কৃত্রিম মগজ বানালেন বাঙালি নারী বিজ্ঞানী

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ১৬:৩১

সাহস ডেস্ক
উজ্জয়িনী মিত্র (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)

বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত আমাদের জন্য নতুন চমক নিয়ে হাজির হচ্ছে। বিজ্ঞান মানবকুল এবং প্রাণি জগতকে অমরত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট এখন অনেকটাই পুরাতন হয়ে গেছে। তৈরী করেছে কৃত্রিম হাত-পা, ফুসফুস। কিন্তু এই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যে নিয়ন্ত্রণ করে সেই মগজ তৈরী ছিল ধরা ছোয়ার বাইরে। সেই অধরা মগজও এবার বাঙালি নারী উজ্জয়িনী মিত্র’র হাত ধরে তৈরী হচ্ছে ল্যাবে। তাই গর্ব আমাদেরও কম নয়।  

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণা এখন বেশ পুরনো। তারপরে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন। এভাবে কৃত্রিম ফুসফুসও তৈরি করা হয়েছে। তবে এইসব কৃত্রিম অঙ্গ প্রতঙ্গগুলো কাজ করতো আসল মগজের নির্দেশনায়। তবে এবার বিজ্ঞানীরা তৈরি করলো মগজ। 

পুরো মগজ দিয়ে মানুষ পরিচালিত হয় না। মগজের মধ্যখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের সিদ্ধান্ত। অঙ্গ প্রতঙ্গগুলোর নিয়ন্ত্রণও হয় ব্রেনের মধ্যখান থেকেই। এই অঞ্চলকে বলা হয় ‘মধ্যাঞ্চল’ বা ‘মিড ব্রেন’। এই মধ্যাঞ্চলে রয়েছে তথ্য চলাচলের জন্য সুপরিসর রাস্তা। বিজ্ঞানীদের ভাষায় এই অঞ্চলের নাম ‘সুপার-হাইওয়ে’। আর এই হাইওয়ের যে অঞ্চল দিয়ে তথ্য চলাচল করে সেই অংশকে বলে ‘ইনফর্মেশন সুপার-হাইওয়ে’। এবার গবেষণাগারে তৈরি হলো কৃত্তিম ‘ইনফর্মেশন সুপার-হাইওয়ে’।

জিনোম ইনস্টিটিউট অফ সিঙ্গাপুর’ (জিআইএস)-এর জিনতত্ত্ববিদ নগ হুক হুই এবং ডিউক-নুস মেডিক্যাল স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিউরো-সায়েন্টিস্ট শাওন জে’র নেতৃত্বে গবেষণা চলেছে এই কৃত্রিম মগজ তৈরির। এই গবেষকদলে বড় ভূমিকা রাখা বাঙালি বিজ্ঞানী আমেরিকার জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর উজ্জয়িনী মিত্র।

উজ্জয়িনী জানান, ‘স্টেম সেল দিয়ে আমাদের মগজের মধ্যাঞ্চলের (মিড ব্রেন) কোষ-কলাগুলিকে কৃত্রিম ভাবে বানিয়েছি গবেষণাগারে। এগুলোকে বলা হয় ‘ব্রেন অরগ্যানয়েডস’। এরা লম্বায় বড়জোর দুই থেকে তিন মিলিমিটার। অনেকটা পেন্সিল ইরেজারের মতো। গর্ভাবস্থায় পাঁচ সপ্তাহের ভ্রুণের সাইজ যতটা হয়, ততটাই। এই বানানো ‘মিড ব্রেন’টাও আমাদের মগজের মতোই ত্রিমাত্রিক। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা রয়েছে। বিভিন্ন স্তরে সাজানো রয়েছে। রয়েছে স্নায়ুতন্তু বা নিউরণ আর ‘নিউরো-মেলানিন’। এই ‘নিউরো-মেলানিন’ আদতে কালো রঙের একটা পিগমেন্ট।’

‘জিনোম ইনস্টিটিউট অব সিঙ্গাপুর’ (জিআইএস)-এর জিনতত্ত্ববিদ নগ হুক হুই জানিয়েছেন, ‘বাজারে চালু ঔষধগুলো মগজের ওই অংশে কী ভাবে কাজ করে, এই প্রথম সেটা আমরা চাক্ষুষ দেখতে পারবো। রোগীদের দেয়ার আগে নতুন বা সদ্য-আবিষ্কৃত ঔষধগুলো পরীক্ষা করা যাবে। দেখে নিতে পারব মগজের মধ্যাঞ্চলে সেগুলি কী ভাবে কাজ করতে পারে। ফলে, পারকিনসন্স ডিজিজের মতো মস্তিষ্কের বেশ কয়েকটি সুজটিল অসুখের সমাধান করতে আমাদের সুবিধা হবে। এই মুহূর্তে বিশ্বে ফি-বছর পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত হচ্ছেন ৭০ লক্ষ থেকে এক কোটি মানুষ।’

তবে এই কৃত্রিম মগজের ব্যবহার শুরু হয়ে গেলে সুবিধার সঙ্গে অসুবিধাও যুক্ত হবে। কারণ, ঔষধ প্রয়োগ করে আমাদের মগজের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটিকে যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে পরিচালিত করা যাবে। এতে কাউকে জঙ্গী বানিয়ে ফেলাও সহজ হবে। 

পশ্চিমবঙ্গে জন্ম হলেও বাঙালি নারী এই বিজ্ঞানী বেড়ে উঠেছেন আমেরিকাতে। তিনি বলেন, গবেষণাগারে বানানো এই মিড ব্রেন শুধুই গবেষণায় কাজে লাগানো হবে। আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে আন্তর্জাতিক তদারকিতে এই কৃত্রিম ব্রেনকে কাজে লাগানো হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত