বৃক্ষরোপণে প্রিয় নবীর প্রেরণা

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৭, ১৫:৩৯

রায়হান রাশেদ

বৃক্ষ খোদার অনবদ্য সৃষ্টি। প্রভুর সৌন্দর্যের নিদর্শন। অপরূপ সাজে মণ্ডিত। মুগ্ধতায় ভেসে যাওয়ার উপকরণ। সবুজ পাতায় ছেয়ে থাকা বৃক্ষ প্রাণে জাগায় শিহরণ। গাছের হিমেল বাতাসে হৃদয় জুড়িয়ে আসে মুহূর্তে। বৃক্ষের ছায়া আরামের নিকেতন। কাঠফাটা রৌদ্রে ঘেমে যাওয়া শরীরের শান্তির পথ্য। বাতাসে পাতার ঝিরিঝিরি শব্দ যেন এসরাজের তান। এ তানে ভেসে আসে মহান মালিক আল্লাহর প্রশংসার স্তুতি। বৃক্ষ ধু ধু চরে পথিকের বন্ধু। রাখালের শোবার আলয়। জ্যোত্স্নাস্নাত রাতে চাঁদের অমল ধবল দুধসাদা আলোর প্রলেপ পড়া বৃক্ষের লতাপাতা মন করে উতলা। হৃদয়-মন উজাড় করে ফেলে আসা দিনের স্মৃতি কিংবা বর্তমান বাড়ন্ত সুখের কোনো দরিয়ায় আমাদের মত্ত করে রাখে। বৃক্ষ মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রত্যেক প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য বৃক্ষের প্রাণ থাকা আবশ্যকীয়। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে।

বৃক্ষ আল্লাহকে সেজদা করে। তাঁর তাসবিহ পাঠ করে। তাঁর প্রেমে মত্ত থাকে সর্বদা। প্রভুর হুকুম তামিল করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। কোরআন পাকে ঘোষিত হয়েছে, ‘তুমি কি দেখো না যে আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ১৮)

মহানবী (সা.) নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করেছেন। ইসলামে একে গণ্য করা হয়েছে ইবাদত হিসেবে। বৃক্ষরোপণে নবীজি (সা.) মানুষকে উৎসাহিত করেছেন বারবার।

ভূমি উর্বর থাকলে ফলন ভালো হয়। পরিবেশ ভালো থাকে। মানুষ আক্রান্ত ও ব্যাধিগ্রস্ত হয় না সহজে। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির জন্য ইসলাম মানুষকে যেসব কর্মকাণ্ডের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে, তার প্রধান হলো কৃষিকাজ। যা পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষার মৌলিক উৎস। মুহাম্মদ (সা.) সাগ্রহে কৃষিকাজ ও বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করেছেন। যাতে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় ও সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে। আর তা থেকে কোনো বিহঙ্গ কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৩২০,  মুসলিম, হাদিস : ৪০৫৫)

হাদিসে বৃক্ষরোপণে প্রেরণা দেওয়ার বিষয়টি অধিক স্পষ্ট। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে একজন বান্দা তার মালিকের কাছ থেকে পাচ্ছে যথার্থ মূল্যায়ন ও প্রাপ্তি। বান্দার লালন-পালনে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ থেকে সৃষ্ট জীবের কেউ কিছু খেলেই, একটু উপকৃত হলেই সওয়াবে ভরে যাবে তার আমলনামা। ব্যক্তি মরে গেলেও কবরে শুয়ে পাবে এর সওয়াব।

বৃক্ষরোপণে ইসলাম উৎসাহিত করেছে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্নভাবে। বৃক্ষরোপণ করতে গিয়ে যদি কোনো ফল প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তার যথোপযুক্ত প্রাপ্তি বান্দাকে দেওয়া হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে আর ফলদার হওয়া নাগাদ তার দেখাশোনা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যা আক্রান্ত হয় তার বিনিময়ে আল্লাহ তাকে সদকার নেকি দেবেন। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬৭০২, আবুল ঈমান, হাদিস : ৩২২৩)

পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ শিশুর জন্য মায়ের দুধের মতো। পরিবেশ শান্ত, ঠাণ্ডা ও মনোমুগ্ধকর রাখে আকাশের দিকে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ। অপ্রোয়জনে বৃক্ষনিধন করতে কঠোরভাবে বারণ করেছেন আমাদের নবী। দিয়েছেন অনেক বড় হুঁশিয়ারি। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৪১) তবে গাছ যদি এমন স্থানে হয়, যার ফলে মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়, পরিবেশ ও ঘর-দোরের জন্য ক্ষতিকর হয় এবং মানুষের কল্যাণে কাটার প্রয়োজন হয়, তাহলে গাছ কাটতে কোনো অসুবিধা নেই। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি জান্নাতে, সে ওই গাছের ছায়ায় চলাচল করছে, যা সে রাস্তার মোড় থেকে কেটেছিল, যা মানুষকে কষ্ট দিত। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৮৩৭)

বৃক্ষরোপণ মানবতার নবী মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিশেষ আমল। তিনি নিজে বৃক্ষরোপণ ও তার পরিচর‌্যা করতেন এবং মানুষকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করতেন। বৃক্ষরোপণ নবীজির সুন্নত। পরিবেশ বাঁচাতে ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি করতে হবে। বৃক্ষ পরিবেশ বাঁচায়। প্রকৃতি নির্মল করে।
লেখক : ইসলামী গবেষক
সূত্র: কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত