আজ লাইলাতুল কদর

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০১৬, ১২:২৫

সাহস ডেস্ক

মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ রহমত এবং অনুগ্রহের রজনী পবিত্র ‘লাইলাতুল কদর’। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ নাজাতের উছিলা হিসেবে যথাযথ মর্যাদা ও পবিত্রতার সাথে শবেকদর পালন করে থাকেন। ২৬ রমজান দিবাগত রাতের অর্থাৎ কদরের রাতের এবাদত হাজার মাসের এবাদতের চেয়ে উত্তম বলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে। এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল শুরু হয় রাসুলুল্লাহ (দ.) ওপর। শবেকদরের রাতে বিভিন্ন মসজিদে-মাজারে এবাদত বন্দেগির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসলামানগণ বিভিন্ন মাজার ও কবর জিয়ারত করবেন। সারা রাত এবাদত বন্দেগি শেষে বাদ ফজরে আখেরি মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

মাসব্যাপী সিয়াম সাধনাশেষে অধিক সম্ভাবনার ভিত্তিতে আজ রাতে সারা দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করে থাকেন। মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত ও গুরুত্ব অনেকাংশে মহিমান্বিত এ রাতের কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে। পবিত্র রমজানের এ রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে নিম্ন আকাশে মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালা সুরা কদরে বলেন, ‘নিশ্চয় এ কোরআন আমি লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি।’ অন্য আয়াতে বলেন, ‘রমজান মাস, এ মাসেই কোরআন অবতীর্ণ হয়।’ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা লাইলাতুল কদরকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলে অভিহিত করেছেন। এর অর্থ হলো, সাধারণ এক হাজার মাস তথা তিরাশি বছর চার মাস প্রতি রাত জাগ্রত থেকে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদত করলে যে সওয়াব হবে, এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।
 
শবে কদরকে আরবিতে লাইলাতুল কদর বলা হয়। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এছাড়া এর অন্য অর্থ হলো ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকিদর নির্ধারণ। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা ‘আল্ফ্’ তথা ‘হাজার’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। আল্ফ্ আরবি গণনার সর্বোচ্চ সংখ্যা। মুফাসিসরগণ বলেন, যদি এর চেয়ে বড় আরো কোনো সংখ্যা প্রচলিত থাকত, তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা হয়তো তা-ই ব্যবহার করতেন। এছাড়া শবে কদরের ফজিলত তো আর হাজার শব্দের মধ্যে সীমিত করা হয়নি। যারা এ রাত ইবাদত করে কাটাবেন, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কারের ঘোষণা। আল্লাহ পাক চান বান্দা যেন গোনাহ্ ও পাপমুক্ত হয়ে তাঁর দরবারে হাজির হয়। এজন্য তিনি এ ধরনের বিশেষ তাত্পর্যময় রাত বা দিনের ব্যবস্থা রেখেছেন আমাদের জন্য। আমাদের উচিত এ মহাসুযোগ কাজে লাগিয়ে জীবনকে সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায় উন্নীত করার চেষ্টা করা। শবে কদরের রাতে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত এবং নির্দিষ্ট সূরা পড়ে নফল নামাজের নির্ভরযোগ্য কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, নফল নামাজ, দোয়া ইস্তিগফারে লিপ্ত থেকে কাটিয়ে দেয়া উচিত। মুসলিম সমপ্রদায়ের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুন্াহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের ফজিলত অতুলনীয়।
 
হাদিস শরিফে আছে, ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। তবে, ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। এজন্য মহানবী (সা.) শেষ দশকে ইতেকাফ্ করতেন। তাফসিরের সহিহ্ কিতাবগুলোতে আছে, কদরের আর এক অর্থ তকিদর এবং পরিমাণ নির্ধারণ। এ রাত্রিতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক ইত্যাদি পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেয়া হয়।
 
কদরের ফজিলত পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু নফল ইবাদত করা, অসংখ্য রাকআত নফল নামাজ আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাছবীহ তাহলীল ইত্যাদি পাঠ করা কর্তব্য। দুই দুই রাকআত নফলের নিয়ত করে যে কোনো সূরা সূরা ফাতেহার সাথে মিলিয়ে নামাজ পড়া যাবে। উত্তম হলো- নফল নামাজ ধীরে-সুস্থে লম্বা লম্বা ক্বেরাত দিয়ে পড়া এবং ধীরস্থিরে রুকু-সিজদা আদায় করা। এতে রাকাতের সংখ্যা কম হলেও নামাজের মান উন্নত হবে। এ রাতে বিশেষভাবে উক্ত পদ্ধতিতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া উচিত। এ রাতের শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো ক্ষমা চাওয়ার দোয়া। এ রাতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ক্ষমা চাওয়ার দোয়া শিক্ষা দিলেন যে, তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও, ক্ষমা পাওয়ার জন্য দোয়া কর। কেউ যদি জীবনে অনেক কিছু পায় কিন্তু ক্ষমা না পায়, তাহলে তার জীবন ব্যর্থ। তাই এ রাতে অন্তরকে নরম করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার পূর্বে খাঁটি দিলে তওবা ইস্তেগফার করতে হয়। খাঁটি তওবার চারটি শর্ত : ১. পূর্বের গুনাহ থেকে ফিরে আসা বা গুনাহ ছেড়ে দিতে হবে। ২. গুনাহর জন্য মনে মনে অনুতপ্ত হতে হবে যে, আমি বড়ই অন্যায় করেছি। ৩. ভবিষ্যতে ঐ গুনাহ আর করব না বলে মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে। ৪. বান্দাহর কোনো হক নষ্ট করে থাকলে যথাসাধ্য সে হক আদায় করে দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত