বাংলা সাইটে সরাসরি বিজ্ঞাপন দেবে গুগল

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫৭

সাহস ডেস্ক

বাংলা ভাষার ওয়েবসাইটে সরাসরি বিজ্ঞাপন প্রকাশের সুযোগ দিতে গুগল অ্যাডসেন্স চালুর ঘোষণা দিয়েছে ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধানে সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। এর ফলে এখন থেকে বাংলা ভাষার যে কোনো ওয়েবসাইট গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে সরাসরি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারবে। আর এ বিজ্ঞাপন থেকে শর্ত সাপেক্ষে অর্থ আয়ের সুযোগ পাবে সংশ্নিষ্ট ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার গুগল অ্যাডসেন্সের পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গুগল ৪১তম ভাষা হিসেবে তাদের অ্যাডসেন্স ব্যবহারে বাংলাকে স্বীকৃতি দিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সুবিধা চালু হওয়ায় বাংলা কনটেন্ট বাড়বে, সেখানে অ্যাডসেন্সের অ্যাড থাকবে। ফলে অ্যাপস নির্মাতাদের বিজ্ঞাপনের জন্য আর বসে থাকতে হবে না। তাদের মতে, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবার বাজার আকার ৮০০ মিলিয়নের মতো। এরমধ্যে ২০ ভাগ অ্যাপস, ওয়েবভিত্তিক পণ্য ও সেবার। সেই বাজার বড় হতে শুরু করেছে। গুগলে বাংলা অন্তর্ভুক্তির ফলে আগামী দিনে এই বাজার আরও বড় হবে।

ইন্টারনেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিশ্বে বর্তমানে ৫ মিলিয়নের বেশি তথা ৫০ লাখের বেশি যোগাযোগভিত্তিক ও সেবাধর্মী অ্যাপস রয়েছে। এর মধ্যে গুগল প্লে-স্টোরে ২৮ লাখ ও অ্যাপল (আইওএস) স্টোরে রয়েছে ২২ লাখ অ্যাপস রয়েছে। এর বাইরে আরও অ্যাপস রয়েছে কিছু জায়গায়।

এদিকে অ্যাপস জিনি পোর্টাল জানাচ্ছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্লে-স্টোরগুলোয় বাংলাদেশের ডেভেলপারদের তৈরি অ্যাপ ছিল ৩ লাখ। যদিও বর্তমানে তা বেড়েছে বলে জানা গেছে।

দেশীয় অ্যাপসের বাজার, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জবব্বার গুগলে সরাসরি বাংলা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের ডিজিটাল পণ্য ও সেবার জন্য এটি ভালো হলো।’ আর অ্যাপসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে অ্যাপের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরি হয় না, তা কখনও সফল হতে পারে না। অ্যাপস তৈরির আগে মানুষের সমস্যা ও প্রয়োজনটা বুঝতে হবে। আমাদের দেশে এসব বিশ্লেষণ করে অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে না বলে সেই মাপের সফলতা আসছে না। অথচ বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’

মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘দেশে অ্যাপস বানানোর সময় দেশের মানুষকে অগ্রগণ্য না ভেবে বিদেশকে টার্গেট করা হয়। অথচ দেশে ১৩ কোটি মানুষ মোবাইলফোন ব্যবহার করে। এটাই বিশাল একটা বাজার। নিজেদের বাজার ধরতে পারলেও বড় অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলা অনেক সহায়তা করতে পারে।’ 

দেশের অ্যাপস বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাপস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী আশরাফ আবীর জানান, ‘দেশের বেশ কিছু অ্যাপস ভালো করছে। আগামীতে অ্যাপসগুলো আরও ভালো করবে।’ এর পেছনে স্মার্টাফোনের ব্যবহার, ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘দেশে এখনও অ্যাপসের ইকোসিস্টেম তৈরি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে অ্যাপস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করতে হবে, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের মানসিকতা থাকতে হবে। ইনোভেটিভ হতে হবে। তাহলেই অ্যাপস নিয়ে ভালো কিছু করা যাবে।’

বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলের আয়ের প্রধান উৎস বিজ্ঞাপন। নিজস্ব সাইটের পাশাপাশি অন্যদের সাইটে বিজ্ঞাপন প্রকাশের লক্ষ্যে ২০০৩ সালে চালু হয় 'গুগল অ্যাডসেন্স' নামের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন। এ পদ্ধতিতে যে কোনো সাইটে গুগলের তালিকাভুক্ত বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে শর্ত সাপেক্ষে সংশ্নিষ্ট সাইট কর্তৃপক্ষ অর্থ আয় করতে পারে। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে গুগল তৃতীয় পক্ষের বিভিম্ন বিজ্ঞাপন ওয়েবমাস্টার ও ওয়েবসাইটের মালিকদের কাছে বণ্টন করে। ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে ওয়েবমাস্টার ও ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ অর্থ উপার্জন করতে পারে। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ ওয়েবমাস্টার ও ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষকে দিয়ে থাকে গুগল। তবে এতদিন পর্যন্ত বাংলা ভাষাভিত্তিক ওয়েবসাইটে বৈধভাবে এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের সুযোগ ছিল না। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় দেড় কোটি ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৫ সালেই প্রতিষ্ঠানটি গুগল অ্যাডসেন্স প্রকাশকদের প্রায় এক হাজার কোটি ডলার দেয়। 

সাহস২৪.কম/ আল মনসুর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত