ধর্ম মেনে মুসলমানরা যৌতুকের অর্থ ফিরিয়ে দিচ্ছেন

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০১৭, ১২:৩৩

সাহস ডেস্ক

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌতুক একটি অবৈধ ও ঘৃণিত প্রথা। কন্যাকে পাত্রস্থ করার জন্য মোহরানা ব্যতীত বরপক্ষের চুক্তিবদ্ধ দাবি  অনুযায়ী কন্যাপক্ষ উপহার সামগ্রী যা প্রদান করেন তা-ই যৌতুক।

ইসলামে শর্তারোপ করে যৌতুক গ্রহণ সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ। শরিয়তের বিধানে বিবাহের শর্ত হিসেবে যৌতুক আদায়  করা শুধু নাজায়েজই নয় বরং সুস্পষ্ট জুলুম হিসেবে গণ্য করা হয়।

বৈবাহিক বিষয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, স্বামীরাই স্ত্রীকে কিছু অর্থ-সম্পদ ফরজ তথা আবশ্যিকভাবে প্রদান  করবে। বিবাহকে বৈধ করার জন্য দেনমোহর একটি অন্যতম মাধ্যম। ইসলামে বিবাহ বন্ধনে মোহরানার গুরুত্ব অত্যধিক। এটি  ইসলামের আবির্ভাব থেকেই মুসলিম সমাজে কড়াকড়িভাবে আরোপিত। মোহরানা কন্যার ন্যায্য প্রাপ্য অধিকার। বিবাহ উপলক্ষে  নারীকে সন্তুষ্টচিত্তে তার মোহর প্রদান করার তাগিদ দিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, আর  তোমরা নারীদের তাদের মোহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে।-সূরা আন নিসা : ৪
 
ইসলামের এই অনুপম শিক্ষার আলোকে ইতোপূর্বে নেওয়া যৌতুকের অর্থ ফিরিয়ে দিচ্ছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পিছিয়ে থাকা  রাজ্য বলে পরিচিত ঝাড়খন্ডের মুসলমানরা। ভারতে যদিও যৌতুক নেওয়া বেআইনি তবুও পণের দাবিতে গৃহবধূর ওপর  অত্যাচারের ঘটনা নিয়মিতই শোনা যায়। কিন্তু যৌতুকের টাকা ফেরতের ঘটনা এটাই প্রথম।

ঝাড়খন্ড রাজ্যের পালামৌতে এই প্রক্রিয়া বছরখানেক ধরে চলছে। এর মধ্যে প্রায় আটশ’ মুসলমান পরিবার ছেলের বিয়ের  সময়ে নেওয়া পণ ফিরিয়ে দিয়েছে পুত্রবধূর পরিবারকে। যার পরিমাণ প্রায় ছয় কোটি রুপি। মুসলমান পরিবারগুলোকে দেখে  ওই অঞ্চলের অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও যৌতুক ফেরানো শুরু হয়।

যৌতুক ফিরিয়ে দেওয়ার প্রচলন শুরু হয় ঝাড়খন্ড রাজ্যের পোখারিটোলা গ্রাম থেকে। ওই গ্রামের বাসিন্দা হাজি মুমতাজ  আনসারি এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেন।

তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বলতে থাকেন, অনেক লোক আমার কাছে এসে দুঃখ করে মেয়ের বিয়ের পণ জোগাড়ের বিষয়ে,  ধারদেনা তো বটেই- জমিও বিক্রি করতে হয় পণের টাকা জোগাড় করতে। এটা তো সবার সামনেই ঘটছে। আমরা কি পারি  না এসব বন্ধ করতে?
হাজি মুমতাজ আনসারি যৌতুক বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেন। আর এভাবেই কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের  এপ্রিল মাস থেকে। শুরু হওয়া এই পণ-বিরোধী অভিযানে মেয়ের পরিবারের হাতে আটশ’পরিবার টাকা তুলে দিয়েছে। আরও  অবাক করার বিষয় হলো, অনেকে হয়তো এই মুহূর্তে টাকাটা ফেরত দিতে পারছে না, কিন্তু তারাও সবার সামনে অঙ্গীকার  করছে টাকা ফেরত দিয়ে দেবে বলে।

পোখারিটোলার এই পণ বিরোধী অভিযান এতটাই সমর্থন পেয়েছে পালামৌ অঞ্চলে এখন আর মুসলিম পরিবারগুলোতে কেউ  বরপণ চাইতে সাহস পাচ্ছেন না। আর যদিওবা পাত্রপক্ষ এবং কন্যাপক্ষ নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে পণের ব্যবস্থা করেও  ফেলে, তাহলে সমাজের মাথারা গিয়ে সেটা আটকে দিচ্ছেন। এমনকি পণ নেওয়ার কথা কানে এলে কাজি সাহেব সেই বিয়ে  দিতেও সরাসরি অস্বীকার করছেন।

ইসলামের শিক্ষা হলো- যৌতুক তথা ধন-সম্পদ, সম্মান ও মর্যাদা কোনো কিছুর লোভ বা মোহে আকৃষ্ট হয়ে বিবাহ করা যাবে  না।

বিলম্বে হলেও মুসলিম সমাজের অনুপ্রবেশ করা ঘৃণ্য এই প্রথা যে ত্যাগ করা শুরু করেছে, তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। কামনা  করি এ ধারা অব্যাহত থাকুক।

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত