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) কাছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে পরাজিত হয়েছে। এটি পরিষ্কার যে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে বাতিল করার চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছে। 

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমস্ত ব্যাংকের অভিভাবক হিসাবে তার মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের মেরুদন্ড সোজা থাকলে, এ ঘটনার জেরে তিনি পদত্যাগ করতেন।

ভবিষ্যতে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পেয়ে বসবে। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি ম. খা. আলমগীরের ফারমার্স ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে, একই সাথে আরও কয়েকটি ব্যাংকও এ কাজ করেছে। 

এ ঘটনার জেরে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি), কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিটি নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কাজটি করে রাখলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে না মানার যে সংস্কৃতি চালু হলো তা ভয়াবহ। ব্যাপারটি এখানেই মাত্র একটি ঘটনায় তা থেমে থাকবে না, বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) লাগাম টেনে ধরতে চাইলেই, বিএবি যে কোন ছুঁতোয় তা না মানার চেষ্টা করবে।

সিআরআর কমানোর ঘোষনার প্রাক্কালে অর্থমন্ত্রী বলেছেন আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে, তবে আগামী জুনে একটি পর্যালোচনা হবে। এ পর্যালোচনার পরামর্শ দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। 

দেশের অর্থনীতির এক কালো অধ্যায়ের সাথে জড়িত রয়েছে সালমান এফ রহমানের নাম। হাজার হাজার কোটি টাকা তিনি ব্যাংক ও শেয়ার বাজার থেকে সরিয়েছেন। ৯৬ সালের শেয়ার কেলেংকারীর সাথে তার নাম জড়িত। সম্প্রতি তিনি সরকারের হাতে থাকা চারটি বাড়ী জাল - জালিয়াতী করে বাগাতে চাইছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে তা বাতিল হয়।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাড়ে ৬ শতাংশ টাকা নগদ জমা রাখে। অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা কমে আসবে সাড়ে ৫ শতাংশে। এর ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জমা রাখা সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ সমপরিমাণ প্রায় ১০ থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা তুলে নেবে।

এ বাড়তি টাকার প্রভাবে মুল্যস্ফীতি বাড়বে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী তাঁর স্বভাব সুলভ চিৎকারে তা উড়িয়ে দেন।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি আমানতের ২৫ শতাংস রাখা যেত আগে, বর্তমানে তা সংশোধন করে ৫০ শতাংস করা হয়েছে, বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চাপে।

বেসরকারি ব্যাংকে ২৫ শতাংস আমানত থাকার সময়েই জলবায়ু তহবিলের টাকা আটকে গেছে ফারমার্স ব্যাংকে। ফারমার্স ব্যাংক এখন দেউলিয়া, আর দেউলিয়া ব্যাংকটির মালিক ম. খা. আলমগীর এখনও সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। 

৫০ শতাংস সরকারী আমানত পাওয়ার ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো আরও বেশী করে সরকারি টাকা আত্মসাত করতে পারবে হিসাবের মারপ্যাঁচে। বেসরকারী ব্যাংকের মালিকরা অবাধে ঋণ নিয়েছেন নিজেদের ও তাদের বেনামী কোম্পানিগুলোতে। এ দায় শোধের জন্য অর্থমন্ত্রী উদ্বাহু নৃত্য শুরু করেছেন বিএবি'র পক্ষে! 

গত এক বছরে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এ ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন করতে হয়েছে প্রাত ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করেছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার। অবলোপনকৃত ঋণের জন্য সমপরিমাণ টাকা প্রভিশন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর আটকে গেছে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। এ টাকার একটি অংশ উদ্ধার করতে করতে পারলেই তারল্য সংকট কেটে যেত ব্যাংকগুলোর। 

এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কোন উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। এ সমস্ত মন্দ ঋণের ব্যাপারে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসেরও (বিএবি) কোন উদ্বেগ চোখে পড়েনি। কু ঋণের টাকা নিজেদের পকেটে ভরে চুপ রয়েছেন বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। এখন তারা সরকারি টাকা হাতাতে সক্ষম হয়েছেন।

আমজনতার টাকা এভাবে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) বর্গা দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। উন্নয়নের কালে লুট’ই একমাত্র রূপকথা