রমজান আত্মগঠনের মাস

প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৮, ১৩:৪১

সাহস ডেস্ক

রমজান আত্মগঠনের মাস। রমজানের রুটিনকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন অনভ্যস্ত ব্যক্তিরাও ইবাদাতে অভ্যস্ত হন। আর অভ্যস্তরা আরো বেশি ইবাদত করতে পারেন। রোজার মাসে সেহেরি খাওয়ার পরিকল্পনা আমাদের সবারই থাকে।

রমজান মাস যত ঘনিয়ে আসত, তেমনি ব্যাকুল হয়ে উঠতেন আমাদের প্রিয় নবীজী (সা.)। রমজানের দু’মাস আগে থেকেই তিনি পুরোদমে প্রস্তুত হতেন মোবারক এ মাসটির জন্য। এ প্রস্তুতি ছিল শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক সব দিক থেকেই। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বারতা নিয়ে রমজান আসে প্রতিবছর। কোরআন নাজিলের বরকতে রমজান হয়েছে পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসের প্রতিটি সময় অনেক মর্যাদাবান। তাই এর প্রস্তুতি নিতে হয় কয়েকমাস আগে থেকেই।

প্রিয়নবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে রমজানকে বরণ করতে হয়। রমজানের অফুরন্ত রহমত বরকতে নিজেকে সিক্ত করতে হলে এর প্রস্তুতি নিতে হবে শাবান মাস থেকেই। প্রিয়নবী (সা.) শাবান মাসে নিজেকে পূর্ণভাবে ইবাদাতে মশগুল রাখতেন। সাহাবাদেরও আদেশ করতেন এ মাসটি পূর্ণভাবে ইবাদতে কাটানোর। রমজানের একটি আবহ তৈরি হয়ে যেত শাবান মাসেই। রমজান যদি হয় সাধনার মাস, তবে শাবান হল সে সাধনার পূর্ব প্রস্তুতির সময়।

আমাদের নিজেদের আয়োজনগুলোর প্রতি লক্ষ্য করলেই বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করতে পারব। দু-এক ঘণ্টার কোনো আয়োজন সফল করতে আমরা এর প্রস্তুতিতে কতটুকু সময় ব্যায় করি? আয়োজনের গুরুত্ব অনুযায়ী প্রায় মাসখানেকও ব্যায় হয় প্রস্তুতিতে। এ যদি হয় পার্থিব জীবনের কোনো উৎসবের গুরুত্ব, তাহলে রমজানের প্রস্তুতি কতটুকু হওয়া উচিত? বিষয়টির গুরুত্ব কি আমরা চিন্তা করেছি কখনও?

কেন রাসূল (সা.) শাবান মাসকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন? শাবান থেকে যদি প্রস্তুতি গ্রহণ না করা হয়, তাহলে রমজানের সময়টুকু সঠিকভাবে ব্যায় করা যায় না। শাবান মাসে অনুশীলন যে পরিমাণে হবে, রমজানে ততটুকুরই প্রতিফলন ঘটবে।

রাসুল (সা.) শাবানের ১৫ তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পরই জোরেশোরে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রমজান এলে কোরআন তেলাওয়াত ও দান-সদকা প্রবাহিত বাতাসের মতো বাড়িয়ে দিতেন। রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে জিব্রাইল (আ.) কে একবার পুরো কোরআন শোনাতেন। আবার জিব্রাইল (আ.) রাসুল (সা.) কে পুরো কোরআন শোনাতেন। যে বছর রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করেন ওই বছর দুই খতম কোরআন জিব্রাইল (আ.) কে শোনান। আমাদের রমজান পরিকল্পনায় অবশ্যই কোরআনকে প্রাধান্য দিতে হবে।

যারা কোরআন পড়তে পারি না তারা কোরআন পড়া শিখবো। কোরআন বুঝবো-মানবো এবং সে অনুযায়ী আমল করবো। তবেই পবিত্র রমজান ও কোরআন আমাদের জন্য সুপারিশ করবে।

আমাদের দুর্ভাগ্য হল- রমজানের শুরুতে ইবাদতে জোয়ার আসলেও শেষে  ভাটা পড়ে। অনেকে শেষ দিনগুলো মার্কেট ও কেনা-কাটায় ব্যস্ত থাকার কারণে ফরজ নামাজও অনেক সময় আদায় করতে পারেন না। তাই পরামর্শ থাকবে সম্ভব হলে এখনই কেনাকাটা শেষ করে ফেলুন।

রমজান উপলক্ষে আমাদের সব ধরনের অন্যায় অবিচার থেকে তওবা করে খাঁটি জিন্দেগি শুরু করতে হবে। আর এজন্য এখন থেকেই মানসিক ও বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। হতে পারে এ রমজানই আমার জীবনের শেষ রমজান। 

এ বছরের পর আর কোনো রমজান আমি পাবো না। তাই এ রমজানকেই আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। হে দরদী পাঠক; আপনি যদি এ পূণ্যময় মাস আত্মিক সিয়ামে কাটাতে পারেন, তবে জেনে রাখুন আপনিই হবেন সবচেয়ে ভাগ্যবান। যাকে আল্লাহ ডেকে নেবেন তার জান্নাতে। হে আল্লাহ তাওফিক দিন আমরা যেন খাঁটি সিয়াম পালনকারী হতে পারি।

সাহস২৪.কম/রনি/আল মনসুর 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত