‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজ ৮৮ ভাগ সম্পন্ন’

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০১৭, ১১:৩৯

সাহস ডেস্ক

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, ‘চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের কাজ ৮৮ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ।’

শনিবার (১৫ জুলাই) গাজীপুর মহানগরীর তেলিপাড়া এলাকায় টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) টেলিযোগাযোগ স্টাফ কলেজ ক্যাম্পাস সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-প্রকল্পের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘এটি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে আমেরিকার আবহাওয়া এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। তবে সেসব সমস্যা না থাকলে নির্ধারিত দিনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের জন্য আমরা শতভাগ প্রস্তুত রয়েছি। সে লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে।’

তারানা হালিম বলেন, গ্রাউন্ড স্টেশনের অবকাঠামোগত কাজ ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। জেনারেটর ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অ্যান্টেনা স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী অক্টোবরে গ্রাউন্ড স্টেশনের কাজ সম্পন্ন হবে। এ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের আগে নভেম্বরে ট্রায়াল দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পর আগামী এপ্রিল হতে আনুষ্ঠানিকভাবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্রডকাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতা কমানো এবং দুর্গম এলাকায় সেবা বিস্তারের জন্য সরকার মহাকাশের কক্ষপথে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

তারানা হালিম বলেন, ‘স্যাটেলাইট চালু হলে দেশে তথ্য যোগাযোগ, ই-লার্নিং, ই-ফার্মিং, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নতি হবে। আমরা এখন মহাকাশ জয় করার অপেক্ষায় আছি। মহাকাশে বাংলাদেশ থাকবে, এটা একটা অন্যরকম বিজয়।’  

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো শেষ হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হব। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ প্রকল্পের ব্যয় সব মিলিয়ে ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। এর জীবনকাল ১৫ বছর। এটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। কোম্পানি পরিচালনার জন্য ১১ সদস্যের একটি বোর্ড থাকবে। এ বোর্ডই কোম্পানি পরিচালনা করবে।’

তারানা হালিম আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ফ্রান্সের ঘায়েনা দ্বীপ থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি মহাকাশে স্থাপনের লক্ষ্যে বিটিআরসি কর্তৃক চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ৪৫ বছরের জন্য ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট লিজ গ্রহণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে স্যাটেলাইট প্রস্তুত উৎক্ষেপণ ও গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের জন্য বিটিআরসি ফ্রান্সের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থ্যালস এলেনিয়া স্পেস-এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সে মোতাবেক ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী ঠিকাদার স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ওই প্রকল্পের নির্মাণকাজ করছে।  গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটির মধ্যে বাংলাদেশ নিজেরা ২০টি ব্যবহার করবে। বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার ইজারা দিতে পারবে বাংলাদেশ।’

তারানা হালিম বলেন, ‘বর্তমানে আমরা অন্যদের স্যাটেলাইট ভাড়ায় ব্যবহার করছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে স্থাপন করা হলে আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ সাশ্রয় হবে। দেশের সব মানুষকে যোগাযোগ ও সম্প্রচার সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত হবে। স্যাটেলাইটের বর্ধিত ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা যাবে। আর টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হবে।’

এ সময় প্রকল্প পরিচালক মেসবাহুজ্জামান, প্রকল্পের বৈদেশিক পরামর্শক শফিক আহমেদ চৌধুরী, স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালিদ হোসেন খান, পরিচালক নাজমুল হাসান, চিফ কো-অর্ডিনেটর মাহবুব মোরশেদ, প্রধান প্রকৌশলী মাসুদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত